স্কয়ার রেনাটা এসিআই একমি

নয় মাসে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা

মেহেদী হাসান রাহাত

কভিড-১৯-এর প্রভাবে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দায় প্রায় সব খাতের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও হাতেগোনা কয়েকটি খাত ব্যতিক্রম, যার অন্যতম হলো ওষুধ খাত। অত্যাবশ্যকীয় জীবন রক্ষাকারী পণ্য হিসেবে অতিমারীর এই সময়ে ওষুধের চাহিদা তো কমেইনি, বরং কিছু ক্ষেত্রে বেড়েছে। এতে ওষুধ খাতের ব্যবসাও বেড়েছে। দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শীর্ষ চার ওষুধ কোম্পানি স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, রেনাটা লিমিটেড, এসিআই লিমিটেড একমি ল্যাবরেটরিজ গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে ১২ হাজার ৫০৮ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা বেশি।

দেশের ওষুধ খাতের শীর্ষ কোম্পানি স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস নয় মাসে হাজার ২৩ কোটি টাকার বিক্রি করেছে। যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে বিক্রি ছিল হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির বিক্রি বেড়েছে দশমিক ৮৩ শতাংশ। এর মধ্যে দেশের বাজারে হাজার ৮৯৯ কোটি টাকার ওষুধ বিক্রির পাশাপাশি বিদেশে ১২৪ কোটি টাকার ওষুধ রফতানি করেছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। চলতি হিসাব বছরের প্রথম মাসে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী সমন্বিত মুনাফা হয়েছে হাজার ৫০ কোটি টাকা। এর আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৯৪২ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির মুনাফা বেড়েছে ১১ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

জানতে চাইলে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের হিসাব অর্থ বিভাগের প্রধান মো. কবীর রেজা বণিক বার্তাকে বলেন, নভেল করোনাভাইরাসের মতো এই অতিমারীর সময়ে জরুরি সেবা হিসেবে আমাদের কার্যক্রম পুরোদমে চালু রয়েছে। কারণে আমাদের ব্যবসায় তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে এপ্রিল মে এই দুই মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০০ কোটি টাকার মতো কম বিক্রি হয়েছে। মাসে এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অনুসারেই ব্যবসা হচ্ছে। ফলে বছর শেষে আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে আশা করছি।

ওষুধ খাতের অন্যতম শীর্ষ কোম্পানি রেনাটা লিমিটেডের মাসে হাজার ৯০৯ কোটি টাকার বিক্রি হয়েছে। যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে বিক্রি ছিল হাজার ৫৫২ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির বিক্রি বেড়েছে ২৩ শতাংশ। এর মধ্যে ২৫৪ কোটি টাকা চুক্তিভিত্তিক উৎপাদন বিদেশে রফতানির মাধ্যমে আয় হয়েছে। চলতি হিসাব বছরের প্রথম নয় মাসে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী সমন্বিত মুনাফা হয়েছে ৩০৬ কোটি টাকা। এর আগের বছরের একই সময়ে মুনাফা ছিল ২৫৩ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে মুনাফা বেড়েছে প্রায় ২১ শতাংশ।

রেনাটা লিমিটেডের কোম্পানি সচিব মো. জোবায়ের আলম বণিক বার্তাকে জানান, গত নয় মাসে কোম্পানির ব্যবসা বাড়ার পাশাপাশি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এর ফলে কোম্পানির মুনাফায় উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কভিড-১৯-এর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সামনের দিনগুলোতেও কোম্পানির প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা করছেন তিনি।

একমি ল্যাবরেটরিজের মাসে হাজার ৩৯০ কোটি টাকার বিক্রি হয়েছে। যেখানে এর আগের বছরে বিক্রি হয়েছিল হাজার ২০৪ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির বিক্রি বেড়েছে ১৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আর সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ১১৩ কোটি টাকা। যা এর আগের বছরে ছিল ১১৫ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে দশমিক ৭৪ শতাংশ।

একমির কোম্পানি সচিব মো. রফিকুল ইসলাম জানান, কভিড-১৯-এর কারণে অনেক বেসরকারি হাসপাতাল প্রাইভেট চেম্বারগুলোতে চিকিৎসকরা রোগী দেখছেন না। এতে আমাদের বিক্রি প্রত্যাশার তুলনায় কিছুটা কম হয়েছে। অন্যদিকে কভিড-১৯-এর প্রভাবে কিছু ওষুধের বিক্রি বেড়েছে। তাছাড়া বিদেশে রফতানির ক্ষেত্রে ভালো সাড়া ছিল। তবে প্রত্যাশার তুলনায় কম বিক্রির পাশাপাশি বছরের জানুয়ারিতে কর্মীদের আর্থিক সুবিধা বাবদ কিছুটা ব্যয় বাড়ার কারণে গত নয় মাসে আমাদের মুনাফা কিছুটা কমেছে। অবশ্য হিসাব বছর শেষে কোম্পানির ব্যবসা মুনাফায় উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হবে বলে আশা করছেন তিনি।

এসিআই লিমিটেড গত নয় মাসে হাজার ১৫৬ কোটি টাকার বিক্রি করেছে। যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে বিক্রি হয়েছিল হাজার ৬২৮ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির বিক্রি বেড়েছে ১২ শতাংশ। ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি হওয়া সত্ত্বেও পরিচালন আর্থিক ব্যয় বাড়ার কারণে আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির ১২০ কোটি টাকা কর-পরবর্তী লোকসান হয়েছে। যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে লোকসান ছিল ৪১ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে লোকসান বেড়েছে প্রায় ১৯৩ শতাংশ।

কভিড-১৯-এর কারণে দুই মাসেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর  গত ৩১ মে থেকে দেশে পুঁজিবাজারে লেনদেন চালুর পর থেকেই বিনিয়োগকারীদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে ওষুধ খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ার। লেনদেন চালুর পর প্রথম সপ্তাহে পুঁজিবাজারের মোট লেনদেনের ৫৩ শতাংশই ছিল ওষুধ কোম্পানির। দ্বিতীয় সপ্তাহে লেনদেনের ৪৮ শতাংশ ছিল ওষুধ খাতের। আলোচ্য সময়ে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, রেনাটা, একমি এসব কোম্পানির শেয়ার বিনিয়োগকারীদের চাহিদার শীর্ষে ছিল।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন