কভিড-১৯-এর প্রভাব সম্পর্কে কর্মীদের অবহিত করল বেক্সিমকো

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে ব্যক্তি খাতের অন্যতম বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো। ওষুধ, তৈরি পোশাক, বস্ত্র, আবাসন এবং সিরামিক তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ছড়িয়ে আছে গ্রুপটির ব্যবসা। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) তথ্যমতে, দেশে পরিবারভিত্তিক ব্যবসার অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠানও বেক্সিমকো। ১০০ কোটি ডলারেরও বেশি বার্ষিক আয়ের প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে ওষুধ, তৈরি পোশাক, বস্ত্র, আবাসন সিরামিক। সত্তর দশকের শুরুর দিকে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানটির কর্মী ৬৫ হাজার। চলমান কভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে আগামী দিনগুলোতে মুখোমুখি হতে যাওয়া কঠিন সিদ্ধান্তের বিষয়ে নিজেদের কর্মীদের সম্মতি জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

গত ১৮ জুন বৃহস্পতিবার বেক্সিমকোর সব কর্মীর উদ্দেশে জ্যেষ্ঠ নির্বাহীদের একটি চিঠি দিয়েছে গ্রুপ চেয়ারম্যান এএসএফ রহমান। সেখানে তিনি কভিড-১৯-এর বৈশ্বিক স্থানীয় পরিস্থিতিতে ব্যবসায়িক কার্যক্রম, কর্মসূচি পদক্ষেপের বিষয় উল্লেখের পাশাপাশি কর্মীদের গ্রুপের ভবিষ্যৎ কঠোর সিদ্ধান্তের বিষয়েও ওয়াকিবহাল করেছেন।

চিঠিতে বলা হয়, আমরা যখন কভিড-১৯-এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার চেষ্টা করছি, তখন অস্বীকার করার কিছু নেই যে মহামারী মোকাবেলায় বৈশ্বিক শাটডাউন অন্য সবার মতোই আমাদের ওপরও কষ্টকর প্রভাব ফেলেছে। আমাদের ব্যবসায় রফতানিতে অর্থনৈতিক মন্দা তাত্ক্ষণিক এবং অবধারিত পরিণাম দেখা গেছে, যা হতে পারে ভবিষ্যতে বিভিন্ন পর্যায়ে কঠোর সিদ্ধান্তের সতর্কতা।

চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেক্সিমকোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বেক্সিমকো গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ বণিক বার্তাকে বলেন, এটা আমাদের প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বিষয়, তবে চেয়ারম্যান আমাদের উৎসাহ দিয়েছেন। আমরা যেভাবে শিল্প পরিচালনা করছি সমাজে যে অবদান রাখছি, সেগুলো বিবেচনায় নিয়েছেন। আমাদের কর্মীরা ম্যানেজমেন্টের প্রতি ডেডিকেটেড।

চিঠির শুরুতে বলা হয়, কভিড-১৯ যখন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া নিয়ে উদ্বেগ দেখা যাচ্ছিল, তখন আমরা আমাদের সব প্রতিষ্ঠানে কর্মী সুরক্ষা নিশ্চিতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এটা বলা অতিরঞ্জিত হবে না যে, দ্রুত প্রতিক্রিয়ার কারণে কভিড-১৯ সম্পৃক্ত বড় কোনো ঘটনার সাক্ষী হতে হয়নি আমাদের কারখানা কর্মক্ষেত্রগুলোতে। 

সফল সংবরণশীল কৌশল গ্রহণে আমরা বাহ্বা পাওয়ার উপযুক্ত এমন মত প্রকাশ করে চিঠিতে জটিল সংবেদনশীল পরিকল্পনাটি সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য গ্রুপের নেতৃত্বে থাকা কর্মীদের সাধুবাদ জানান এএসএফ রহমান। তিনি বলেন, বিপদ এখনো আছে এবং নিজস্ব প্রাতিষ্ঠানিক নজরদারির প্রয়োজনীয়তা এখনো রয়ে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শক্তিশালী নেতৃত্বে জাতি ঝড়কে মোকাবেলা করছে উল্লেখ করে চিঠিতে এএসএফ রহমান বলেন, তিনি যৌক্তিকভাবে জীবন বাঁচানোকে অগ্রাধিকার দিয়ে লকডাউন এবং সামাজিক দূরত্বের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। আবার জীবিকা সুরক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে তিনি পর্যায়ক্রমে অর্থনীতি চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সুন্দর ভারসাম্য রক্ষার মাধ্যমে জাতি অনাকাঙ্ক্ষিত সংকট কাটিয়ে উঠবে।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কভিড-১৯ সৃষ্ট হুমকির প্রতি আমাদের প্রত্যুত্তর ছিল ত্রিমাত্রিকসৃজনশীল, সহযোগিতা বৈচিত্র্য এমন মত জানিয়ে এএসএফ রহমান বলেছেন, আমাদের ওষুধ শাখা তাদের আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা অবকাঠামোয় রোগের চিকিৎসার সম্ভাব্য ওষুধ উন্নয়নে নিয়োজিত হয়েছে। বিশ্বের প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেক্সিমকো ফার্মা জেনেরিক রেমডেসিভির নিয়ে এসেছে, যা কভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে প্রমাণিত একমাত্র ওষুধ।

সংকটের প্রভাবে তৈরি পোশাকের বৈশ্বিক সরবরাহ চেইন সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে ফলে বেক্সিমকো টেক্সটাইলের বস্ত্র পোশাক শাখা মারাত্মক সীমাবদ্ধতা মোকাবেলা করেছে উল্লেখ করে এএসএফ রহমান চিঠিতে বলেন, দুই মাস সময়ের মধ্যে ফার্মা বিভাগের মান নিশ্চয়তার বিশেষজ্ঞ মতের সাহায্যে টেক্সটাইল শাখা বেক্সিমকো পিপিই (ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী) ডিভিশন নামের নতুন বিভাগ সৃষ্টি করেছে। যেখান থেকে এরই মধ্যে ৬৫ লাখ আন্তর্জাতিকমানের পিপিই যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হয়েছে। পদক্ষেপগুলো শুধু সফল ব্যবসায়িক কৌশলই নয়, বরং বিশ্বব্যাপী প্রশংসা পাওয়ার পাশাপাশি ইতিবাদ মনোযোগও আকর্ষণ করেছে।

দেশের অন্যতম বৃহৎ কনগ্লোমারেট হিসেবে সমাজের প্রতি দায়িত্ব যেমন ভুলে যাননি, তেমনি জাতির ডাকে সাড়া দিতে ইতস্তত করেননিএমন দাবি করে এএসএফ রহমান বলেন, আমরা সরকারি হাসপাতালে বিনা মূল্যে বেমসিভির (জেনেরিক রেমডেসিভির) সরবরাহ করছি আবার কম দামে অন্যান্য হাসপাতালেও সরবরাহ করেছি। মানবিক বিবেচনায় দেশের বাইরেও বিনা মূল্যে ওষুধ পাঠিয়েছি। সংকটের শুরুতেই ফ্রন্টলাইন কর্মীদের জন্য সরকার মনোনীত হাসপাতালে ২০ কোটি টাকার পিপিই, ওষুধ পরীক্ষা কিট সরবরাহ করেছি।

গ্রুপের সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প বিনিয়োগ উপদেষ্টা এবং আমাদের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান ফজলুর রহমান মন্ত্রণালয় সরকারি সংস্থার কর্মকর্তাদের জন্য ইয়েলো থেকে সুরক্ষা গগলস এবং মাস্ক সংবলিত ৫০ হাজার প্যাকেট পাঠিয়েছেন। তার সংসদীয় আসনের মানুষের জন্য তিনি ওষুধ, স্বাস্থ্য উপকরণ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দান করেছেন।

একমাত্র সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে নভেল করোনাভাইরাসকে প্রতিহত করতেএমন প্রত্যাশা জানিয়ে এএসএফ রহমান চিঠিতে বলেন, আমরা যদি ভাইরাস মোকাবেলা করতে পারি এবং ভাইরাস সংক্রমণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে পারি, তাহলে আমরা যারা কার্যালয় পুনরায় চালু করেছি, তারাই না বরং যারা বাসা থেকে কাজ করছেন আমাদের সবাইকে কাজ দায়িত্বে পুনরায় মনোনিবেশ করতে হবে। আমাদের সৃষ্টিশীলতা এবং পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর সক্ষমতার ওপর নির্ভর করেই আগামী চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে হবে।

বেক্সিমকোর জ্যেষ্ঠ নির্বাহীদের পাঠানো চিঠির শেষে চেয়ারম্যান এএসএফ রহমান বলেছেন, আপনাদের মাধ্যমে আমি গোটা বেক্সিমকো পরিবারের ৬৫ হাজার কর্মীকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, চ্যালেঞ্জিং সময়ে তাদের ধৈর্য উৎসর্গের জন্য। এছাড়া সমন্বিতভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার আশাবাদও জানানো হয় চিঠিতে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন