পরীক্ষার চূড়ান্ত ধাপে আছে যেসব করোনা ভ্যাকসিন

বণিক বার্তা অনলাইন

বিশ্বব্যাপী ১৪০টিরও বেশি করোনা ভ্যাকসিন উন্নয়নের চেষ্টা চলছে। এ ধরনের ভ্যাকসিন তৈরিতে সাধারণত কয়েক বছর লেগে যায়। কিন্তু প্রতিযোগিতা, সমন্বয় ও সহযোগিতার ফলে এই সময় অবিশ্বাস্যভাবে কমিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। অনেকে চলতি বছরের শেষ নাগাদ ভ্যাকসিনের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে। 

এই মুহূর্তে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পূর্ব অবস্থায় আছে ১২৫টির কিছু বেশি ভ্যাকসিন। আর প্রথম ধাপের পরীক্ষা চলছে ১১টির, দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় ৮টি এবং তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় রয়েছে ৩টি ভ্যাকসিন। 

এই তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় থাকা ভ্যাকসিনগুলো নিয়ে বিজ্ঞানীরা অত্যন্ত আশাবাদী। এগুলো এ বছরের অক্টোবরের মধ্যে বাজারে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ভ্যাকসিন পরীক্ষার তৃতীয় ধাপই চূড়ান্ত। এ ধাপে হাজার হাজার মানুষের শরীরে এটি প্রয়োগ করা হয় এবং অপেক্ষা করা হয়, ভ্যাকসিন নেয়া কতো জন সংক্রমিত হচ্ছেন। সেই পর্যবেক্ষণটি প্ল্যাসিবো নেয়া ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে তুলনা করা হয়। এই পরীক্ষাতেই বুঝা যায় এই ভ্যাকসিন সত্যিই করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর কিনা।

এর পরেই ধাপই হচ্ছে অনুমোদন। বিভিন্ন দেশের সরকারের সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থা ভ্যাকসিন পরীক্ষার ফলাফল যাচাই ও পর্যালোচনা করে দেখে সিদ্ধান্ত নেয় এটি সাধারণ মানুষকে প্রয়োগের অনুমতি দেয়া যাবে কিনা। তবে মহামারীতে সাধারণত জরুরি ভিত্তিতে ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয়া হয়ে থাকে। 

কিছু ভ্যাকসিনের উন্নয়ন ও পরীক্ষার কাজে সহায়তা করছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অপারেশন ওয়ার্প স্পিড কর্মসূচি। এই কর্মসূচির আওতায় পাঁচটি বা তারও বেশি ভ্যাকসিন বিলিয়ন ডলার অনুদান পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

পরীক্ষার তৃতীয় ধাপে থাকা ভ্যাকসিনগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ব্রিটিশ-সুইডিশ কোম্পানি অ্যাস্ট্রা জেনেকা ও অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির উদ্ভাবিত ChAdOx1। শিম্পাঞ্জির অ্যাডেনোভাইরাসের ওপর ভিত্তি করে এটি তৈরি করা হয়েছে। এটি ইংল্যান্ডে একই সঙ্গে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় রয়েছে। আর ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকায় চলছে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অপারেশন ওয়ার্প স্পিড এটিকে সহায়তা দিচ্ছে। অক্টোবরেই এ ভ্যাকসিন বাজারে আসার কথা রয়েছে। সম্প্রতি অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছে, তাদের ২০০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। 

এই ভ্যাকসিনটি ভাইরাস ভেক্টর ভ্যাকসিন ক্যাটাগরির। অর্থাৎ এতে ব্যবহার করা হয় সত্যিকার ভাইরাস যা মানবকোষের মধ্যে করোনাভাইরাসের জিন সরবরাহ করে। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উত্তেজিত করে এবং এতে কার্যকর অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। 

অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটি নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও) বেশ আশাবাদী। ডব্লিউএইচওর প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথন গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমার মনে হয় এটাই শীর্ষস্থানীয়। সম্ভবত খুব দ্রুতই এর ফলাফল পাবে তারা।

এরপরেই রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত চীনা কোম্পানি সিনোফার্মা। চলতি মাসেই তারা তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। এ লক্ষ্যে তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। এটি হৌল-ভাইরাস ভ্যাকসিন ক্যাটাগরির। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে উসকে দিতে এতে ব্যবহার করা হয়েছে দুর্বল বা নিষ্ক্রিয় করোনাভাইরাস।

তৃতীয় যে ভ্যাকসিনটি এই মুহূর্তে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় রয়েছে সেটি মূলত শত বছরের পুরনো একটি ভ্যাকসিনের নতুন সংস্করণ। ব্যাসিলাস ক্যালমিট-গুয়েরিন ভ্যাকসিনটি তৈরি করা হয়েছিল যক্ষ্মা রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ১৯০০ সালের শুরুর দিকে। অস্ট্রেলিয়ার মারডট চিলড্রেন’স রিসার্চ ইনস্টিটিউট এটির পরীক্ষা করছে। অস্ট্রেলিয়াতে এটির তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার চলছে। পাশাপাশি এটি করোনাভাইরাস থেকে আংশিক সুরক্ষা দিতে পারে কিনা তা যাচাই করতে আরো কয়েকটি পরীক্ষাও চলছে। 

এই ভ্যাকসিনটি রিপারপাসড ভ্যাকসিন ক্যাটাগরির। অর্থাৎ এটি এরই মধ্যে অন্য একটি রোগের প্রতিষেধক হিসেবে সফলভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এখন এটি কভিড-১৯ রোগের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম কিনা তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে।

নিউইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে জাহাঙ্গীর আলম

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন