পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইনটেক লিমিটেড ও এমআই সিমেন্ট ফ্যাক্টরি লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডার পরিচালক, তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়ায় থাকা কোম্পানি আল ফারুক ব্যাগস লিমিটেড ও এর ইস্যু ব্যবস্থাপক এবং নিরীক্ষককে বিভিন্ন ধরনের সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের দায়ে দেড় কোটি টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গতকাল বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৭২৯তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
কমিশন সভা শেষে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখাপাত্র মো. সাইফুর রহমান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, কোম্পানির ব্যবসা ভিন্নখাতে সম্প্রসারণ সংক্রান্ত বিষয়ে বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) সাধারণ এজেন্ডার অধীনে আলোচনা, কোম্পানির রিসোর্ট প্রকল্প শুরুর বিষয়ে বিধি অনুসারে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ না করা, মৎস্য খাতে ব্যবসা শুরুর বিষয়ে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ না করা বিভিন্ন নতুন খাতে বিনিয়োগ করা ও বিনিয়োগ ফেরত আনা সম্পর্কিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ না করার পাশাপাশি পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক নূন্যতম শেয়ার ধারণে ব্যর্থতার কারণে ইনটেক লিমিটেড লিস্টিং রেগুলেশন, বিএসইসির আদেশ ও প্রজ্ঞাপন লঙ্ঘন করেছে। এসব আইন লঙ্ঘনের দায়ে ইনটেকের পরিচালনা পর্ষদের প্রত্যেক পরিচালককে ২৫ লাখ টাকা করে জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। অবশ্য কোম্পানিটির স্বতন্ত্র ও মনোনীত পরিচালক জরিমানার আওতার বাইরে থাকবেন। বর্তমানে কোম্পানিটির পর্ষতে তিনজন শেয়ারধারী পরিচালক পরিচালক রয়েছেন। ফলে তাদের প্রত্যেককে ২৫ লাখ টাকা করে মোট ৭৫ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে।
প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়ায় থাকা আল ফারুক ব্যাগস লিমিটেড ভিন্ন নিরীক্ষকের মাধ্যমে করপোরেট গভর্নেন্স কোড(সিজিসি) পরিপালন সংক্রান্ত সনদ ইস্যু না করে বিধিবদ্ধ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান আর্টিসান চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের মাধ্যমে সিজিসি পরিপালন সনদ ইস্যু করেছে। পাশাপাশি বিধিবদ্ধ নিরীক্ষক কর্তৃক প্রদত্ত সিজিসি পরিপালন সনদ কোম্পানির আইপিও প্রসপেক্টাসে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। ইস্যুয়ার কোম্পানি এবং এর ইস্যু ব্যবস্থাপক বিএমএসএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও আইআইডিএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেড আইপিও প্রসপেক্টাসে সব তথ্য যথাযথ আছে বলে ঘোষণাপত্র ও ডিউ ডিলিজেন্স দিয়েছে। এর মাধ্যমে কোম্পানি, ইস্যু ব্যবস্থাপক ও নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান পাবলিক ইস্যু রুলস ২০১৫ ও কমিশনের প্রজ্ঞাপন লঙ্ঘন করেছে। এ কারণে আল ফারুক ব্যাগসকে ১০ লাখ, ইস্যু ব্যবস্থাপক বিএমএসএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও আইআইডিএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেডের প্রত্যেককে ৫ লাখ এবং নিরীক্ষক আর্টিসান চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে ২ লাখ টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
এমআই সিমেন্ট ফ্যাক্টরি লিমিটেড তাদের ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে ‘কারেন্ট অ্যাকাউন্ট উইথ দ্য সিস্টার কনসার্ন’ শিরোনামে ৭০ কোটি ৪০ লাখ টাকা দেখিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এ অর্থ কোম্পানিটির সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে সুদবিহীন ঋণ হিসেবে দেয়া হয়েছে এবং এ ঋণ দেয়ার আগে কোম্পানির এজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নেয়া হয় নি। তাছাড়া কোম্পানির আগের বছরগুলোর নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনেও সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুদবিহীন ঋণ দেয়ার প্রমাণ পেয়েছে কমিশন। এ সহযোগী কোম্পানিগুলো এমআই সিমেন্টের পরিচালকদের শতভাগ মালিকানাধীন কোম্পানি। অনুমোদন ছাড়াই সহযোগী কোম্পানিকে সুদবিহীন ঋণ দেয়ার মাধ্যমে কোম্পানিটি কমিশনের প্রজ্ঞাপন লঙ্ঘন করেছে। এর ফলে এমআই সিমেন্টের প্রত্যেক পরিচালককে ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। অবশ্য কোম্পানিটির স্বতন্ত্র ও মনোনীত পরিচালকেরা জরিমানার বাইরে থাকবেন। বর্তমানে এমআই সিমেন্টের পর্ষদে ৫ জন শেয়ারধারী পরিচালক রয়েছেন। সে হিসেবে ১০ লাখ টাকা করে কোম্পানিটির ৫ পরিচালককে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে।