দু’মাসেও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ মেলেনি সম্মুখসারির স্বাস্থ্যসেবাদানকারীদের : গবেষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে কভিড-১৯ রোগের প্রথম ঘটনা শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। এরপর থেকে দুই মাসের বেশি সময় পার হলেও এখনো কেভিড-১৯ রোগ সম্পর্কে এবং পিপিই ব্যবহারসহ এই মহামারীর ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সম্মুখসারির স্বাস্থ্যসেবাদানকারীদের বিশেষ করে নার্স, ধাত্রী ও প্যারামেডিকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি।

আজ শনিবার নাগরিক সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ করোনাভাইরাস মহামারীতে সম্মুখসারির স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর করা একটি গবেষণার তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে এসব তথ্য উঠে এসেছে। হেলথ ওয়াচের সাচিবিক দায়িত্ব পালন করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক জেমস পি গ্র্যান্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ।

গবেষণাটির শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশে সন্দেহভাজন বা নিশ্চিত কভিড-১৯ রোগীদের সেবাদানকারী সম্মুখসারির স্বাস্থ্যকর্মীদের (এফএলডব্লিউ)   পুনঃসাক্ষাৎকার গ্রহণ: সর্বশেষ জরিপের পরে গত এক মাসে পরিস্থিতি কতটা উন্নতি করেছে?'

সংগঠনটির পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এটি  ছিল এই ধরনের দ্বিতীয় গবেষণা। সম্মুখসারির স্বাস্থ্যসেবাদানকারীদের ধারণা ও উপলব্ধি জানার জন্য জরিপভিত্তিক প্রথম গবেষণাটি করা হয়েছিল গত এপ্রিল মাসের ৯-১৪ তারিখে। সেসময়ে টেলিফোনের মাধ্যমে মোট ৬০ জন সম্মুখসারির স্বাস্থ্যসেবাদানকারীর সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছিল। তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বা প্রাইভেট হাসপাতালে সন্দেহভাজন ও নিশ্চিত কভিড-১৯ রোগী ব্যবস্থাপনার সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রথম দফায় সাক্ষাৎকার নেয়া ৬০ জন সম্মুখসারির স্বাস্থ্যসেবাদানকারীদের মধ্যে ৪৬ জনের দ্বিতীয় দফায় সাক্ষাৎকার নেয়া হয় গত মে মাসের ৫ থেকে ১১ তারিখে। তাদের পিপিই এবং প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত প্রশ্ন করা ছাড়াও প্রথম সাক্ষাৎকারের ফলোআপ হিসেবে তাদের করা আগেরবারের সুপারিশগুলোর হালনাগাদ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল।

সংগঠনটি বলছে, মে মাসে সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় জানা যায় যে, ২৪ শতাংশ উত্তরদাতা তখনো পর্যন্ত পিপিই পাননি। তবে, এপ্রিল মাসের জরিপের সাথে তুলনা করলে দেখা যায় যে, সামগ্রিকভাবে পিপিই বিতরণে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বিশেষ করে প্যারামেডিকদের মধ্যে পিপিই সরবরাহ বেড়েছে। যদিও জরিপকালে সম্মুখসারির স্বাস্থ্যসেবাদানকারীগণ সরবরাহকৃত পিপিই-র মান এবং প্রশিক্ষণের অভাবে পিপিই সঠিকভাবে ব্যবহার না হওয়ার বিষয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। 

গবষেণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, চিকিৎসকদের আবাসন, খাবার ও পরিবহণ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কিছুটা উন্নতি হয়েছে তবে তা প্রয়োজনীয় পরিমাণে নয়, এবং এই ধরনের সুবিধাগুলো চিকিৎসক ছাড়া অন্যান্য সম্মুখসারির স্বাস্থ্যসেবাদানকারীরা পাচ্ছেন না।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বাংলাদেশে মহামারি শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই সম্মুখসারির বিভিন্ন ক্যাটাগরির স্বাস্থ্যসেবাদানকারীদের মনের উপর চাপ বাড়তে থাকে। বিশেষ করে চিকিৎসকদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বাড়তে থাকা চাপ কমাতে উপযুক্ত পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে স্বাস্থ্যসেবাদানকারীদের মানসিক স্বাস্থ্য এখন জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এই অবস্থা চললে আশঙ্কা করা হচ্ছে কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্যসেবাদানকারীদের মানসিক স্বাস্থ্য বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দেবে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশও উঠে এসেছে সেগুলো হলো- বর্তমানের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়, সে লক্ষ্যে অবিলম্বে সরবরাহকৃত পিপিই-র পরিমাণ ও গুণগতমান নিয়ন্ত্রণ, প্রশিক্ষণ প্রদান, সম্মুখসারির স্বাস্থ্যসেবাদানকারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদি ব্যাপারে নীতি-নির্ধারক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দিক থেকে জরুরিভাবে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন