বাণিজ্য শুল্ক, নভেল করোনাভাইরাস, হংকং ইস্যুর পর এবার আকাশপথে ক্ষমতা প্রদর্শনের দ্বন্দ্বে মেতেছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। শুরুটা করেছিল চীন। সর্বশেষ পিছু হটার ঘোষণাও তারাই দিল। মাঝখানে ছিল নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞার তোপধ্বনি। এ যুদ্ধ কোথায় গিয়ে থামবে, সেটা ভবিষ্যৎই বলে দেবে। তবে আপাতত জয় হলো যুক্তরাষ্ট্রেরই।
বর্তমানে চীনের চারটি এয়ারলাইনস যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রীবাহী ফ্লাইট পরিচালনা করছে। অথচ তারা মার্কিন এয়ারলাইনসগুলোর চীনে ফ্লাইট পরিচালনার পথ আটকে দিয়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাবের আগে অবশ্য চীনে মার্কিন আকাশসেবা সংস্থাগুলো ফ্লাইট পরিচালনা করত। কিন্তু মহামারী শুরুর পর তা বন্ধ হয়ে যায়।
ভাইরাসটির প্রকোপ কমে যাওয়ায় দেশী এয়ারলাইনসগুলোকে আবার চীনে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে বেইজিং। মার্কিন দুটি আকাশসেবা সংস্থাও ১ জুন থেকে চীনে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু শি জিনপিং প্রশাসন তা দেয়নি। এতে ক্ষেপে যায় ওয়াশিংটন। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে চীনা এয়ারলাইনস কর্তৃক যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রীবাহী ফ্লাইট পরিচালনা নিষিদ্ধ করে ট্রাম্প প্রশাসন। বুধবার জারি করা এক আদেশে বলা হয়, ১৬ জুন থেকে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চাইলে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের সময় আরো এগিয়ে নিতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপের পর বিদেশী এয়ারলাইনস কর্তৃক চীনে ফ্লাইট পরিচালনার বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করেছে বেইজিং। এ সিদ্ধান্ত ৮ জুন থেকে কার্যকর হবে।
গত মার্চে গৃহীত ‘ফাইভ-ওয়ান’
নীতির আওতায় আগামী সোমবার থেকে চীনে সপ্তাহে একটি ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবে বিভিন্ন আকাশসেবা সংস্থা। তবে বিদেশী এয়ারলাইনসগুলোকে এ সুবিধার বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বেইজিং। যদিও গত ১২ মার্চ যেসব বিদেশী এয়ারলাইনসের চীনে যতটি ফ্লাইট পরিচালনার শিডিউল ছিল, ঠিক ততটি ফ্লাইট এখন পরিচালনা করতে পারবে তারা। এক্ষেত্রে মার্কিন আকাশসেবা সংস্থাগুলো এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কারণ করোনার কারণে ১২ মার্চের আগেই চীনমুখী ও চীন থেকে যাত্রীবাহী ফ্লাইটগুলো বাতিল ঘোষণা করেছিল তারা।
চীনের এ কৌশল মেনে নিতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। এ কারণে তারা চীনা এয়ারলাইনসগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রে ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এর প্রতিক্রিয়ায় নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসে চীন এখন জানিয়েছে, বিদেশী এয়ারলাইনসগুলোও এখন থেকে প্রতি সপ্তাহে তাদের দেশে একটি ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবে। সিভিল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব চায়না (সিএএসি) বৃহস্পতিবার এ ঘোষণা দিয়েছে। তবে কোন কোন দেশের এয়ারলাইনসগুলো এ সুবিধা পাবে, সেসব নাম জানায়নি তারা।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানায়, ডেল্টা এয়ারলাইনস ও ইউনাইটেড এয়ারলাইনস হোল্ডিংস পুনরায় চীনে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চাইলেও বেইজিং তাতে কোনো সাড়া দেয়নি। এর মাধ্যমে চীন একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছে বলে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে।
এক বিবৃতিতে মার্কিন পরিবহন মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘১ জুন থেকে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চেয়েছিল ডেল্টা এয়ারলাইনস। কিন্তু তাদের আবেদনে সাড়া না দেয়ার মাধ্যমে চীন সরকার আমাদের মধ্যকার এয়ার ট্রান্সপোর্ট এগ্রিমেন্ট লঙ্ঘন করেছে।’
এছাড়া কবে থেকে মার্কিন এয়ারলাইনসগুলো পুনরায় চীনে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করতে পারবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ জানাতে ব্যর্থ হওয়ায় বেইজিংয়ের কড়া সমালোচনা করেছে ওয়াশিংটন।
এদিকে সিএএসি বলেছে, করোনার ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে এলে বিদেশী এয়ারলাইনসগুলোর জন্য বরাদ্দ ফ্লাইট পরিচালনার কোটা আরো বাড়ানো হতে পারে। অন্যদিকে নিউক্লিক অ্যাসিড টেস্টে কোনো ফ্লাইটের পাঁচজন যাত্রী করোনা পজিটিভ শনাক্ত হলে ওই রুটটি এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ রাখা হবে। আর ১০ জন কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হলে রুটটি চার সপ্তাহের জন্য বন্ধ করে দেয়া হবে।