যুক্তরাষ্ট্রে ফের বাড়ছে সংক্রমণ

বিশেষজ্ঞদের দাবি ২ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে আক্রান্ত

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর সূচনা চীনে। তবে এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় শুরুতেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। করোনায় আক্রান্ত মৃতের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্র অন্য সব দেশকে ছাড়িয়ে গেছে। এমনকি দুই ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ধারেকাছে কেউ নেই। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে দেশটির হাসপাতালগুলোয় করোনা রোগীর লম্বা সারি তৈরি হয়েছে। নিউইয়র্কের মতো অঙ্গরাজ্যে মৃত্যুর মিছিল এত বড় হয়েছে যে কবর দেয়ার মতো জায়গার সংকুলান হচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে এমন ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে দেশটির জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে করোনা আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা কোটির বেশি। আক্রান্তদের অনেকের মধ্যে কোনো উপসর্গ নেই। এমনকি তারা জানেনও না যে তাদের করোনা হয়েছে। কিংবা এরই মধ্যে তারা করোনা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজেস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এমন সময় কথা জানাল, যখন দেশটিতে একদিনে রেকর্ড সর্বোচ্চ কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে নতুন করে লকডাউনে যেতে চাইছে টেক্সাসসহ কয়েকটি জনবহুল অঙ্গরাজ্য। খবর দ্য গার্ডিয়ান বিবিসি।  

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত দেশটিতে ২৪ লাখ ২২ হাজার ৫৫৫ জনের শরীরে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে লাখ ২৪ হাজার ৪২৪ জন। তবে সিডিসির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে করোনা আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা সরকারি হিসাবের তুলনায় অন্তত ১০ গুণ বেশি। এরই মধ্যে সংখ্যা কোটি ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার প্রায় শতাংশ এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। যাদের বেশির ভাগের কোনো উপসর্গ ছিল না।  

যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই উপসর্গ থাকা ব্যক্তিদের করোনা পরীক্ষার নীতি নিয়ে এগিয়েছে। ফলে যাদের শরীরে কোনো উপসর্গ ছিল না, তারা পরীক্ষার আওতায় আসেনি। এতে উপসর্গবিহীন রোগীদের সঠিকভাবে ট্র্যাকিং করা সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে লকডাউন শিথিল হয়েছে। তারা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েছে পুরো দেশে।

বিষয়ে সিডিসির পরিচালক ডা. রবার্ট রেডফিল্ড বলেন, আমরা যে পদ্ধতি অনুসরণ করেছি, তাতে এপ্রিল মে মাসের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে সাকল্যে ১০ শতাংশ পরীক্ষার আওতায় এসেছে। অসংখ্য মানুষ পরীক্ষার বাইরে রয়েছে। বিশেষত যাদের মধ্যে কোনো উপসর্গ নেই, তাদের করোনা পরীক্ষা হচ্ছে না। ফলে সরকারি হিসাবে করোনা সংক্রমণের প্রকৃত সংখ্যা উঠে আসছে না।

এমন এক সময় সিডিসি তথ্য প্রকাশ করল, যখন যুক্তরাষ্ট্রে করোনা সংক্রমণের দৈনিক হিসাব রেকর্ড ছুঁয়েছে। গতকাল দেশটিতে ২৪ ঘণ্টায় ৪০ হাজার নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর আগে গত ২৪ এপ্রিল দেশটিতে এক দিনে সর্বোচ্চ ৩৬ হাজার ৪০০ নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল।

টেক্সাসসহ কয়েকটি জনবহুল অঙ্গরাজ্যে নতুন করে করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষত দেশটির দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যগুলোয় মহামারী পরিস্থিতি নাজুক হতে শুরু করেছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে চলমান লকডাউন শিথিল করা হয়েছিল। মূলত মানুষের জীবিকা রক্ষা অর্থনীতির চাকা এগিয়ে নিতে স্বাস্থ্যবিধি সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার শর্তে লকডাউন শিথিল করা হয়েছিল। তবে এখন নতুন করে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় লকডাউনে ফিরে যেতে চাইছে টেক্সাস। আরো কয়েকটি জনবহুল অঙ্গরাজ্যে নতুন করে লকডাউন চালু হতে পারে। 

এদিকে মহামারী পরিস্থিতির ভয়াবহতার দিকে ইঙ্গিত করে সিডিসির বিশেষজ্ঞরা সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে না যাওয়া, জনসমাগমে মাস্ক পরিধান করা, বারবার হাত ধোয়ার মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে মার্কিন নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি দেশটিতে করোনা পরীক্ষার দৈনিক সংখ্যা লাখ থেকে দ্রুত বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন