আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে তিনটি ক্ষেত্রে উপকারভোগী বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে সেখানে নগর দরিদ্র এবং নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট নতুন দরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ নেই। এ বাজেট মানুষ নয়, প্রবৃদ্ধি বাঁচানোর বাজেট। গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’ আয়োজিত ‘২০২০-২১ বাজেট ও সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ ও পিকেএসএফ চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. এ কে এনামুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা ও বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ। মূল নিবন্ধ উপস্থাপন ও সঞ্চালনা করেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী।
মহসিন আলী বলেন, করোনা মহামারীর কারণে দারিদ্র্য পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। দারিদ্র্য ২০ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৩৫-৪০ শতাংশ পর্যন্ত উন্নীত হতে পারে। তবে তিনটি কর্মসূচিতে কিছু উপকারভোগী ও বাজেট বৃদ্ধি করা হয়েছে। করোনাকালে নগরে বসবাসকারী বিপুল দরিদ্র মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। অথচ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অধীনে যে সাতটি কর্মসূচি নগরের দরিদ্রদের জন্য পরিচালিত হয়, সেখানে বরাদ্দের পরিমাণ মাত্র ১ শতাংশ।
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, বাজেটের শিরোনামে মানুষ বাঁচানোর কথা বলা হলেও সামগ্রিকভাবে বরাবরের মতো প্রবৃদ্ধিকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। জীবন ও জীবিকার বিষয়টি এখন মুখোমুখি। করোনার কারণে দীর্ঘদিন খাদ্য সাহায্য চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তবে আরো কিছুদিন তা অব্যাহত রাখতে হবে। বর্তমানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি একটি বড় চ্যালেঞ্জ, যার প্রতিফলন বাজেটে সেভাবে দেখা যাচ্ছে না।
ড. এ কে এনামুল হক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক সতর্ক হয়ে সরকারকে ব্যয় করতে হবে। অতি দরিদ্র মানুষ করোনার কারণে দ্বিগুণ হলেও বরাদ্দের ক্ষেত্রে তার প্রতিফলন বাজেটে দেখা যাচ্ছে না। যদিও প্রতি বাজেটের বরাদ্দই খরচ হয় মূলত অর্থবছরের ছয় মাস পর থেকে। সরকারের সদিচ্ছার অভাব না থাকলেও আমাদের সামগ্রিক ব্যবস্থাতেই রয়েছে সমস্যা। দরিদ্রদের জন্য স্বাস্থ্য খাতে বিশেষ বরাদ্দ থাকা দরকার ছিল।
ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, চলতি বছর সামাজিক সুরক্ষা খাতে ১৪ হাজার কোটি টাকার বাড়তি বরাদ্দে সরকারি কর্মচারীদের পেনশন, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার, প্রবাসী আয়ের অংশ, বেসরকারি ব্যাংকের করোনাকালের সুদের অংশ ইত্যাদিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তাহলে এগুলোকে ‘সুরক্ষা’ বলা যাবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে যায়। সামাজিক নিরাপত্তার উপকারভোগীদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা অনুযায়ী সাহায্য দেয়া হয়। কিন্তু কর্মসূত্রে তিনি অন্য জায়গায় থাকতে পারেন। ফলে প্রক্রিয়াটি সংশোধন করা দরকার।
ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, শহরের বস্তিবাসী দরিদ্রদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ থাকা উচিত ছিল বাজেটে। জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির কার্যক্রমগুলো যত দ্রুত সম্ভব ডিজিটালাইজেশন করা দরকার। স্বাস্থ্যের পাশাপাশি খাদ্য ও পুষ্টি এ সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বের বিষয়। গ্রামীণ দরিদ্রদের জন্য ১০০ কোটি টাকা যে বরাদ্দ, কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে তা খুবই অপ্রতুল এবং এখানেও নগর দারিদ্র্য উপেক্ষিত।
সভায় খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে নগর দরিদ্র এবং করোনায় আক্রান্ত নতুন দরিদ্রদের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া; সব অতি দরিদ্র, দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর (যাদের অনেকেরই জাতীয় পরিচয়পত্র নেই) সঠিক তালিকা (ডাটাবেজ) নিশ্চিত করা এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, খাদ্য, চিকিৎসা ও প্রণোদনাসহ যেকোনো খাতে দুর্নীতি হলে জড়িতদের শাস্তির বিধান নিশ্চিত করা উল্লেখযোগ্য।
