লকডাইন ও পঙ্গপালের প্রাদুর্ভাব

বড় ধাক্কা খেতে পারে ভারতের তুলা উৎপাদন

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ভারতে দীর্ঘদিন ধরে চলছে লকডাউন। লকডাউনে দেশটির কৃষি ব্যবস্থা এমনিতেই বেহাল। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে মরু পঙ্গপালের আক্রমণ। এপ্রিলের প্রথমে দেশটিতে পঙ্গপালের আক্রমণ শুরু হয়। পরিস্থিতিতে ভারতের কৃষি খাতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। বিশেষত চলতি বছরের শেষের দিকে দেশটিতে গত দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পঙ্গপালের আক্রমণ ঘটতে পারে বলে জানিয়েছে ভারতের পঙ্গপাল সতর্কীকরণ সংস্থা (এলডব্লিউও) এতে তুলাসহ দেশটির রবিশস্যেরও বেশ ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। সম্ভাব্য পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সম্প্রতি কটন অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (সিএআই) দেশটির তুলা উৎপাদনে প্রাক্কলন কমিয়ে এনেছে। খবর বিজনেস লাইন ইকোনমিক টাইমস।

ভারতে প্রতি বছর অক্টোবরে তুলার নতুন মৌসুম শুরু হয়, যা শেষ হয় পরের বছরের সেপ্টেম্বরে। সিএআইর আগের প্রাক্কলনে বলা হয়েছিল, চলতি ২০১৯-২০ মৌসুমে দেশটিতে সব মিলিয়ে কোটি ৫৪ লাখ বেল (প্রতি বেলে ১৭০ কেজি) তুলা উৎপাদন হতে পারে। তবে সর্বশেষ প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ মহারাষ্ট্রের কয়েকটি অংশের বেশ কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে পঙ্গপালের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। এর মধ্যে শুধু রাজস্থানের ২০টি জেলার ৯০ হাজার হেক্টর জমি বর্তমানে এদের দখলে রয়েছে। পরিস্থিতিতে চলতি মৌসুমে দেশটিতে কৃষিপণ্যটির উৎপাদন কমে কোটি ৩০ লাখ বেলে নামতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অর্থাৎ আগের মাসের প্রাক্কলনের তুলনায় দেশটিতে পণ্যটির উৎপাদন পূর্বাভাস কমেছে ২৪ লাখ বেল।


সিআইএর নোটে বলা হয়েছে, মহারাষ্ট্র এর আশপাশের কয়েকটি অঞ্চলে এরই মধ্যে অনেক তুলা গাছ প্রায় ধ্বংস করে ফেলেছে পঙ্গপালের দল। বিশেষত উত্তর পশ্চিম রাজস্থানের পরিস্থিতি বেশ খারাপ। ভারতে সাধারণত পঙ্গপালের মৌসুম চলে জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত। এদিকে দেশটিতে তুলার উৎপাদন মৌসুম চলে সাধারণত আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। অন্যদিকে বছরে দেশটিতে তুলনামূলক হালকা গ্রীষ্মকাল বিরাজ করছে। দেশটির উত্তর পশ্চিমাংশে মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে কয়েক দফা বৃষ্টিপাত হয়ে গেছে। ধরনের আবহাওয়া পঙ্গপালের বংশবৃদ্ধিতে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারে। সময়ে দেশটিতে খরিফ শস্যের মৌসুম চলে। খরিফ শস্যের মধ্যে ভারতে ধান, ভুট্টা, জোয়ার, বাজরা, তুলা, আখ, চীনাবাদাম, ডাল প্রভৃতি উৎপাদন হয়। ফলে চলতি বর্ষায় মরু পতঙ্গের বংশ বিস্তার আরো বেড়ে গেলে দেশটির তুলাসহ কৃষি খাতের জন্য তা মারত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

তুলা উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে উত্তর ভারতের রাজ্যগুলো। সিআইএর তথ্য অনুযায়ী, পাঞ্জাব, হারিয়ানা রাজস্থানের তুলার সম্মিলিত উৎপাদন দাঁড়াতে পারে ৬৫ লাখ ২০ হাজার বেল। তবে এখন পর্যন্ত অঞ্চলগুলো থেকে বাজারে এসেছে মোট ৬১ লাখ ৭৩ হাজার বেল তুলা। সে হিসাবে প্রাক্কলনের তুলনায় উত্তর ভারত থেকে লাখ ৪৭ হাজার বেল তুলা কমে এসেছে। এর মধ্যে রাজস্থান থেকে ৩৩ লাখ ৩৭ হাজার বেল তুলা আসার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ৩২ লাখ ১১ হাজার বেল তুলা বাজারে এসছে বলে ধারণা করছে প্রতিষ্ঠানটি। অর্থাৎ প্রাক্কলনের তুলনায় রাজস্থান থেকে দেশটির অভ্যন্তরীণ বাজারে কৃষিপণ্যটির আগমন লাখ ২৬ হাজার বেল কমেছে।

তবে চলমান লকডাউন পঙ্গপালের আক্রমণকে পাশ কাটিয়ে চলতি মৌসুমে প্রাক্কলনের তুলনায় কমলেও গত মৌসুমের তুলনায় ভারতের তুলা উৎপাদনে চাঙ্গা ভাব বজায় থাকতে পারে। মার্কিন কৃষি বিভাগ ইউএসডিএর তথ্য অনুযায়ী, আবাদি জমি বৃদ্ধি উচ্চফলনের জেরে ২০১৯-২০ বিপণন বর্ষে (আগস্ট-জুন) চীনকে টপকে বিশ্বের শীর্ষ তুলা উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে ভারত। সময়ে দেশটিতে সব মিলিয়ে কোটি ৯৫ লাখ বেল তুলা উৎপাদন হতে পারে, যা আগের বিপণন বর্ষের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি এবং পাঁচ বছরের মধ্যে দেশটিতে পণ্যটির সর্বোচ্চ উৎপাদন। বিলম্বিত বৃষ্টিপাত পিংক বলওয়ার্ম পোকার উপদ্রবের মধ্যেও ভারতে তুলার আবাদি জমি আগের বিপণন বর্ষের তুলনায় দশমিক শতাংশ বেড়ে কোটি ৩০ লাখ হেক্টরে উন্নীত হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। মূলত চলতি মৌসুমে দেশটিতে কৃষিপণ্যটির উৎপাদন বৃদ্ধির পেছনে এটাই মূল প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে।

সিআইএর সভাপতি অতুল ঞ্জারেত্র বলেন, ফসলের জন্য প্রয়োজনীয় পানির আরো সহজলভ্যতার কারণে ভারতের অনেক কৃষক রবি মৌসুমের অন্য ফসল চাষকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। এমনিক তারা মৌসুমের শেষ পর্যন্ত অপক্ষো না করে তুলা গাছ উপড়ে ফেলছেন। এটাও চলতি মৌসুমে প্রতিষ্ঠানটির তুলা উৎপাদন পূর্বাভস কমিয়ে আনার আরেকটি কারণ। তবে ২০১৯-২০ মৌসুমে দেশটিতে পণ্যটির উৎপাদন আগের মৌসুমের তুলনায় ঊর্ধ্বমুখী থাকতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন