করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা পাচ্ছে না যবিপ্রবি

আব্দুল কাদের যশোর

উপযুক্ত পরীক্ষাগার জনবল না থাকায় দেশের অনেক স্থানে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তকরণে নমুনা পরীক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতির মাঝে সব সুবিধা যুক্ত থাকার পরও করোনা শনাক্তকরণে পর্যাপ্ত নমুনা পাচ্ছে না যশোর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) এতে বন্ধ হওয়ার উপক্রম বিশ্ববিদ্যালয়টির জিনোম সেন্টারের করোনা শনাক্তকরণ কার্যক্রম। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, স্বাস্থ্য কর্মকর্তারাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠাচ্ছেন না।

যবিপ্রবি জিনোম সেন্টার সূত্রে জানা গেছে, নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তে রাজধানীর বাইরে শুরুর দিকে যেসব স্থানে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয় যবিপ্রবি তার একটি। ১১ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টারের পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষার অনুমতি দেয়া হয়। এরপর ১৭ এপ্রিল থেকে পর্যন্ত পরীক্ষাগারটিতে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলার দুই হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এসব পরীক্ষায় করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে প্রায় ৩০০ জনের। পরীক্ষাগারে ৯৬টি নমুনা একবারে পিসিআর মেশিনে দেয়ার সুযোগ রয়েছে। অথচ গত ১৪ মে থেকে পরীক্ষাগারে ৩৩টির বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, যবিপ্রবি সরাসরি নমুনা সংগ্রহ করে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো নমুনাই এর জিনোম সেন্টারে পরীক্ষা করা হয়। নমুনা পাঠানো হচ্ছে না বলেই ল্যাবে পরীক্ষাও কমে গেছে। এমনকি যশোর থেকে সংগ্রহ করা নমুনার এক-তৃতীয়াংশ দেয়া হচ্ছে যবিপ্রবির জিনোম সেন্টারে। আর দুই-তৃতীয়াংশ পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে খুলনা মেডিকেল কলেজের ল্যাবে। গত ১৫ মের পর থেকে আশপাশের জেলা থেকে সংগৃহীত কোনো নমুনাই যবিপ্রবিতে পাঠানো হয়নি।

বিষয়ে যবিপ্রবি অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক . ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন, ১৮, ২৫, ২২টা করে নমুনা পেলে ল্যাব চালানো দুরূহ। কারণ ৯৬টি নমুনা পরীক্ষার জন্যও যে সময় শ্রম ব্যয় হয়, কম সংখ্যক নমুনার ক্ষেত্রেও তাই হয়। কম নমুনা পরীক্ষা করে ওই প্লেট দ্বিতীয়বার পরীক্ষার কাজে ব্যবহারের সুযোগও নেই। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পর্যাপ্ত নমুনা পাঠানো না হলে শিগগিরই কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে হবে।

জানতে চাইলে যশোরের জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, তাদের কোনো কোয়ারি থাকলে ডিজি অফিসে (স্বাস্থ্য) জানাবে। আমার একাধিক অপশন আছে। আমি যেকোনো ল্যাবে নমুনা পাঠাতে পারি। তবে যবিপ্রবি ল্যাবে অনেক বেশি পজেটিভ রেজাল্ট আসছে। সেই তুলনায় খুলনা ল্যাবে পজেটিভ রেজাল্ট আসার হার অনেক কম। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক . মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের নমুনা পরীক্ষার ফল নিয়ে আমি যথেষ্ট কনফিডেন্ট। এখন পর্যন্ত পুরোপুরি স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে আমরা নমুনা পরীক্ষার কাজ করছি। এজন্য আমরা কোনো টাকা পাই না। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে শুধু কিট সরবরাহ করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় যদি খরচ বহন করে তো ভালো; না হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই খরচ বহন করতে হবে। স্বল্প সংখ্যক নমুনা পরীক্ষার পেছনে অনেক টাকা খরচ হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও জবাবদিহি করতে হবে।

তিনি বলেন, নমুনা পরীক্ষা আমাদের কাজ না। আমরা গবেষণা করি, শিক্ষার্থীদের পড়াই, নিজেরা জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করি। জাতীয় স্বার্থে করোনার নমুনা পরীক্ষার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে হাত দিয়েছিলাম। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগ সহযোগিতা না করলে নমুনা পরীক্ষা বন্ধ করে দিতে হবে।

নভেল করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটির সভাপতি যশোর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ বলেন, আমি বিষয়ে খোঁজ নেব।

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন