বিক্ষোভে কি বাড়বে করোনা সংক্রমণ?

বণিক বার্তা অনলাইন

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তার ঠেকাতে টানা কয়েক মাসের লকডাউন শেষে বিভিন্ন দেশেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। অর্থনীতি বাঁচাতে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে সীমিত আকারে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে কলকারখানা খুলে দেয়া হচ্ছে।

তবে এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ‍শুরু হয়েছে বর্ণবাদ বিরোধী বিক্ষোভ। জর্জ ফ্লয়েড নামে এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবকের পুলিশি হেফজাতে নির্মম মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের এ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর নানা দেশেই। 

তবে বাংলাদেশ ভারতের মতো অনেক দেশেই ত্রাণের দাবিতে শ্রমজীবী মানুষের বিক্ষোভ চলছে অনেক আগে থেকেই। এমনকি বেতনের দাবিতে লকডাউন ভেঙে রাস্তায় নেমে এসেছেন হাজার হাজার গার্মেন্ট শ্রমিক। 

করোনাভাইরাসে সংক্রমণ বিস্তার ঠেকাতে যেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে সেখানে হাজার হাজার মানুষের এই উত্তাল বিক্ষোভ কতোটা ঝুঁকির কারণ হতে পারে? সাধারণ জ্ঞানে ধারণা করাই যায়, এতে ব্যাপকভাবে সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত নন। তাদের আশঙ্কা থাকলেও নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না। এর জন্য ভাইরাসের সর্বোচ্চ সুপ্তাবস্থা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাইছেন তারা।

তবে সন্দেহ নেই এ বিক্ষোভগুলো স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের পরীক্ষা এবং নতুন সংক্রমণ শনাক্ত ও চিহ্নিত করার প্রাথমিক উদ্যোগকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। কারণ বিক্ষোভের সময় ঘনিষ্ঠ শারীরিক যোগাযোগ সংক্রমণ দ্রুত বাড়িয়ে তুলতে পারাটাই স্বাভাবিক। যদিও বিক্ষোভে অনেকে মাস্ক ব্যবহার না করায় মুক্ত বাতাসে ভাইরাস কতটা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে- এ প্রশ্নে বিজ্ঞানীরা একমত নন।   

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিক্ষোভে সামাজিক বা শারীরিক দূরত্বের মতো যোগাযোগের সীমাবদ্ধতা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে। এরপর যদি সংক্রমণ বাড়ে তাহলে এই বিক্ষোভের কারণেই ঘটল কিনা বা কলকারখানা, অফিস খুলে দেয়ার কারণে কেমন সংক্রমণ ঘটছে- তা জানা মশকিল হয়ে যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) মুখপাত্র ক্রিস্টেন নর্ডলান্ড বলেন, প্রতিবাদ ও বৃহত্তর সমাবেশগুলো আমাদের প্রস্তাবিত সামাজিক দূরত্বের নির্দেশিকাগুলো বজায় রাখতে অসুবিধা সৃষ্টি করে এবং এটা অন্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে। এ ধরনের কার্যক্রমগুলো কী প্রভাব ফেলবে- তা এত দ্রুত জানা সম্ভব না। 

নতুন সংক্রমণের বিষয়টি বুঝতে অন্তত কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে এবং সংক্রমণের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট উত্তর দেয়া কঠিন করে তুলবে। কারণ একদিকে দেশজুড়ে বিক্ষোভে মানুষের ঢল এবং অন্যদিকে অর্থনীতির চাকাও ঘুরতে শুরু করেছে। তাই বড় আকারে সংক্রমণ বিস্তার শুরু হলেও সেটা কোনটির প্রতিক্রিয়ায় ঘটছে- তা জানা সহজ হবে না। 

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলের ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক উইলিয়াম শ্যাফনার বলেন, বিক্ষোভের মতো পরিস্থিতিতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সবরকম পরিবেশই থাকে। আমরা এরই মধ্যে বেশিরভাগ জায়গায় যে সংক্রমণ বৃদ্ধির মুখোমুখি হয়েছি সেটা বিক্ষোভের কারণে বৃদ্ধি পাবে কিনা- তা আমি নিশ্চিত নই। 

যুক্তরাষ্ট্রের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও হোয়াইট হাউসের করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্সে অন্যতম সদস্য অ্যান্থনি ফাউসি বলেছেন, টেলিভিশনে ছবি ও ভিডিও ক্লিপসে আমরা অনেক মানুষের সমাগম দেখছি। এটা আমার জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর প্রভাব জানতে ও বুঝতে আরো কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। এটা জানতে সম্ভবত তিন সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় লাগবে। আমাদের এখন অপেক্ষা করা এবং নীরব দর্শক হয়ে থাকা ছাড়া উপায় নেই। 

বিক্ষোভকারীদের অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। শ্যাফনার বলেন, বিক্ষোভে অংশ নেয়া সবাইকে পরামর্শ দেব, আপনারা সব সময় মাস্ক ব্যবহার করুন। পরস্পরের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখুন এবং চেঁচামেচি ও প্রতিবাদী গান থেকে নিজেদর দূরে রাখার চেষ্টা করুন। 

এদিকে মিনেসোটার জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বিক্ষোভকারীদের শরীরে কোনো লক্ষণ দেখা না গেলেও দুয়েক সপ্তাহ পরে করোনার নমুনা পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন।

মিনেসোটা ডিপার্টমেন্ট অব হেলথের পরিচালক ক্রিস এরেনস্যান বলেন, সেখানে (বিক্ষোভে) এমন ব্যক্তি থাকতে পারেন, যারা অনিচ্ছাকৃতভাবে ভাইরাসটি অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। আমরা জানি যে, কভিড-১৯ এর একটা লক্ষণহীন সময়কাল রয়েছে। তাই আমরা ধারণা করছি, হ্যাঁ, ভাইরাসটি ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ব্লুমবার্গ অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন