কভিড-১৯-এর প্রভাব

অর্থনীতির কাঠামো পরিবর্তনের সুযোগ

বদরুল আলম

দেশের রফতানি বাণিজ্যের ৮৪ শতাংশ অবদান তৈরি পোশাক খাতের। কর্মসংস্থানের একটি বড় অংশও খাতটিকে ঘিরে। আর শ্রমঘন শিল্পটি গড়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকা বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে। কভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটাও এসেছে খাতের ওপর। রফতানিতে ঘটেছে বড় পতন, কর্মসংস্থান হারানোর শঙ্কায় আছে অসংখ্য শ্রমিক। সেই সঙ্গে এই মহামারী গার্মেন্টস শিল্পনির্ভর রফতানি খাতের ভঙ্গুরতা উন্মোচন করেছে, যাকে অর্থনৈতিক কাঠামো পরিবর্তনের একটি সুযোগ হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পরিবর্তিত বিশ্বে কোনো একক খাতের ওপর নির্ভর করে অর্থনীতি টিকে থাকতে পারবে না। টিকতে হলে  অবশ্যই উৎপাদন রফতানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে। এজন্য নীতিসহায়তার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনতে হবে। যেটি চীন, ইন্দোনেশিয়া থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলো করেছে।

বাণিজ্য উন্মুক্ত হওয়ার পাশাপাশি রফতানি বৈচিত্র্যকরণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।  অঞ্চলের অনেক দেশই বাণিজ্য ব্যবস্থা উদার করার পাশাপাশি সময় অনুযায়ী কার্যকর নীতি প্রণয়ন করতে পেরেছে, যা দক্ষতা উন্নয়ন বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করে রফতানি বৈচিত্র্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। সার্বিকভাবে সঠিক সময়ে সঠিক নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে দেশগুলোর প্রতিযোগিতা সক্ষমতা শক্তিশালী হয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) এক প্রতিবেদন বলছে, থাইল্যান্ডের মোট রফতানিতে ১৮ দশমিক ৮১ শতাংশ অবদান ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেশিনারিজ খাতের। এছাড়া  ইলেকট্রিক্যাল মেশিনারি অ্যান্ড ইকুইপমেন্টের অবদান ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং ভেহিকলের অবদান ১১ দশমিক ৪২ শতাংশ। অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়ার মোট রফতানিতে মিনারেল ফুয়েলস, অয়েলস অ্যান্ড ওয়্যাক্সেসের অবদান ২১ দশমিক ৮৬ শতাংশ। দেশটির অন্যান্য রফতানি পণ্যের মধ্যে আছে কৃষিপণ্য, ভেজিটেবল অয়েলস, পোশাক পাদুকা। ভিয়েতনামে রফতানি খাতে কেন্দ্রীভবন থাকলেও গত এক দশকে অবস্থায় পরিবর্তন এসেছে। ২০০৬ সালে দেশটির মোট রফতানিতে মেশিনারি এবং ইলেকট্রনিক ইকুইপমেন্টের অংশ ছিল দশমিক শতাংশ। ২০১০ সালে যা বেড়ে হয় ১৪ শতাংশ, ২০১৫ সালের মোট রফতানিতে মেশিনারি ইলেকট্রনিক ইকুইপমেন্টের অংশ বেড়ে হয়েছে ৩৫ শতাংশ।

অন্যদিকে বাংলাদেশে গত এক দশকে রফতানি খাতের কেন্দ্রীভবনে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। রফতানি খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের রফতানি খাতে অনেক পণ্যই সম্ভাবনাময়। কিন্তু যথাযথ নীতি অবকাঠামো সহায়তার ঘাটতিতে খাতগুলোর বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। সম্ভাবনাময় পণ্যগুলোর মধ্যে আছে কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, বাইসাইকেল, প্লাস্টিক ফার্নিচার।

বাংলাদেশ বাইসাইকেল অ্যান্ড পার্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল মেঘনা গ্রুপের ডিরেক্টর অপারেশন লুত্ফুল বারি প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের দুর্বলতাগুলো অনেক বেশি দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। আর এটাই অর্থনীতির কাঠামো পরিবর্তনের ভালো সময়। দেশের রফতানিতে বৈচিত্র্য আনার জন্য বর্তমান সময়টা গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান প্রেক্ষাপট বিশেষ করে বাইসাইকেল ইন্ডাস্ট্রির জন্য বড় ধরনের আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারে।

তিনি বলেন, ইউরোপে বাইসাইকেল অবসর সময় কাটানো শরীরচর্চার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। এখন এটি যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে ইউরোপে বাইসাইকেলের চাহিদা বৃদ্ধির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। চীনের বেশির ভাগ বাইসাইকেল কারখানা এখন ওভার ক্যাপাসিটিতে চলছে। আমরাও আশা করতে পারি এখন যদি সরকারের নীতিসহায়তা পাওয়া যায়, তাহলে এই বাইসাইকেল শিল্প অর্থনীতির মোড় ঘোরাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

কৃষি থেকে শিল্পে অর্থনীতির রূপান্তর ঘটাতে গিয়ে গত কয়েক দশক ধরে শুধু ঢাকা চট্টগ্রামে কেন্দ্রীভূত হয়ে গেছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সিংহভাগ। ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অঞ্চলভিত্তিক সুষম বিন্যাস হয়নি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপের তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের শিল্প খাতে মোট কর্মসংস্থানের ৪৫ শতাংশই ঢাকায়। আবার সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার তথ্য-উপাত্ত বলছে, দেশের শিল্প-কারখানার ৮০ শতাংশই ঢাকা  চট্টগ্রামে, যার অধিকাংশই আবার তৈরি পোশাক খাতকেন্দ্রিক। লাখ কোটি টাকার আমদানি-রফতানির দুই-তৃতীয়াংশের বেশিই পরিচালিত হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে।

বিশ্লেষকরা জানান, শিল্পের অগ্রযাত্রার শুরুর দিকটায় মূলত যোগাযোগ ব্যবস্থা, জ্বালানিসহ বিভিন্ন সুবিধার সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করতেই রাজধানী ঢাকা তার আশপাশের অঞ্চল এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামকেই বিনিয়োগের কেন্দ্র বানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ঘনত্ব বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে সেখানেই কেন্দ্রীভূত হয়ে গেছে শিল্প। কিন্তু কভিড-১৯ এসে শ্রমঘন শিল্পের কেন্দ্রীভবন নিয়ে নতুন করে ভাবার অবকাশ এনে দিয়েছে। নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের চিত্র লক্ষ করলে দেখা যায়, ঢাকা (নারায়ণগঞ্জ গাজীপুরসহ) এবং চট্টগ্রামেই আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। কর্মসংস্থানের কারণে মানুষের বসবাস ঘনত্ব বেশি এসব অঞ্চলে সহজেই সংক্রমণ দ্রুত হারে বেড়েছে। শুধু তা- নয়, সেখান থেকে সংক্রমিত হয়ে গ্রামে ফেরা মানুষ প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দিয়েছে এই মহামারী। কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ভাঙাগড়ার এই সময়কে বিকেন্দ্রীকরণের জন্যও একটি ভালো সুযোগ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এক দশক ধরে প্রবৃদ্ধিতে যে ঈর্ষণীয় অর্জন পেয়েছিল বাংলাদেশ তাতেও বড় ধাক্কা লাগতে পারে কভিড-১৯-এর কারণে। তবে অর্থনীতির বিশ্লেষক শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, মহামারীর প্রভাবে পরিস্থিতি তৈরি হলেও এই দুর্যোগপূর্ণ সময়টাই দেশের অর্থনীতিকে পুনর্গঠনের সবচেয়ে ভালো সময় হতে পারে, যদি সঠিক কৌশল গ্রহণ করা যায়।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বণিক বার্তাকে বলেন, প্রবৃদ্ধি সাড়ে শতাংশ হওয়ার জন্য যে সংস্কার দরকার সেগুলো করতে হবে। সেটা করার উপযুক্ত সময় এখনই। আসন্ন বাজেটেই সরকারের পক্ষ থেকে ধরনের প্রস্তুতির ঘোষণা আসা দরকার। রূপান্তরের জন্য এখন যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রয়োজন। জনগণ সরকারের প্রশাসনিক যন্ত্রকে মোবিলাইজ করতে হবে। অনেক জায়গায় মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন। কর ব্যবস্থায় সংস্থার ছাড়া সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন হবে না। বিনিয়োগের পরিবেশটার উন্নতি করা লাগবে। প্রশাসনিক যন্ত্রকে যুগোপযোগী করতে হবে, মেধাভিত্তিক হতে হবে। যোগ্য লোকের যথেষ্ট ঘাটতি আছে। শিক্ষা খাতকে ঢেলে সাজাতে হবে। জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে পুরোপুরি পুনর্গঠন করতে হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা এরই মধ্যে সংকুচিত হতে শুরু করেছি। ধাক্কায় সরকারের রাজস্ব কমতে কমতে শতাংশে নেমে আসছে। বিনিয়োগ শেষ হয়ে যাচ্ছে। চীন থেকে যে বিনিয়োগ আসার কথা সেটা অন্য দেশে যাচ্ছে। এসব বিষয়ে ভাবতে হবে।

আহসান এইচ মনসুর আরো বলেন, গ্রামে চাহিদা আছে। করোনার বড় প্রভাব গ্রামে তেমন পড়েনি, কারণ সেখানে কেউ চাকরিচ্যুত হয়নি। শহর থেকে বেকার হয়ে মানুষ গ্রামে চলে গেছে। চাহিদার পতন গ্রামে তেমন হয়নি। নগরকেন্দ্রিক ফ্যাসিলিটিও গ্রামে আছে। গ্রামে ক্ষেতখামার থাকবে। কিন্তু সেখানে গরু-লাঙল দিয়ে হাল চাষ হবে না। আধুনিক ব্যবস্থায় চাষ হবে।

অর্থনীতিকে যদি পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় যেতে হয় তাহলে পুনর্নির্মাণ করার পাশাপাশি বৈচিত্র্যও আনতে হবে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, আগে যেমনটা চলছিল তেমনভাবে চালাতে চাইলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সহজে হবে না। করোনার  এই সময় নীতিনির্ধারক ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য একটি সম্ভাবনা। এই সময়ে গতানুগতিক ধারা থেকে বের হয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালানো প্রয়োজন।

অর্থনীতিতে পুনর্গঠন করতে হলে বিনিয়োগের একটা পরিবেশ লাগে। কারণ পুনর্গঠন করতে বিনিয়োগ করতে হয়। এই বিনিয়োগ কে করবেসরকার, বেসরকারি খাত, নাকি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা? এমন প্রশ্নও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে এখন।

বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের ধরে নিতে হবে ব্যক্তি খাত বিনিয়োগ করবে। এখন তাদের প্রশ্ন করা প্রয়োজন, তারা আদৌ করবে কিনা। তারা দেখবে, এখন বিনিয়োগ হওয়াটা কতটা যৌক্তিক। তারা দেখবে, যে পণ্য তারা বিক্রি করতে চায়, সেটার চাহিদা আছে কিনা বা আগামীতে কখন সে চাহিদা তৈরি হতে পারে। এটা দেশে হোক বা বিদেশে অর্থাৎ চাহিদা আগে তৈরি হতে হবে। পুনর্গঠনের সঙ্গে চাহিদার একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক . কেএএস মুর্শিদ বলেন, নতুনভাবে ভাবতে হবে। যদি আমরা প্রথাগতভাবে চিন্তা করি যে আগে যেমন ছিল সেটা আবার কবে ফিরে আসবে, তাহলে অনেক সময় লাগবে। এটা একটা দিক। আর পুনরুদ্ধারের বিষয়ে আরেকটা দিক হলো পুনরুদ্ধার তখনই সফল হবে, যখন পুনরুদ্ধার করতে গিয়ে আমি হাজার হাজার মানুষকে বিপদে না ফেলব। আমাদের যে প্রস্তুতি প্রয়োজন সেটা এখনই নিতে হবে। মূল কথা ওটাই, যেখানে চাহিদা থাকবে সেখানে সাড়া পাওয়া যাবে। চাহিদা ঢাকা না চট্টগ্রামে সেটা মুখ্য নয়, বরং চাহিদা থাকতে হবে। সেই হিসেবেই পুনরুদ্ধার হবে।

খাদ্য কৃষির মতো সচল খাতগুলোকে আরো সহযোগিতা দিয়ে এগুলোকে ত্বরান্বিত করার প্রয়োজনও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, জিডিপিতে খাদ্য কৃষির অংশ বাড়াতে হবে। আরো কিছু পণ্য আছে যেগুলোর নতুন চাহিদা তৈরি হয়েছে বাজারে। পণ্যগুলো স্বাস্থ্যসম্পর্কিত, সুরক্ষাসম্পর্কিত। বড় কোম্পানিগুলো নতুন চাহিদার সুযোগও নিতে শুরু করেছে। কিন্তু সবই তো বড় কোম্পানি না। তাই সবাই যাতে সুযোগ নিতে পারে, তেমন কৌশল গ্রহণ করা সম্ভব কিনা সেটা দেখতে হবে।

অর্থনীতির পুনর্গঠন কৌশল এখনই নিতে হবে, সেটা নিয়ে কোনো মতপার্থক্য নেই। কিন্তু সেটা কোথায় হবে? এমন প্রশ্ন তুলে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সংস্কারের প্রথম ধাপেই প্রাথমিকভাবে চাহিদার সৃষ্টি করতে হবে। তারপর ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য অন্য উপকরণগুলোর দিকে নজর দিতে হবে। যেমন বিদেশী বিনিয়োগ আনতে হবে। দেশীয় বিনিয়োগকারীকে উৎসাহিত করতে হবে। ধরনের বিষয়গুলোর জন্য এক ধরনের পুনর্গঠন কৌশল লাগবে। যার মধ্যে অবকাঠামো রেগুলেটরি রিফর্মসহ আরো অনেক কিছু আছে। এখন হয়তো এক বছরের জন্য অতিরিক্ত টাকা ধার করে, টাকা ছাপিয়ে, বিদেশের কাছ থেকে অনুদান এনে আমরা ফিসকাল ম্যানেজ করলাম, শতাংশের মতো ঘাটতি হলো। কিন্তু এভাবে এক বা দুই বছরের বেশি চলবে না। এরপর কী হবে? সেজন্য আমাদের রাজস্ব রিফর্ম দরকার। - শতাংশ রাজস্ব দিয়ে আমাদের সরকার চলবে না। ব্যাংকিং খাত যে অবস্থায় এসেছে, সেখান থেকে উত্তরণ ঘটাতে হবে, তা না হলে টেকসই প্রবৃদ্ধি হবে না।

এদিকে দেশের ব্যবসায়ী শিল্প উদ্যোক্তারাও বর্তমান সময়কে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের সঠিক সময় বলে মনে করছেন। তাদের মতে, কভিড আমাদের সব ধ্বংস করেছে, তেমনটা না। এত কিছুর পরও আমাদের কৃষি ভালো করেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির উৎপাদক, সরবরাহকারী যারা আছেন তারা ৭০ শতাংশ ক্যাপাসিটিতে কাজ করতে পারছেন। এই সাপ্লাই চেইন মেইনটেইন করতে না পারলে আমাদের কষ্ট আরো বহুগুণ বেড়ে যেতে পারত। এসব খাত নিয়ে ভাববার পাশাপাশি এখন অনেক বড় সুযোগ এসেছে স্বাস্থ্যসেবা খাত নিয়ে ভাববার। এখানে বিনিয়োগ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ভালো কিছু করা সম্ভব। এর খুব প্রয়োজনও আছে বর্তমান প্রেক্ষাপটে। আমরা এখন যুদ্ধের মধ্যে আছি। ২১ দিনের লকডাউন শেষ হলে যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে তা কিন্তু না।

জানতে চাইলে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) সভাপতি নিহাদ কবির বণিক বার্তাকে বলেন, করোনা প্রভাব প্রেক্ষাপটে বিজনেস অ্যাজ ইউজুয়াল থেকে বদলে সৃজনশীল চিন্তা করার সুযোগ অবশ্যই এখন। বিশেষ করে সেবা খাতে। ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে মানুষকে যেতেই হবে। শিল্পায়নের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়ার তাত্ক্ষণিক পরিবর্তন কিছুটা অসুবিধাজনক, বিশেষ করে শ্রমঘন শিল্পে। কিন্তু সেখানেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে যেসব প্রক্রিয়াগত দুর্বলতা ধরা পড়ছে, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজের ধরনে পরিবর্তন এনে দক্ষতার সঙ্গে শ্রমশক্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব। সরকারের জন্য সবচেয়ে সুবর্ণ সুযোগ হতে পারে আমাদের অতিরিক্ত রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনগুলোর সহজীকরণ করা। এটা যদি হয় তাহলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বা ঘরে থেকেও কাজ করা সহজতর হয়ে যাবে। এতে অনেক সময় খরচ বাঁচবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের যে কথা আমরা বলি সেই ডিজিটাল বাংলাদেশকে আরো বিস্তৃতভাবে বাস্তবায়নের এটা একটা খুব ভালো সুযোগ প্রকৃষ্ট সময়।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে আসন্ন বাজেটকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ফোকাস করতে হবে মানুষকে বাঁচানোর ওপর। প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, ঘাটতি কেমন হবে ধারণাকে আঁকড়ে ধরে রাখলে চলবে না। বাজেট ঘাটতি যদি থেকে শতাংশ হয় হবে, কিন্তু মানুষকে বাঁচাতে হবে। নীতিনির্ধারণী জায়গায় চিন্তা করলে গত কয়েক বছরে সামষ্টিক অর্থনীতিতে কনজারভেটিভ পলিসি নিয়ে আমরা যে রুমটা পেয়েছি তা এখন সাহায্য করতে পারে। নীতিনির্ধারণী সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে ব্যাংকিং, করসংক্রান্ত নিয়মনীতিগুলোর দুর্বলতা নিয়ে কাজ করার জন্য এটা ভালো সময়।

এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বণিক বার্তাকে বলেন, কভিড-১৯-এর জন্য যেসব দুঃখজনক বাস্তবতা বিদ্যমান সেগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে এফবিসিসিআই মনে করে সামাজিকভাবে বাংলাদেশের ভিন্নভাবে চিন্তা করার বা কাঠামোগত পুনর্গঠনের বিষয়টি এখন আমাদের সুযোগ না, বরং প্রয়োজন। বলা হয়, রফতানির ৮৪ শতাংশ অবদান পোশাক খাতের। এর সঙ্গে সংযুক্ত অনেক শিল্প আছে যাদের অবদানও অস্বীকার করা যাবে না। বিভিন্ন অ্যাকসেসরিজ যেমন কার্টন বাটন প্লাস্টিক পণ্য, ডায়িংসহ আরো অনেক পণ্য তৈরির শিল্প আছে, যাদের অবদান অনেকাংশেই নেগলেকটেড। তাদের প্রণোদনা নেই, সোর্স ট্যাক্স নেই। এটা শুধু একটা উদাহরণ। উল্লেখযোগ্য শিল্পের মধ্যে আছে হালকা প্রকৌশলসহ বেশকিছু আমদানি বিকল্প শিল্প। ধরনের জায়গাগুলো রি-স্ট্রাকচার করতে আমরা শুরু করেছি। এফবিসিসিআই স্থানীয় আন্তর্জাতিক সব ক্ষেত্রেই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। এখন ভিন্নভাবে চিন্তা করাই উচিত।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন