বিপর্যয় কাটছেই না দক্ষিণ এশিয়া ও আমেরিকায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছিল চীনে। এরপর ইরান ইতালিতে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। পরবর্তী সময়ে স্পেন, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্সসহ ইউরোপের অগ্রসর দেশগুলোকে তছনছ করে দিয়ে যায় নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। রোগীর চাপে বেহাল হয়ে পড়ে দেশগুলোর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। এসব দেশের মধ্যে ইরান বাদে অন্যগুলো এরই মধ্যে সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে এসে দাঁড়িয়েছে উত্তর দক্ষিণ আমেরিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ। প্রথম সংক্রমণ শনাক্তের পর পাঁচ-ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো বিপর্যয় কাটাতে পারছে না দেশগুলো। এসব দেশের বাইরে রাশিয়ায়ও এখন সংক্রমণ পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে।

নভেল করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত দেশের তালিকায় বর্তমানে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত ২৩ জানুয়ারি প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে দেশটিতে। জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত এখানে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল সাড়ে ২৪ লাখের বেশি। মৃত্যু হয়েছে সোয়া লাখ মানুষের। জানুয়ারিতে সংক্রমণ শুরুর পর এপ্রিল নাগাদ দেশটিতে দৈনিক সংক্রমণ শনাক্তের গড় সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এরপর মে জুন মাসের প্রথমার্ধ পর্যন্ত সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা ছিল কিছুটা কমতির দিকে। জুনের প্রথমার্ধে তা ২০ হাজারের নিচে নেমে আসে। সময়ের মধ্যে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে আরোপিত লকডাউন কিছুটা শিথিল করে যুক্তরাষ্ট্র। জুনের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে ফের বাড়তে শুরু করে দৈনিক সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা। জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বলছে, শুক্রবার রেকর্ড ৪৭ হাজার মানুষ নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রে নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে।

ব্রাজিলে করোনার সংক্রমণ শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় এক মাস পর। এরপর রোগী বাড়তে বাড়তে শনাক্ত মৃতের সংখ্যার দিক থেকে তালিকায় বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে এসেছে দেশটি। গতকাল পর্যন্ত দেশটিতে সাড়ে ১২ লাখের বেশি মানুষ শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৫৬ হাজারের। শুরু থেকেই দেশটিতে সংক্রমণ শনাক্তের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী।

মে মাসের শুরুতে দৈনিক সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা ১১ হাজারের কাছাকাছি চলে যায় রাশিয়ায়। এরপর কিছুটা কমলেও দৈনিক গড় সংক্রমণ এখনো সাত হাজারের ওপরে। সোয়া ছয় লাখ শনাক্তকৃত রোগী নিয়ে বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারছে না দেশটি। এখন পর্যন্ত রাশিয়ায় নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু হয়েছে প্রায় নয় হাজার মানুষের।

করোনা সংক্রমিত দেশগুলোর তালিকায় তরতর করে ওপরে উঠে এসেছে ভারত। গতকাল দেশটিতে রেকর্ড ১৭ হাজারের বেশি মানুষ নতুন করে শনাক্ত হয়েছে। সাড়ে ১৫ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এরই মধ্যে লকডাউন আরোপের পর সেখান থেকে বেরিয়েও এসেছে ভারত। যদিও দেশটিতে করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে।  

দক্ষিণ আমেরিকার আরেক দেশ পেরুতে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় মার্চ। গতকাল তা পৌনে তিন লাখে গিয়ে ঠেকেছে। মৃত্যু হয়েছে প্রায় নয় হাজার মানুষের। বর্তমানে দৈনিক সংক্রমণের হার কমলেও বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারছে না দেশটি। পেরুর প্রতিবেশী চিলিতেও এখন একই অবস্থা বিরাজ করছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত আড়াই লাখের বেশি মানুষ করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের।

২৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম শনাক্তের পর মেক্সিকোয় গতকাল পর্যন্ত শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে লাখ হাজার ৩৯২-এ। বর্তমানে দৈনিক সংক্রমণ ছয় হাজারের কাছাকাছি চলে এসেছে দেশটিতে।

বিশ্বব্যাপী সংক্রমণ শুরুর প্রথম দিকে চীনের পর করোনায় সবচেয়ে বড় আঘাত পড়ে ইরানের ওপর। ফেব্রুয়ারিতে সংক্রমণ শুরুর পর মে মাসে গিয়ে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এনেছিল দেশটি। তিন হাজার থেকে দৈনিক সংক্রমণ নেমে এসেছিল এক হাজারের নিচে। কিন্তু ওই মাসের শেষ দিক থেকে আবারো অবনতির দিকে যেতে থাকে পরিস্থিতি। এখনো দেশটিতে দৈনিক আড়াই হাজারের বেশি মানুষ নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হিসেবে শনাক্ত হচ্ছে।

পাকিস্তানে করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্তের সংখ্যা এরই মধ্যে লাখ ছাড়িয়েছে। দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে চার হাজারের বেশি কভিড-১৯ আক্রান্তের। নানা উদ্যোগ নিয়েও করোনা বিপর্যয় থেকে বেরিয়ে আসতে ব্যর্থ হয়েছে দেশটি।

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিপর্যস্ত করে ছেড়েছে বাংলাদেশকেও। গতকাল পর্যন্ত দেশে লাখ ৩৩ হাজার ৯৭৮ জনের সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত মানুষের নিশ্চিতকৃত সংখ্যা হাজার ৬৯৫। এর মধ্যে গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় হাজার ৫০৪ জন নতুন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে জানানো হয়েছে। দেশে পরিস্থিতি প্রতিদিনই খারাপের দিকে যাচ্ছে। গতকালও দেশে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ২৩ শতাংশের বেশি। নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দুই মাসের বেশি সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। এরপর এলাকাভিত্তিক লকডাউনের উদ্যোগ নিয়েও করোনার বিস্তার ঠেকাতে পারছে না সরকার। ঢাকাসহ সারা দেশে প্রতিনিয়ত সংক্রমণ মৃত্যু দুটোই বাড়ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন