সিলেটে বুথ সংকটে করোনা পরীক্ষায় ভোগান্তি

দেবাশীষ দেবু সিলেট

নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গ থাকায় নমুনা পরীক্ষা করাতে মাকে নিয়ে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে এসেছিলেন দক্ষিণ সুরমার আসকর আলী। কিন্তু দুদিন ঘুরেও পরীক্ষার জন্য নমুনা জমা দিতে পারেননি তারা। প্রতিদিনই এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে আরো অনেককেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিলেট নগরী দুই উপজেলার জন্য বুথ রয়েছে মাত্র একটি। সংকট নিরসনে বুথ বাড়াতে সিলেট সিটি করপোরেশনকে (সিসিক) চিঠি দিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। তবে সিটি করপোরেশন বলছে, বুথ বাড়াতে আরো সপ্তাহখানেক সময় লাগবে।

সূত্র জানায়, সিলেটে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। গতকাল পর্যন্ত জেলায় শনাক্তের সংখ্যা ছিল হাজার ছুঁই ছুঁই। তবে উপসর্গ আছে এমন রোগীর সংখ্যা আরো বেশি। তাই অনেকেই নমুনা পরীক্ষা করাতে চান। কিন্তু এখন পর্যন্ত সিলেট নগরীতে কেবল শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালেই নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তাও একটিমাত্র বুথে। নগরী ছাড়াও সদর উপজেলা এবং দক্ষিণ সুরমা উপজেলার রোগীদেরও নমুনা জমা দিতে হয় এখানে। প্রতিদিন হাসপাতালে প্রায় ৫০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর বিপরীতে প্রতিদিন নমুনা দিতে ভিড় করেন ১৫০-২০০ মানুষ।

এতে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়াতে হয় অনেক রোগীকে। অনেকে একাধিক দিন এসেও নমুনা জমা দিতে পারেন না। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রোগীদের। রোগীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদেরও। প্রচুর রোগী ভিড় করায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাও কঠিন হয়ে উঠেছে।

আসকর আলী বলেন, করোনার চেয়ে পরীক্ষার জন্য নমুনা জমা দেয়ার যন্ত্রণা অনেক বেশি। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়বে।

ব্যাপারে সিলেট শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মহাপাত্র বলেন, প্রতিদিন শতশত লোক এখানে নমুনা দিতে আসছেন। সবার নমুনা সংগ্রহের মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আমাদের নেই। ফলে আমরা ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি। রোগীরাও দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। সক্ষমতার চেয়ে প্রতিদিন চার গুণ বেশি রোগী এখানে নমুনা জমা দিতে আসেন বলে জানান তিনি।

নমুনা সংগ্রহের ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, আমরা প্রথমত প্রাধান্য দিয়ে থাকি নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগীর পরিবারের সদস্য সন্দেহভাজন রোগীর নমুনা সংগ্রহকে। এছাড়া রোগীর সংস্পর্শে কারা কারা এসেছেন, তাদের শনাক্ত করে  নমুনা সংগ্রহ করে থাকি এবং  নভেল করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন এমন রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে থাকি। ঢাকার মতো সিলেটে  বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে টাকা দিয়ে নমুনা পরীক্ষা করানোর কোনো ব্যবস্থা নেই বলে জানান তিনি।

এদিকে সিলেটে করোনার সংক্রমণ বেড়ে চললেও নমুনা সংগ্রহের বুথ বাড়ানোর ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই। রোগীর চাপ বাড়ায় ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিটি করপোরেশন একে অন্যের দিকে চেয়ে আছে। এমন পরিস্থিতির মাঝে নমুনা সংগ্রহের বুথ বাড়ানোর জন্য সিসিককে চিঠি দিয়েছেন সিলেটের সিভিল সার্জন।

সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল বলেন, সিটি মেয়র আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন ডা. শামসুদ্দিন হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহের বুথ বৃদ্ধির ব্যাপারে তিনি উদ্যোগ নেবেন। সম্প্রতি রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাপারে সহযোগিতা চেয়ে আমরা সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিয়েছি।

চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আমরা ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছি। তবে বুথ চালু হতে আরো সপ্তাহখানেক সময় লাগবে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন