অর্থ ফেরতের চাপে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো

মেয়াদোত্তীর্ণের পথে প্রক্রিয়াধীন ১ লাখ নতুন শ্রম ভিসা

মনজুরুল ইসলাম

কভিড-১৯ মহামারীর কারণে মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশ থেকেই প্রবাসী কর্মীদের ফিরিয়ে আনার চাপে রয়েছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে বিশেষ ফ্লাইটের মাধ্যমে ফিরে এসেছেন অনেকেই। এছাড়া দেশে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার আগে যাদের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন ছিল, বিদেশযাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাদেরও। অবস্থায় মেয়াদোত্তীর্ণের ঝুঁকিতে পড়েছে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় থাকা প্রায় এক লাখ নতুন শ্রম ভিসা।

জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা) বলছে, দেশে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার আগেই সৌদি আরব, কাতার, কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে শ্রম রফতানির জন্য প্রায় এক লাখ শ্রম ভিসা ইসু্যর প্রক্রিয়ায় ছিল। উড়োজাহাজের টিকিটও কিনে রেখেছিলেন অনেকে। আবার কারো কারো ভিসা হয়েছিল, কিন্তু টিকিট কাটা হয়নি। আবার অনেকেই সব প্রক্রিয়া শেষে ভিসার অপেক্ষায় ছিলেন, তাদের সবারই এখন যাত্রা অনিশ্চিত।

রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বলছে, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো ইস্যুকৃত এসব ভিসা বাতিল করবে, নাকি পুনরায় একই নামে ভিসা ইস্যু করে কর্মীদের যাওয়ার সুযোগ করে দেবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। ফলে যারা বিদেশে চাকরি নিয়ে যাচ্ছিলেন, তারা যেমন আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন, তেমনি অর্থ ফেরতের চাপে রয়েছে এজেন্সিগুলোও। যদিও এরই মধ্যে বিদেশগামী কর্মীদের নিবন্ধন, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, মেডিকেল টিকিট ক্রয়সহ সংশ্লিষ্ট সব প্রক্রিয়ার ব্যবস্থাপনা বাবদ অর্থ ব্যয় করে ফেলেছে এজেন্সিগুলো। অবস্থায় ভিসা বাতিল হলে বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের পাশাপাশি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোও মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে যাবে।

বিষয়ে বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বণিক বার্তাকে বলেন, বায়রার সদস্য রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর থেকে এখন পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তাতে বলা যায়, প্রায় এক লাখের বেশি ভিসা বাতিলের ঝুঁকিতে রয়েছে। সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। কারণ এখনো অনেক রিক্রুটিং এজেন্সির অফিস বন্ধ থাকায় তাদের কাছে কী পরিমাণ ভিসা রয়েছে, সে তথ্য সংগ্রহ করা যায়নি। তবে বায়রার সদস্য হাজার ৬০০ এজেন্সির মধ্যে প্রায় ৩০০ এজেন্সির কাছে ৮০ হাজার ভিসার তথ্য পাওয়া গেছে। সবার তথ্য পাওয়া গেলে সংখ্যা লাখ পেরিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো এরই মধ্যে কর্মীদের কাছ থেকে নেয়া অর্থ খরচ করে ফেলেছে। বিদেশ যেতে সরকার নির্ধারিত ব্যয় দেড় লাখ টাকা করে হিসাব করলেও এক লাখ ভিসার জন্য ক্ষতির পরিমাণ হবে কমপক্ষে দেড় হাজার কোটি টাকা। এজেন্সিগুলো অর্থ ফেরত দেয়ার চাপে রয়েছে। কারণ বিদেশ যেতে না পারলে কর্মীরা অর্থ ফেরত চাইবেন। গোটা বিষয়টি নিয়েই সংকটের দিকে যাচ্ছি আমরা।

এদিকে এভাবে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ছুটি নিয়ে দেশে ফেরা প্রবাসীদের বড় একটি অংশ এখন চাকরি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন। পুলিশের বিশেষ শাখার তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত প্রায় লাখ ৬৯ হাজার ৩৭৭ প্রবাসী বাংলাদেশী বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরেছেন। এর মধ্যে শ্রমিক আছেন প্রায় পাঁচ লাখ। তাদের মধ্যে মার্চের প্রথম ২০ দিনেই এসেছেন লাখ ৯৩ হাজার। যদিও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সরকার নিজ নিজ দেশে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ফিরিয়ে নেয়া ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির নিশ্চয়তা দিয়েছে। তার পরও স্বস্তিতে নেই প্রবাসীরা।

প্রসঙ্গত, দেশে প্রবাসী আয় আহরণের শীর্ষ ১৫টি উৎস দেশের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ রয়েছে সাতটি। এর মধ্যে সবার শীর্ষে রয়েছে সৌদি আরব। তালিকায় মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), কুয়েত, ওমান, কাতার, বাহরাইন জর্ডান। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে দেশে মোট ১৫০ কোটি ৩৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা এপ্রিলের তুলনায় ৪১ কোটি ৬৬ লাখ ডলার বেশি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন