মহামারীকালে শহরগুলোর দৃষ্টি মাইক্রোট্রানজিটে

ডগ জনসন

করোনাভাইরাসের এই সংকটকালে কিছু বাস ট্রেন দেখা যাচ্ছে একেবারে খালি এবং আবার অন্যগুলো মানুষে ভর্তি। উদাহরণস্বরূপ লস অ্যাঞ্জেলেসে এলএ মেট্রোর সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে অন্য দিনগুলোতে যাত্রীসংখ্যা ১২ লাখ থেকে লাখে নেমে এসেছে। অন্যদিকে নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন রুটের বাসগুলো বিপজ্জনকভাবে যাত্রী বহন করে চলেছে।

মহামারীকালে অনেকগুলো সমস্যার কথা বিবেচনায় রেখে এলএ, লিংকন, নেব্রাস্কা, আবুধাবি, বার্লিন, পালমা ডি মায়োর্কাসহ বেশকিছু শহর চাহিদার ভিত্তিতে মাইক্রোট্রানজিট প্রোগ্রাম চালু করেছে। মাইক্রোট্রানজিটচালিত হবে উবার অথবা লেইফটের মতো করে। তবে টেকনোলজি কোম্পানিগুলো ডিজিটাল রাউটিং বুকিংয়ের প্লাটফর্মগুলো তৈরি করেছে। মাইক্রোট্রানজিট কোম্পানি স্পেয়ার ল্যাবসের প্রধান ডাটা সায়েন্টিস্ট জেরোমে মায়াড বলেন, নির্দিষ্ট জায়গাগুলো ভরাট করার জন্য শহরগুলো চাইলে গণপরিবহন দিয়ে প্লাটফর্ম পূরণ করতে পারে এবং এমন রাইডগুলো ব্যক্তিগতভাবে ভাড়া করা যানগুলোর চেয়ে অধিক সাশ্রয়ী হবে। মায়াড বলেন, কল্পনা করুন উবার এবং সিটি বাসের একটা বাচ্চা আছে, তেমনই।

মহামারী শুরুর পর থেকে শহরগুলো প্রয়োজনীয় রাইডগুলোর জন্য মাইক্রোট্রানজিট প্রস্তাব করেছে। যেমন ফার্মেসির লোকদের এবং হাসপাতালে নার্সদের যাতায়াতের জন্য এটা ব্যবহার করা হয়েছে। মাইক্রোট্রানজিটের সমর্থকরা অ্যাপের পেছনে যে প্রযুক্তি তাকে কভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়েও ব্যবহার করা যায় বলে মনে করেন। উদহারণস্বরূপ এই অ্যাপ সংক্রমণের ছড়িয়ে পড়াকে ট্র্যাক করতে সাহায্য করে এবং যাত্রীকে সতর্ক করতে পারে যদি তারা কোনো কভিড পজিটিভ রোগীর সঙ্গে ভ্রমণ করে। যাকে বলা হচ্ছে কন্টাক্ট ট্রেসিং।

যদিও বিশেষজ্ঞরা বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। কেউ কেউ বলছেন, কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের সঙ্গে প্রাইভেসি ইস্যুও যুক্ত। এছাড়া এর প্রয়োগেও প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বাকিদের অনেকে বলছেন রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার ক্ষেত্রে মাইক্রোট্রানজিট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

মাইক্রোট্রানজিট মহামারী এবং শহরের প্রয়োজন কিংবা জড়িত কোম্পানিগুলোর ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন রূপ নিতে পারে।  পরিবহনের মধ্য দিয়ে শহরের সঙ্গে সংযুক্তরা তাদের শাটল, ভ্যান অথবা পাবলিক বাস ব্যবহার করতে পারে সেবা দেয়ার জন্য। এক্ষেত্রে ট্রানজিট এজেন্সিগুলো তাদের ভাড়াও নির্ধারণ করতে পারে। রাইড একেবারে বাসা থেকে কর্মস্থলে সরাসরি চলে যেতে পারে অথবা ট্রানজিট এজেন্সি ঠিক করা লোকেশন অনুযায়ীও যেতে পারে।

লিংকনের মতো কিছু শহর চাহিদার ভিত্তিতে দ্রুততম সময়ের ভেতর ট্রানজিট বিবেচনা করছে এবং রোগ আঘাত হানার সঙ্গে সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। অন্যদেরও সবকিছু প্রস্তুত ছিল, পরিস্থিতি সাপেক্ষে মানিয়ে নিয়েছে। এলএ মেট্রোর প্রধান ইনোভেশন অফিসার জশুয়া শাঙ্ক বলেন, এজেন্সিকেও প্রোগ্রামের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়েছিল এবং জরুরি সেবার জন্য সরাসরি রাইড শুরু করেছিল। পাশাপাশি মহামারীকালে তাদের সার্ভিস লেভেলও হ্রাস করতে হয়েছিল।

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর জোসেপ অ্যালেন বলেন, মাইক্রোট্রানজিট কার্যকর প্রমাণ হতে পারে, যদিও এর সম্ভাবনা কম। কিংবা এর জন্য অন্য কোনো একক পদ্ধতি দরকার, যা গণপরিবহনে এককভাবে কভিড-১৯-এর বিস্তৃতি কমিয়ে আনবে। উদাহরণস্বরূপ কিছু ট্রানজিট সিস্টেম রোগ নিয়ন্ত্রণে লো-টেক পদ্ধতি ব্যবহার করছে। ভ্যানকুভারের ট্রান্সলিংক বাস স্টপে যাত্রীদের মাঝে দূরত্ব বজায় রাখার জন্য ছয় ফুট দূরত্বের চিহ্ন আঁকতে শুরু করে। অন্যরা পরিষ্কারের সময়সূচি বাড়িয়ে দিচ্ছে কিংবা যাত্রীদের মাস্ক বিতরণ করছে। এছাড়া তারা রকম আরো বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

বিষয়ে বিশেষজ্ঞ শ্যারন ফেইগন বলেন, লকডাউন সামাজিক দূরত্ব ট্রানজিট এজেন্সিগুলোর জন্য কূটকৌশলসম্পন্ন।

একদিকে ট্রানজিট এজেন্সিগুলো গুরুত্বপূর্ণ সেবা প্রদান করছে বিশেষ করে এমন মহামারী পরিস্থিতিতে। কিন্তু অন্যদিকে কভিড-১৯-এর পরিস্থিতিতে এজেন্সিগুলোকে সুরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়াতে হয়েছে এবং তাদের ভাড়াও অনেক কমে গেছে। যা তাদের বাজেটের দিক থেকে চাপে ফেলে দিয়েছে। অনেক এজেন্সিকে তাদের সাবওয়ে এবং বাসের ফ্রিকোয়েন্সি হ্রাস করতে হয়েছে এবং মাইক্রোট্রানজিট এই পরিষেবা শূন্যতার কিছুটা পূরণ করতে পারে। পাশাপাশি এই কোম্পানিগুলো অসহায়দের জন্য সাশ্রয়ী রাইড দেয়ার কথাও বলছে। এছাড়া রোগের বিস্তৃতি কমানোর জন্য প্লাটফর্মে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া এবং ড্রাইভারকে নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি যাত্রী না নেয়ার ব্যাপারেও বলা হচ্ছে।

এসবের বাইরে মাইক্রোট্রানজিট কোম্পানিগুলো তাদের অ্যাপসে প্রি-স্ক্রিনিং ব্যবস্থার বিকাশ করছে। পাশাপাশি অ্যাপসগুলো থেকে শারীরিক লক্ষণসহ নানা বিষয় সম্পর্কে যাত্রীদের কাছ থেকে জানতে চাইতে পারে। তবে এক্ষেত্রে কভিড-১৯-এর বিস্তৃতি কমাতে মাইক্রোট্রানজিটগুলোর নেয়া কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের ব্যবস্থা অনেকটাই বিতর্কিত। কারণ এর সঙ্গে যাত্রীদের গোপনীয়তার বিষয়টি জড়িত। তবে সামাজিক দূরত্বের কালপর্ব শেষ হলে এবং মানুষ রাস্তায় নেমে এলে মাইক্রোট্রানজিট আরো বেশি মূল্যবান হয়ে হাজির হতে পারে।

স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন