আপনি কি জাঙ্কফুড খেতে খুব পছন্দ করেন? একটি বই হাতে কিংবা ল্যাপটপে পছন্দের কোনো সিনেমা ছেড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শুয়ে-বসে কাটিয়ে দিতে পারেন? আজ করব, কাল করব করে কি আপনার ব্যায়াম করা আর হয়েই উঠছে না? আপনার শরীরের ওজন কি দিন দিন বাড়তির দিকে? ওপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হয়, তবে এখনই সতর্ক হয়ে যান। কারণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলমান করোনা মহামারীতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে স্থূলকায় মানুষ।
স্থূলতার সমস্যা করোনা মহামারীর আগে থেকেই ছিল। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বারবার বলে এসেছেন, বাড়তি খাওয়া, শারীরিক পরিশ্রম না করা, ব্যায়ামে অনীহা, অলসতা, জাঙ্কফুডের প্রতি আসক্তি বিশ্বজুড়ে মানুষদের ক্রমশ স্থূল করে তুলছে। বিশেষত পশ্চিমা দেশগুলোয় এ সমস্যা প্রকট। এতে মানুষের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমছে। স্থূল ব্যক্তিরা সহজেই আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন অসুখে।
করোনাকালে এ সমস্যা যেন আরো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। একটু চিন্তা করুন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে কোন দেশগুলোয় সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে? সহজেই যে কেউ বলবে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো। এর পেছনে স্থূলতা অন্যতম একটি প্রভাবক বলে মনে করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ৪০ শতাংশ মানুষ স্থূল। যুক্তরাজ্যে এর পরিমাণ ৩০ শতাংশ। দুটো দেশেই করোনায় মৃত্যু রেকর্ড ছুঁয়েছে। ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল কাউন্সিল জানাচ্ছে, ইউরোপের পাঁচটি দেশে (ইতালি, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস) করোনায় আক্রান্ত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পৌঁছে যাওয়া ৭৩ শতাংশ মানুষ স্থূল।
ওয়ার্ল্ড ওবেসিটি ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট জন উইল্ডিং সরাসরি বলেছেন, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর স্থূল মানুষের মৃত্যুর সম্ভাবনা দ্বিগুণ হয়ে যায়। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের তথ্য বিশ্লেষণ করে তিনি আরো বলেন, যারা স্থূল এবং যাদের বডি মাস ইনডেক্স বা বিএমআই ঠিক নেই, তারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে বেশি মারা যাচ্ছে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটির অব নর্থ ক্যারোলাইনার চ্যাপেল হিল স্কুল অব পাবলিক হেলথের পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বেরি পপকিন বলেন, স্থূলতা রোগ প্রতিরোধক্ষমতার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। এটি মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দ্রুত কমিয়ে দেয়। ফলে শুধু করোনা নয়, যেকোনো ভাইরাস দ্বারা সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়।
আর এজন্যই বিশ্বজুড়ে বিশেষজ্ঞরা সুষম খাবার গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম করার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। এতে একদিকে যেমন শরীর সুস্থ থাকবে, অন্যদিকে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে আসবে। বাড়বে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা। তেমনি লকডাউনে ঘরবন্দি জীবনে ভালো থাকবে মানসিক স্বাস্থ্য।
দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে