আইওএমের জরিপ

রেমিট্যান্সগ্রহীতা পরিবারের ৭৬% ঢাকা ও চট্টগ্রামের

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে রেমিট্যান্স গ্রহণের দিক থেকে ঢাকা চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিবারগুলোই সবচেয়ে এগিয়ে। জাতিসংঘের অভিবাসনবিষয়ক সংস্থা আইওএমের এক জরিপ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, দেশে রেমিট্যান্স গ্রহণকারী পরিবারের ৭৬ শতাংশই ঢাকা চট্টগ্রামের।

আইওএম গতকালবাংলাদেশে অভিবাসন, ফ্যামিলি রেমিট্যান্স, সম্পদ এবং দক্ষতার শ্রেণীবিভাগশীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এক হাজার রেমিট্যান্সনির্ভর পরিবারের ওপর পরিচালিত জরিপ মূল অংশীদারদের সঙ্গে গুণগত আলোচনার মাধ্যমে উঠে আসা ফলাফলের ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

আইওএমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জরিপে অংশগ্রহণকারী রেমিট্যান্সগ্রহীতা পরিবারগুলোর ৬৫ শতাংশ পরিচালনা করেন নারী, যারা মূলত বেকার। রেমিট্যান্সের অর্থ মূলত স্বল্পমেয়াদি প্রয়োজন মেটাতে ব্যবহূত হয়। সম্পদের বৈচিত্র্য আনা বা আর্থিক স্থিতিস্থাপকতা তৈরিতে অর্থ খুব কমই ব্যবহূত হয়, যা রেমিট্যান্সের ওপর পরিবারের নির্ভরতা আরো বাড়িয়ে তোলে। প্রবাসী এবং তাদের পরিবারের স্বল্প অর্থনৈতিক জ্ঞানের কারণে টেকসই উপার্জন, রেমিট্যান্স ব্যবস্থাপনা সম্পদ তৈরি নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চিত পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দেয়।

জরিপে দেখা গেছে, উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন অভিবাসী কর্মীরা প্রবাসে তুলনামূলক ভালো বেতনের চাকরিতে নিয়োগ পান। কারণে তারা স্বল্প দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের তুলনায় দেশে অর্থও পাঠান বেশি। দক্ষতা বাড়ানোর কারণে ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে মাসিক রেমিট্যান্স ২৫৫ ডলার পর্যন্ত বেড়েছে।

রেমিট্যান্সের অর্থ কীভাবে বিনিয়োগ এবং সঞ্চয় করা হবে, সেটিও নির্ভর করে অভিবাসীদের দক্ষতার ওপর। দক্ষ অভিবাসীরা পরিবারের সদস্যদের রেমিট্যান্স সঞ্চয়ের তাগিদ দিয়ে থাকেন। অন্যদিকে অদক্ষ অভিবাসীদের রেমিট্যান্সের অর্থ ব্যয় হয় মূলত ঋণ পরিশোধে।

জরিপে অংশগ্রহণকারী পরিবারগুলোর রেমিট্যান্স প্রেরকদের মধ্যে ৯৮ শতাংশই পুরুষ। অভিবাসী কর্মীদের প্রায় ১২ শতাংশ একেবারেই স্কুলে যায়নি। প্রায় ৮০ শতাংশ পড়াশোনা করেছেন মাধ্যমিক পর্যন্ত।

জরিপে অংশগ্রহণকারী পরিবারগুলো থেকে বিদেশ যাওয়া প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে অর্ধেকই কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির কর্মচারী হিসেবে কাজ করছেন। দিনমজুরি খণ্ডকালীন শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন প্রায় এক-চতুর্থাংশ।

এতে আরো দেখা যায়, বাংলাদেশের অভিবাসী কর্মীরা অন্যান্য দেশের দক্ষ কর্মীদের তুলনায় কম অর্থ পাঠাতে পারেন বা অর্থনৈতিকভাবে কম লাভবান হন।

আইওএমের প্রতিবেদনে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এতে লিঙ্গ-সংবেদনশীল দক্ষতা বিকাশের জন্য বিনিয়োগের পাশাপাশি পরিবারের অর্থনৈতিক জ্ঞান রেমিট্যান্সের অর্থ পরিচালনার সক্ষমতা তৈরির কথা বলা হয়েছে। স্বল্প দক্ষ কর্মীদের আয় বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের ঋণের চক্র থেকে করে আনার জন্য শিক্ষা দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগেরও সুপারিশ করা হয়েছে আইওএমের প্রতিবেদনে। এছাড়া উন্নত ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সঞ্চয়ের প্রবণতা নিশ্চিত করতে তাদের বিপদগ্রস্ততা কমানো এবং আর্থিক স্বাধীনতার বিষয়টি নিশ্চিত করতেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। সম্পদ উৎপাদন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব নিশ্চিত করতে নারীদের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোয় সহায়ক নীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন বলেও মনে করছে আইওএম।

বিষয়ে আইওএম বাংলাদেশের মিশনপ্রধান গিওরগি গিগাওরি বলেন, মন্দাজর্জরিত রেমিট্যান্সনির্ভর জনগণের সহায়তায় বাড়তি নজর দেয়ার প্রয়োজন এখন অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি। অভিবাসী কর্মীদের দক্ষতা বিকাশে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য সরকারকেও সহায়তা করা প্রয়োজন, যাতে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ে। একই সঙ্গে অভিবাসী কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের, বিশেষ করে নারীদের অর্থনৈতিক শিক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে, যাতে করে উৎপাদনমুখী খাতে রেমিট্যান্সের অর্থের বিনিয়োগ নিশ্চিত হয় এবং রেমিট্যান্সনির্ভর পরিবারগুলোর স্থিতিস্থাপকতা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা তৈরি হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন