জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ড

করোনা আতঙ্ক ছাপিয়ে বিশ্বজুড়ে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ

বণিক বার্তা ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায় পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার দুই সপ্তাহ পেরোতে চলেছে। কৃষ্ণাঙ্গ ফ্লয়েডের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে দেশটিতে বর্ণবাদবিরোধী পুরনো ক্ষোভ যেন নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। করোনা মহামারীর মৃত্যু আতঙ্ক, পুলিশের কঠোর অবস্থান, কারফিউ উপেক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে চলছে টানা বিক্ষোভ সহিংসতা। বিক্ষোভের ঢেউ আটলান্টিক প্রশান্ত মহাসাগর পেরিয়ে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বিশ্বে। গতকাল ইউরোপের লন্ডন, প্যারিস, আমস্টারডাম থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ফ্লয়েড হত্যা কাঠামোগত বর্ণবাদের বিরুদ্ধে হাজারো মানুষ পথে নেমে বিক্ষোভ করেছে। করোনা মহামারীর মধ্যে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বাধ্যবাধকতা উপেক্ষা করে এসব বিক্ষোভ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকারকে ভাবিয়ে তুলেছে। বেড়েছে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা। খবর এএফপি বিবিসি।

যুক্তরাজ্যের লন্ডনে গতকাল পার্লামেন্ট হাউজের সামনে জড়ো হয়ে হাজারো মানুষ বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেয়। ব্ল্যাক লাইভস মেটার স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে টেমসের দুই পাড়। বিক্ষোভ হয়েছে লন্ডনের মার্কিন দূতাবানের সামনেও। সময় হাজারো মানুষ সামাজিক দূরত্বের বাধ্যবাধকতা উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে বিক্ষোভকারীদের ওপর মার্কিন নিরাপত্তা বাহিনীর বর্বরতার প্রতিবাদে শামিল হয়।

বিষয়ে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, মানুষের ক্ষোভের জায়গাটা আমি উপলব্ধি করতে পারছি। তবে এটাও ভুলে গেলে চলবে না যে আমরা নজিরবিহীন স্বাস্থ্যগত সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। চলমান মহামারীতে সামাজিক দূরত্ব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সবচেয়ে জরুরি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোটা মুহূর্তে বড় চ্যালেঞ্জ।

মহামারীর সময় ছয়জনের বেশি এক জায়গায় জড়ো না হওয়ার সরকারি বিধিনিষেধের কথা মনে করিয়ে ম্যাট হ্যানকক বলেন, যেকোনো মূল্যে আমাদের করোনার বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ে জয়ী হতে হবে।

এদিকে গতকাল সকালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে মার্কিন দূতাবাসের সামনে আয়োজিত একটি বিক্ষোভ মিছিল শেষ মুহূর্তে বাতিল করে দিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আইফেল টাওয়ার অভিমুখে একটি মিছিল পথেই আটকে দেয়া হয়েছে। ফরাসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংঘটিত হয়ে যথাযথ অনুমতি ছাড়াই এসব বিক্ষোভ আয়োজন করা হয়েছিল। আর করোনা মহামারীর সময় একসঙ্গে অনেক মানুষের জমায়েতে সরকারি বিধিনিষেধ আরোপ রয়েছে। এসব কারণে বিক্ষোভ মিছিল করতে দেয়া হয়নি।

তবে প্যারিসের প্রশাসন ঠেকিয়ে দিলেও ওয়ারশ, লিসবন, আমস্টারডামে ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে পথে নেমে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ করেছে হাজারো মানুষ। বিক্ষোভ হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। মহামারীর সময় ঘরে থাকার সরকারি আদেশ উপেক্ষা করে শহরটিতে মিছিল করেছে অন্তত ১০ হাজার বিক্ষোভকারী। সময় অনেককে আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করতে দেখা যায়। অনেকের মাস্কে লেখাটি ছিল। গত ২৫ মে মার্কিন শ্বেতাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড পুলিশের হাঁটুর নিচে চাপা থাকা অবস্থায় মারা যাওয়ার আগ মুহূর্তে কথাটি বলেছিলেন। সিডনির পাশাপাশি মেলবোর্নসহ অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে গতকাল হাজারো মানুষ কালো পোশাক পরিধান করে পথে নেমে ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে শামিল হয়। বিক্ষোভ হয়েছে কানাডার মন্ট্রিলেও।

এদিকে টানা দুই সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভে উত্তাল রয়েছে পুরো যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন থেকে শিকাগো, নিউইয়র্ক থেকে ক্যালিফোর্নিয়া বিক্ষোভ হয়েছে সর্বত্র। গতকাল ওয়াশিংটনে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেয় প্রায় ১০ হাজার মানুষ। সময় ওয়াশিংটনের মেয়র ম্যুরিয়েল বউসি হোয়াইট হাউজের বাইরে একটি চত্বরের নাম ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার প্লাজা ঘোষণা করেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো আরোপিত কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভ হয়েছে নিউইয়র্কে। সময় হাজারো বিক্ষোভকারী ফ্লয়েড হত্যা, কাঠামোগত বর্ণবাদ, সামাজিক বিভাজন এবং এসব নিরসনে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। তবে বরাবরের মতো বিক্ষোভ নিরসনে আরো কঠোর উদ্যোগ নেয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন