আঙ্কটাডের প্রতিবেদন

এফডিআই আকর্ষণে বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে গেছে কম্বোডিয়া

বদরুল আলম

২০১৮ সালে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ বা এফডিআই প্রবাহ ছিল সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। জাতিসংঘের বাণিজ্য উন্নয়নবিষয়ক সংস্থার (আঙ্কটাড) তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে এটি এক লাফে ৫৬ শতাংশ কমে গেছে। সময়ে  বিনিয়োগ আকর্ষণে বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে গেছে কম্বোডিয়া।  যদিও এফডিআই প্রবাহ নিয়ে আঙ্কটাড বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দশমিক বিলিয়ন ডলারের গরমিল দেখা গেছে।

প্রতি বছর জুন মাসে সারা বিশ্বের এফডিআই প্রবাহ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে আঙ্কটাড। সেই ধারাবাহিকতায় আজ প্রকাশ হতে যাচ্ছে সংস্থাটির ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট-২০২০। এবারের প্রতিবেদনের প্রতিপাদ্যইন্টারন্যাশনাল প্রোডাকশন বিয়ন্ড দ্য প্যানডেমিক প্রতিবেদনটিতে কভিড-১৯ পরবর্তী বৈশ্বিক বিনিয়োগ প্রবাহে মহামারীর প্রভাব এর গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করা হয়েছে।  

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এশিয়ার নয়টি স্বল্পোন্নত দেশে (এলডিসি) গত আট বছরে প্রথমবারের মতো এফডিআই প্রবাহ ২৭ শতাংশ কমে বিলিয়ন ডলারে ঠেকেছে। এর মধ্যে শীর্ষ তিন এফডিআই গ্রহীতা দেশ হচ্ছে কম্বোডিয়া, মিয়ানমার বাংলাদেশ। এশিয়ার নয়টি এলডিসির মোট এফডিআই প্রবাহের ৯৪ শতাংশই তিনটি দেশের। তবে এই তিনটি দেশের মধ্যে কম্বোডিয়ায় এফডিআই প্রবাহ বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও বাংলাদেশ মিয়ানমারে তা কমেছে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশে আগের বছরের তুলনায় ৫৬ শতাংশ কমে দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার এফডিআই এসেছে। এর আগে ২০১৮ সালে একটি মার্জার অ্যাকুইজিশন উদ্যোগে প্রায় দশমিক বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড পরিমাণ এফডিআই প্রবাহ ছিল বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে এফডিআই আকর্ষণে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর কাঠামোগত দুর্বলতা ভঙ্গুরতার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে এলডিসিতে মোট এফডিআই প্রবাহ ছিল ২১ দশমিক বিলিয়ন ডলার, যা ২০১৮ সালের তুলনায় দশমিক শতাংশ কম। গোটা বিশ্বের এফডিআই প্রবাহে এলডিসির এফডিআইয়ের অংশ ছিল দশমিক শতাংশ। এলডিসিগুলোর মধ্যে এফডিআই আকর্ষণে শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে কম্বোডিয়া, মিয়ানমার, ইথিওপিয়া, মোজাম্বিক বাংলাদেশ। ২০১৯ সালে এফডিআই প্রবাহ কম্বোডিয়ায় ছিল দশমিক বিলিয়ন ডলার, মিয়ানমারে দশমিক বিলিয়ন, ইথিওপিয়ায় দশমিক বিলিয়ন, মোজাম্বিকে দশমিক বিলিয়ন এবং বাংলাদেশে দশমিক বিলিয়ন ডলার।

আঙ্কটাডের ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট ২০২০- বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ এফডিআই গ্রহণকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আঙ্কটাডের হিসাবে ২০১৯ সালে বাংলাদেশে এফডিআই প্রবাহ ২০১৮ সালের ৫৬ শতাংশ কমে দশমিক বিলিয়ন ডলার বলা হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের এফডিআই প্রবাহের তথ্যে রয়েছে ভিন্ন পরিসংখ্যান। ২০১৯ সাল শেষ হওয়ার পর চলতি মে মাসে এফডিআইয়ের প্রভিশনাল বা অস্থায়ী পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সালে নিট এফডিআই ছিল ২৮৭ কোটি ৩৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার। ২০১৮ সালে যার পরিমাণ ছিল ৩৬১ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। অর্থাৎ এক বছরে এফডিআই ৭৩ কোটি ৯৩ লাখ ডলার বা ২০ শতাংশ কম এসেছে। আঙ্কটাড বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানের তুলনামূলক বিশ্লেষণে বড় ধরনের গরমিল দেখা যাচ্ছে। হিসাব অনুযায়ী আঙ্কটাড বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে ১২৭ কোটি ডলারের পার্থক্য রয়েছে।

প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) বলছে, আঙ্কটাড বাংলাদেশের ২০১৯ সালের পূর্ণাঙ্গ হিসাব সংগ্রহ করতে পারেনি। যার প্রতিফলন হিসেবে স্থানীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা আন্তর্জাতিক সংস্থার পরিসংখ্যানে বড় ধরনের পার্থক্য তৈরি হয়েছে।

বিডা নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, আঙ্কটাডের তথ্যে আংশিক পরিসংখ্যান যাওয়ার বিষয়ে আমরা আগামীকালই বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করব। যেকোনো কারণেই হোক আঙ্কটাড ২০১৯ সালের সম্পূর্ণ পরিসংখ্যান সংগ্রহ করতে পারেনি। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের এফডিআই পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৯ সালে ২০১৮ সালের তুলনায় এফডিআই কমলেও তার পরিমাণ ২৮৭ কোটি ডলারের বেশি। তাছাড়া আঙ্কটাডের প্রক্ষেপণ ছিল, ২০১৯ সালে বাংলাদেশের এফডিআই কমবে শতাংশ অথচ এখন তাদের হিসেবে কমেছে অনেক বেশি।

কভিড-১৯-এর পরবর্তী এফডিআই সম্পর্কে সিরাজুল ইসলাম বলেন, এফডিআই আকর্ষণে আমাদের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হবে। কভিড-১৯ বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করেছে। যে প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ছিল তা অর্থবছর বা আগামী অর্থবছরে অর্জন করা খুবই কঠিন হবে। বছর তো যাবেই না, কারণ পুরো একটি প্রান্তিক সবকিছুই স্থবির ছিল। আগামী বছর প্রবৃদ্ধিটা যেন ধরে রাখতে পারি, সে চেষ্টাই করতে হবে। তবে অনেক কিছুই নির্ভর করছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ওপর। কভিড-১৯ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাটা অনেক বেশি গুরুত্ব পাবে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে। এখন পর্যন্ত বিষয়ে পারদর্শিতা দেখাতে সক্ষম আমরা হইনি।

আজ প্রকাশিতব্য আঙ্কটাড প্রতিবেদনেও কভিড-১৯ মহামারী পরবর্তী চিত্র প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। সেখানে গ্রিনফিল্ড প্রকল্প বা নতুন ঘোষিত বিনিয়োগ প্রকল্পগুলোর বিষয়ে আলোচনায় বাংলাদেশের কথা উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে চীন থেকে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে নতুন বিনিয়োগ প্রকল্পের তথ্য। করোনা মহামারীর প্রভাব সম্পর্কে বলা হয়েছে, জ্বালানি খাতের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের আয়ে করোনার প্রভাব পড়েছে। যা বাংলাদেশসহ এলডিসি দেশগুলোতে বহুজাতিক জ্বালানি কোম্পানির এফডিআইয়ের ওপর প্রভাব ফেলবে।

আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে রফতানিমুখী পোশাক খাত বাংলাদেশে এফডিআই প্রবাহের গুরুত্বপূর্ণ খাত। খাতটিতে প্রধান বিনিয়োগকারী দেশগুলোর মধ্যে আছে দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং চীন। ২০২০ সালে পোশাকের বৈশ্বিক চাহিদার পতন কারখানা বন্ধের প্রভাবে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা রয়েছে খাতটিতে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুত রফতানিকারক সংগঠনের বরাতে প্রতিবেদনে আঙ্কটাড বলেছে, চলতি বছর এপ্রিল পর্যন্ত বিলিয়ন ডলারেরও বেশি রফতানি বাতিল বা স্থগিত হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন