ইউরোপে কর্মস্থলে ফিরছেন বাংলাদেশীরা

বিশেষ ফ্লাইটে দেশ ছাড়ছেন তারা

মনজুরুল ইসলাম

কভিড-১৯-এর ভয়াবহতা কাটিয়ে উঠেছে ইউরোপ। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ধীরে ধীরে লকডাউন শিথিল করছে অঞ্চলটির বিভিন্ন দেশ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু হচ্ছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। ফলে বাংলাদেশীরাও ফিরতে শুরু করেছেন ইউরোপের কর্মস্থলে।

গত জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ইতালি থেকে দেশে ফেরেন প্রায় তিন হাজার প্রবাসী বাংলাদেশী। দেশটিতে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই মূলত দেশে ফেরেন তারা। তবে সম্প্রতি ইতালিতে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ফিরে যেতে চাইলেও আকাশপথে যোগাযোগ বন্ধ থাকায় সেটা সম্ভব হচ্ছে না। অবস্থায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় কিছুসংখ্যক প্রবাসীকে ইতালিতে পাঠাতে বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছে ইতালিতে বাংলাদেশ দূতাবাস।

এরই মধ্যে ঢাকায় আটকে পড়া ইতালিপ্রবাসী বাংলাদেশীদের নিয়ে একটি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পেয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। বিশেষ ফ্লাইটে শুধু ইতালির বৈধ কাগজধারী ২৬৫ জন যাত্রী ফিরে যেতে পারবেন। বাংলাদেশের ইতালি দূতাবাসের সহায়তায় ফ্লাইটটি পরিচালনার অনুমতি দেয়া হয়েছে। ১২ জুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে রোমের ফিউমিচিনো বিমানবন্দরের উদ্দেশে ফ্লাইটটি যাওয়ার কথা রয়েছে।

ইতালিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত আব্দুস সোবাহান সিকদার জানান, নিয়মিত ফ্লাইট বন্ধ থাকায় কয়েক হাজার প্রবাসী বাংলাদেশ থেকে ইতালি ফিরতে পারছেন না। এসব প্রবাসীর কথা মাথায় রেখে আমরা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ইতালির প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। পরবর্তী সময়ে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পাওয়া গেছে।

এদিকে দেশে এসে আটকে পড়া ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী বাংলাদেশীদের যুক্তরাজ্যে ফেরাতে ১৩ জুন একটি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। এয়ারলাইনস সূত্রে জানা গেছে, ওই ফ্লাইটে যুক্তরাজ্যে ফিরতে ইচ্ছুক যাত্রীদের অবশ্যই নিয়ম অনুযায়ী কভিড-১৯ মুক্ত হতে হবে। যাত্রী বাছাইসহ পুরো প্রক্রিয়া বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ যুক্তরাজ্য হাইকমিশনের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হবে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে জানান, বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইট ১২ জুন ইতালির রোমে যাবে। ওই ফ্লাইটের ২৬৫ জন যাত্রীর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া ১৩ জুন ঢাকা থেকে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে আরেকটি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। উভয় ফ্লাইটের যাত্রীদের ঢাকা, চট্টগ্রাম সিলেটে অবস্থিত বিমানের নির্ধারিত অফিসে যোগাযোগ করে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে।

এর আগে বাংলাদেশে অবস্থানরত ব্রিটিশ নাগরিকদের দেশে ফেরাতে তিন দফায় ১২টি বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করে যুক্তরাজ্য। প্রথম দফায় ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের চারটি বিশেষ ফ্লাইটে বাংলাদেশ থেকে লন্ডন গেছেন ব্রিটিশ নাগরিকরা। গত ২১, ২৩, ২৫ ২৬ এপ্রিল চারটি ফ্লাইট ঢাকা থেকে লন্ডনে যায়। পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় দফায় পাঁচটি বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হয়। দ্বিতীয় দফার প্রথম ফ্লাইট গত ২৯ এপ্রিল সিলেট থেকে ঢাকা হয়ে লন্ডন যায়। মে সিলেট থেকে ঢাকা হয়ে লন্ডন যায় দ্বিতীয় ফ্লাইট। মে ঢাকা থেকে লন্ডন যায় তৃতীয় ফ্লাইট। মে সিলেট থেকে ঢাকা হয়ে লন্ডন যায় চতুর্থ ফ্লাইট। আর মে সিলেট থেকে ঢাকা হয়ে লন্ডন যায় পঞ্চম ফ্লাইট। সর্বশেষ তৃতীয় দফায় গত ২০, ২৬ ৩১ মে বিশেষ ফ্লাইট ঢাকা থেকে লন্ডনের উদ্দেশে যায়। ওই তিনটি ফ্লাইটে প্রায় ৯০০ ব্রিটিশ নাগরিক যুক্তরাজ্যে যান।

পুলিশ বিশেষ শাখার তথ্য অনুযায়ী, নিয়মিত ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার আগে তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে জানুয়ারি মাস থেকে দেশে আসেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ যাত্রী। যার উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ইউরোপের দেশগুলো থেকে আসা প্রবাসী বাংলাদেশী।

প্রসঙ্গত, গত জুন থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চলাচল চালুর অনুমতি দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) তবে আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রী পরিবহনের (শিডিউল পেসেঞ্জার ফ্লাইট) ক্ষেত্রে বিমান চলাচল নিষেধাজ্ঞা ১৫ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হযেছে। নিষেধাজ্ঞা আগের মতো বাহরাইন, ভুটান, হংকং, ভারত, কুয়েত, মালয়েশিয়ামালদ্বীপনেপাল, ওমান, কাতার, সৌদি আরব, শ্রীলংকা, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, ইউএই, ইউকের সঙ্গে বিদ্যমান বিমান চলাচল রুটের ক্ষেত্রে কার্যকর।

এর আগে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে প্রথম দফায় ২১ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত যুক্তরাজ্য, চীন, হংকং, থাইল্যান্ড ছাড়া সব দেশের সঙ্গে যাত্রীবাহী সব বিমান সংস্থার ফ্লাইট চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল বেবিচক। এরপর আরেকটি আদেশে এই সময়সীমা আরো সাতদিন বাড়িয়ে চীন বাদে সব দেশের সঙ্গে এপ্রিল পর্যন্ত বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। নিষেধাজ্ঞা পর্যায়ক্রমে ১৪ এপ্রিল, ৩০ এপ্রিল, মে, ১৬ মে ৩০ মে পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন