মহামারীতে সম্পদ আরো বেড়েছে মার্কিন বিলিয়নেয়ারদের!

বণিক বার্তা ডেস্ক

গত তিনটি মাস যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে এসেছে মহাবিপর্যয়। ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে নাগরিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে দেশটির সরকার। সময়টা আমেরিকান অর্থনীতির জন্য খারাপ কাটলেও বিলিয়নেয়ারদের জন্য নয়! গত ১৮ মার্চের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিলিয়নেয়ারদের সম্পদ বেড়েছে ৫৬৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

দ্য ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজ (আইপিএস) এক সমীক্ষার প্রতিবেদনে জানায়, এ মুহূর্তে বিলিয়নেয়ারদের মোট সম্পদ ৩ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার, যা মহামারী শুরুর সময়ের চেয়ে ১৯ শতাংশ বেশি। ১৮ মার্চের পর থেকে অ্যামাজন বস জেফ বেজোসের একারই সম্পদ বেড়েছে ৩৬ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার।

অথচ ১৮ মার্চের পর থেকে অন্তত ৪ কোটি ৩০ লাখ আমেরিকান বেকার ভাতা পেতে সরকারের কাছে আবেদন করেছেন। করোনাভাইরাসের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ট্রাভেল ও সেবাখাতের নিম্ন আয়ের মানুষজন।

এই তথ্যগুলো যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের মধ্যে সম্পদের বিস্তার ফারাকের বেদনাদায়ক চিত্র তুলে ধরছে, যা কিনা চলমান অস্থিরতায় আরো রসদ জোগাতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহামারীর কারণে ধনী ও গরীবের মধ্যে সম্পদের তফাত আরো বেড়েছে। 

ধনীদের সম্পদ বৃদ্ধির পেছনে টনিক হিসেবে কাজ করেছে শেয়ারবাজারের চাঙ্গা অবস্থা। সম্প্রতি ফেডারেল রিজার্ভের সহযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে প্রাণ ফিরেছে। ফেডারেল রিজার্ভ কর্তৃক সুদের হার শূন্যে নামিয়ে আনা এবং প্রচুর পরিমাণে বন্ড কেনার প্রতিশ্রুতি আসার পরই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ স্টকমার্কেট সহসাই হয়ে পড়ে আকর্ষণীয়। এর পুরো সুফল তুলে নিয়েছে ধনীরা। ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ইনভেসকোর প্রধান গ্লোবাল মার্কেট স্ট্র্যাটেজিস্ট ক্রিস্টিনা হুপার বলেন, ‘শেয়ারবাজার উড়ছে এবং প্রকৃত অর্থনীতির সঙ্গে এর যোগও কম, এটাই বৈষম্য বাড়াচ্ছে।’

প্রযুক্তিখাতের বড় কোম্পানিগুলোই শেয়ারবাজার থেকে বেশি সুবিধা নিয়েছে। মহামারীর সময় তারা সংগ্রাম না করে উল্টো সমৃদ্ধশালী হয়েছে। এ সময় অ্যামাজন যেন আরো বেশি আকাঙ্খিত হয়ে ওঠে। কোম্পানিটির শেয়ারের দাম মধ্য মার্চের চেয়ে ৪৭ শতাংশ বেড়েছে। উল্লম্ফন ঘটেছে ফেসবুকেরও। কোম্পানিটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মার্ক জাকারবার্গের সম্পদ ১৮ মার্চের পর বেড়েছে ৩০ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। 

ফোর্বসের গ্লোবাল বিলিয়নেয়ার তালিকা থেকে তথ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিলিয়নেয়ারদের বর্তমান চিত্রটা তুলে ধরেছে আইপিএস। তারা ১৮ মার্চ থেকে শুরু করেছে, কারণ ফোর্বস এই ১৮ মার্চ পর্যন্ত তথ্য নিয়েই ২০২০ সালের বিলিয়নেয়ারদের তালিকা তৈরি করেছিল। পাশাপাশি এই সময় থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও তাদের অঙ্গরাজ্যগুলো স্বাস্থ্য বিধি আরোপ করেছে।

অ্যামাজন, ফেসবুক ছাড়া আরো কিছু প্রযুক্তি কোম্পানি মাঝের এই তিন মাস সম্পদ বাড়িয়েছে। টিএসএলএ বস ইলন মাস্ক, গুগল প্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিন ও ল্যারি পেজ এবং মাইক্রোসফটের সাবেক সিইও স্টিভ বলমাররা প্রত্যেকেই ১৮ মার্চের পর ১৩ বিলিয়নের বেশি সম্পদ আহরণ করেছেন।

শুক্রবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে আরো ৮০ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। সব মিলিয়ে, এই মহামারীতে চাকরি গেছে ২ কোটি ৮৫ লাখ মানুষের, যা কিনা অর্থনৈতিক মহামন্দার সময়ের তিনগুণেরও বেশি। এছাড়া বেকারত্বও ২০ শতাংশে পৌঁছবে, যা মহামন্দার সময়ের চেয়েও বেশি।

আইপিআই রিপোর্টের (ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউট) সহযোগী লেখক চাক কলিনস বলেন, ‘বিলিয়নেয়ারদের সম্পদ ও ধুকতে থাকা মানুষের চিত্র পাশাপাশি স্থাপন করলে আমরা সামনের দিনগুলোতে ঐক্যবদ্ধভাবে যুক্তরাষ্ট্র গড়তে যে সংহতির প্রয়োজন তা দেখতে পাই না।’

সিএনএন ও ফোর্বস অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন