করোনা ফিরে এসেছে জার্মানি দক্ষিণ কোরিয়ায়

বণিক বার্তা ডেস্ক

বছরের শুরুর দিকে যখন নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ চীন ছাড়িয়ে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে তখনই মহামারীর ধাক্কা লাগে দক্ষিণ কোরিয়ায়। এরপর করোনা মহামারীতে ইউরোপের দেশগুলো যখন টালমাটাল অবস্থার মধ্যে পড়ে তখন জার্মানিতে সংক্রমণ মৃত্যুর মিছিল লেগে যায়। তবে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের মধ্য দিয়ে দুটো দেশই করোনার ধাক্কা ভালোমতোই সামলে ওঠে। এক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়া জার্মানির সাফল্য বিশ্ববাসীর নজর কাড়ে। এতকিছুর পরও শেষ রক্ষা হয়নি। বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে নতুন করে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে দক্ষিণ কোরিয়া জার্মানিতে। জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে এশিয়া ইউরোপের দুটি দেশ। খবর ডয়েচে ভেলে, স্কাই নিউজ দ্য গার্ডিয়ান।

কয়েক সপ্তাহ ধরে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতিদিন ৪০-৪৫ জন নতুন কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। সোমবার প্রকাশিত দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি বিবৃতি অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে ১৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। দেশটিতে বড় বড় ওয়্যারহাউজ, কারখানা অফিসগুলোয় নতুন করে করোনা ছড়িয়ে পড়ছে। মূলত এসব জায়গায় সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাটা বেশ কঠিন। কারণেই দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন করে সংক্রমণ ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

কোরিয়া সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (কেসিডিসি) প্রধান জুং ইউন-কিয়ং বলেন, গত মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছিল। বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, আমরা সেই পরিস্থিতিতে প্রবেশ করে ফেলেছি।

মার্চ মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনা সংক্রমণ সর্বোচ্চ অবস্থায় উঠেছিল। তবে নাগরিকদের সচেতনতা, সামাজিক দূরত্ব কঠোরভাবে মেনে চলা, করোনা টেস্টের সংখ্যা বাড়ানো, দ্রুত কার্যকর শনাক্তকরণ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার মতো তাত্ক্ষণিক কিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন দেশটিতে সংক্রমণের হার কমিয়ে আনে। করোনার বিরুদ্ধে দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের ওই সময়কার লড়াই বিশ্বের বুকে দৃষ্টান্ত হয়েছিল। এখন নতুন করে সংক্রমণ ঝুঁকিতে পড়েছে দেশটি। 

এদিকে জার্মানির গুটারস্ল কাউন্টিতে বিখ্যাত টনিজ মিট ফ্যাক্টরিতে করোনা মহামারী নতুন করে চরম আকার ধারণ করেছে। গতকাল পর্যন্ত মাংস প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় কর্মরত হাজার ৩৩১ জন শ্রমিকের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। অনেক শ্রমিক এখনো পরীক্ষার ফলাফল হাতে পাননি। এই এক কারখানায় আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ৫০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত মার্চে জার্মানির উত্তরাঞ্চলীয় রাইন-ওয়েস্টফেলিয়ার হাইজেনবার্গ শহরকে করোনার এপিসেন্টার বিবেচনা করা হয়েছিল। তিন মাসের কম সময়ের মধ্যে ওখান থেকে ১৩৭ মাইল দূরের গুটারস্ল নতুন এপিসেন্টার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বার্লিন, ডর্টমুন্ড, গুটিনজেন্ট শহরেও নতুন করে করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে।

জার্মানির রবার্ট কোচ ইনস্টিটিউট ফর ইনফেকশাস ডিজিজেস জানিয়েছে, গতকাল দেশটিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের রিপ্রোডাকশন রেট বেড়ে দাঁড়িয়েছে দশমিক ৮৮। শনিবার হার ছিল দশমিক ৫৫।

যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির করোনা ইনডেক্স অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে ১২ হাজার ৪৮৩ জনের শরীরে। দেশটিতে কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ২৮০ জন।

করোনা পরিস্থিতিতে জার্মানির অবস্থান দক্ষিণ কোরিয়ার তুলনায় কিছুটা খারাপ। দেশটিতে এখন পর্যন্ত লাখ ৯১ হাজার ৬৬৮ কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। করোনা আক্রান্ত হয়ে দেশটিতে এখন পর্যন্ত মারা গেছে হাজার ৮৯৭ জন। সর্বোচ্চ সংক্রমণ মৃত্যুদুই ক্ষেত্রে শীর্ষে অবস্থান করা দেশগুলোর বৈশ্বিক তালিকায় জার্মানির অবস্থান ১১তম।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন