করোনাকালে বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে

বদরুল আলম

নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর বিশ্ব বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে আসে, যার প্রভাবে একে একে ক্রয়াদেশ হারাতে থাকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত। তবে দুর্যোগকালেও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি বেড়েছে। তবে তা করোনা সংকট শুরুর আগের ক্রয়াদেশের পণ্যের চালান বলে জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

গত জুন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের অধীনস্থ অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলসের (ওটিইএক্সএ) এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে দেশটিতে পোশাক আমদানি বেড়েছে দশমিক ১৩ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে দেশটিতে পোশাকের মোট আমদানি হয় ২০৭ কোটি ৪৫ লাখ ৩৬ হাজার ডলার। ২০১৯ সালের একই সময়ে আমদানির পরিমাণ ছিল ২০৩ কোটি ১২ লাখ ৮৯ হাজার ডলার।

বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি বাড়লেও চীন, ভারত ভিয়েতনাম থেকে আমদানি কমেছে বলে দেখানো হয়েছে ওটিইএক্সএর ওই পরিসংখ্যানে। পোশাক পণ্য আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান উৎস দেশ চীন। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল চার মাসে যুক্তরাষ্ট্রে চীন থেকে পোশাক আমদানি কমেছে ৪৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এছাড়া ভিয়েতনাম থেকে দশমিক শতাংশ এবং ভারত থেকে ১৩ দশমিক শূন্য শতাংশ পোশাক আমদানি কমেছে ওই সময়। ইন্দোনেশিয়া ফিলিপাইন থেকে পোশাক আমদানি কমেছে যথাক্রমে দশমিক ৬৬ ২৯ দশমিক ২৭ শতাংশ। তবে কম্বোডিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাকের আমদানি ১৬ দশমিক ৯২ শতাংশ বেড়েছে সময়।

বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি . রুবানা হক বলেন, এটা সঠিক যে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানির তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারি থেকে এপ্রিলে বাংলাদেশ থেকে দেশটিতে আমদানি বেড়েছে দশমিক ১৩ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের এপ্রিলের তথ্যটা বাংলাদেশের করা আগের মাসের রফতানির। শুধু মার্চে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক ২০ শতাংশ। মার্চেই বাংলাদেশে কভিড-১৯-এর প্রভাব শুরু হয়। চীন, ভিয়েতনামে ততদিনে প্রভাব পড়েছে। হয়তো সেই কারণেই এপ্রিলে ভিয়েতনামের চেয়ে বাংলাদেশ ভালো করেছে। যাই হোক শুধু মার্চ এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানির তথ্যে বাংলাদেশের বিপদ ফুটে উঠছে। কারণ একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের রফতানির বৃহত্তম বাজার। সম্প্রতি দেশটির সিভিল আনরেস্ট অনিশ্চয়তা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

পোশাক খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি পরিসংখ্যান জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের সময়ের হলেও সংশ্লিষ্ট ক্রয়াদেশগুলো আগের। পরিসংখ্যান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তারা বলছেন, বাংলাদেশে এপ্রিল থেকে অবরুদ্ধ পরিস্থিতি শুরু হয়। আর মার্চ পর্যন্তও বহির্বিশ্বে পোশাক রফতানির স্বাভাবিক গতি কম-বেশি বজায় ছিল। ফলে করোনা প্রাদুর্ভাবের প্রভাব আরো পরিষ্কার হবে এপ্রিল-পরবর্তী পরিসংখ্যানে।

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, সম্প্রতি শুনেছি বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি কমেছে শতাংশ। কিন্তু শতাংশ বেড়েছে এমন তথ্যের বিষয়টি পরিষ্কার না। সংশ্লিষ্ট ক্রয়াদেশগুলো হয়তো আগের। তাছাড়া এপ্রিলে বাংলাদেশে লকডাউন শুরু হয়। মার্চ পর্যন্ত রফতানি হয়েছে বাংলাদেশ থেকে।

ওটিইএক্সএর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমদানীকৃত গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের মধ্যে শার্ট ট্রাউজারের পাশাপাশি আরো রয়েছে কটন ড্রেস, স্ল্যাকস, কটন আন্ডারওয়্যার সোয়েটার। চলতি বছরের আলোচ্য চার মাসে বাংলাদেশ থেকে আমদানি বেড়েছে এমন পণ্যগুলোর মধ্যে আছে কটন ড্রেসেস, নিট শার্ট, কটন শিটস, কটন নাইটওয়্যার, ড্রেস গাউন, কটন সোয়েটার। যদিও বড় পরিমাণে রফতানি হয় এমন বেশির ভাগ পণ্যেরই আমদানি কমেছে, যেমন নন নিট শার্ট, কটন ট্রাউজার, স্ল্যাকস।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, জানুয়ারি থেকে এপ্রিল এটা যুক্তরাষ্ট্রের হিসাবে। আমাদের জন্য সময়টার হিসাব হবে ডিসেম্বর থেকে মার্চ। জানুয়ারির তারিখে শিপমেন্ট করা পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাবে ৩৫ থেকে

২৭ দিন পর, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির আগে পণ্য পৌঁছানোর কোনো সুযোগই নেই। আমাদের এখানে ডিসেম্বর থেকে মার্চ সময়টাতে রফতানি স্বাভাবিকই ছিল। ফলে শতাংশ বেড়েছে পোশাক রফতানি। অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে ভিয়েতনামের পরিসংখ্যানটি। ভিয়েতনাম আমদানির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাজার। তাই ওই পরিসংখ্যানটি অস্বাভাবিক ঠেকছে।

একই মত প্রকাশ করেন বিকেএমইএর বর্তমান প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের যে পরিসংখ্যান, তা মূলত স্বাভাবিক সময়ে হওয়া রফতানির প্রতিফলন। সেই হিসেবে শতাংশ প্রবৃদ্ধিও খুব বেশি না। মার্কিন বাজারে অনেক ক্রেতাই দুরবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন