২০২০-২১ অর্থবছর

৪৬ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পাচ্ছে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা

সাইফ সুজন

উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আগামী অর্থবছরে (২০২০-২১) হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে দেশের ৪৬ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ভাগ করে দেবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) ইউজিসি থেকে প্রাপ্ত বরাদ্দের সঙ্গে নিজস্ব আয় সমন্বয় করে কেন্দ্রীয় বাজেট প্রণয়ন করবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

দেশে সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় ইউজিসির মাধ্যমে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চাহিদার নিরিখে সরকার থেকে প্রাপ্ত বরাদ্দের ভিত্তিতে ইউজিসির অর্থ হিসাব বিভাগ সম্প্রতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করেছে। আগামী ২৪ জুন অনুষ্ঠিতব্য ইউজিসির ১৫৮তম পূর্ণ কমিশন ১২৬তম বাজেট সভায় বাজেট চূড়ান্ত করা হবে। নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে পূর্ণ কমিশন বাজেট সভা ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হবে। ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক . কাজী শহীদুল্লাহ এতে সভাপতিত্ব করবেন।

ইউজিসি সূত্রে জানা যায়, আগামী অর্থবছরে দেশের ৪৬ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে অনুন্নয়ন খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা। আর উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে হাজার ১০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য বরাদ্দ ছিল হাজার ৮৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে হাজার ৮৯ কোটি টাকার অনুন্নয়ন হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট ছিল। হিসেবে চলতি অর্থবছরের তুলনায় ২০২০-২১ অর্থবছরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য মোট বরাদ্দ বেড়েছে ৪৬৬ কোটি টাকা। আর শতকরা হিসাবে বেড়েছে দশমিক ৭৬ শতাংশ। এর মধ্যে বেশি বেড়েছে অনুন্নয়ন খাতের বরাদ্দে। অনুন্নয়ন বরাদ্দ বেড়েছে ৩৬৫ কোটি টাকা। আর উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ১০১ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে বাজেটের তালিকায় নতুন যুক্ত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমআরএএইউ) আর অনুন্নয়ন খাতের বরাদ্দের দিক থেকে বরাবরের মতোই সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ইউজিসির নিজস্ব বাজেটও চূড়ান্ত করা হবে পূর্ণ কমিশন বাজেট সভায়। আগামী অর্থবছর ইউজিসির নিজস্ব কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ৬৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে ইউজিসির জন্য বরাদ্দ ছিল ৫০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে ইউজিসির নিজস্ব বাজেট বাড়ছে প্রায় ২৫ শতাংশ। এছাড়া আগামী সপ্তাহের সভায় ইউজিসির চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটও অনুমোদনের উত্থাপন করা হবে।

এদিকে ২০২০-২১ অর্থবছরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাজেটে গবেষণার জন্য বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ৬৫ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৬৪ কোটি টাকা। আর গবেষণা তথ্যপ্রযুক্তিসহ গবেষণা সংশ্লিষ্ট সব খাত মিলে মূল বাজেটে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা।

বাজেট বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) . ফেরদৌস জামান বণিক বার্তাকে বলেন, বছর বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে কভিড-১৯-এর বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। বাজেটে কিছু সংরক্ষিত তহবিল রাখা হয়েছে। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনলাইন ক্লাসসহ কভিড-১৯ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন খাতে সহায়তা দেয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব এর পরবর্তী কার্যক্রম বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রমের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার পরিকল্পনাগুলো বিবেচনায় নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আগামী ২৪ জুন অনুষ্ঠিতব্য পূর্ণ কমিশন বাজেট সভায় সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসির নিজস্ব বাজেট অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হবে।

কভিড-১৯ নমুনার জন্য সংরক্ষিত তহবিল: এদিকে কভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষা করে এমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য আলাদা বরাদ্দ প্রস্তাব করেছে ইউজিসির অর্থ হিসাব বিভাগ। ইউজিসির একজন কর্মকর্তা প্রসঙ্গে বলেন, দেশের কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কভিড-১৯-এর নমুনা পরীক্ষার ল্যাব চালু করেছে। তবে ল্যাব পরিচালনা করতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের সংকট বিশেষ করে আর্থিক সংকটের কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তাই ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সহায়তা দেয়ার জন্য ইউজিসির বরাদ্দে কিছু অর্থ সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের তহবিল থেকে সহায়তা প্রদান করা হবে।

ইউজিসির অর্থ হিসাবের বিষয়গুলো দেখভাল করেন সদস্য অধ্যাপক . মুহাম্মদ আলমগীর। বছর সভায় বাজেট উত্থাপন করবেন তিনি। বাজেট বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চাহিদা সরকারের দেয়া বরাদ্দের সঙ্গে সমন্বয় করে বাজেট প্রণয়ন করা হয়। বাজেটের মোট বরাদ্দের বিষয়টি অনেক আগেই মন্ত্রণালয় থেকে দিয়ে দেয়া হয়। এজন্য কভিডসংশ্লিষ্ট বড় কোনো বরাদ্দ রাখা ওভাবে সম্ভব হয়নি। তবে সভায় কভিড বিষয়ে একটি এজেন্ডা রাখা হয়েছে। সেখানে আলোচনার ভিত্তিতে আমরা মন্ত্রণালয়কে বিভিন্ন সুপারিশ জানাব। বিশেষ করে কভিড পরিস্থিতিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার জন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসোর্স দরকার। এসব বিষয়ে সভায় আলোচনা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন