ঈদ শেষেও বোনাসের অপেক্ষায় অনেক শ্রমিক

বদরুল আলম

ঈদের ছুটির আগে শেষ কর্মদিবসে এপ্রিলের আংশিক বেতন পেয়েছিলেন আশুলিয়া এলাকার একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক নাসিমা বেগম। আর্থিক দুরবস্থার অজুহাতে মালিকপক্ষ বোনাস দেয়নি। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ঈদের ছুটি শেষে কাজে যোগদান করলে মে মাসের বেতন পরিশোধের সময় ঈদ বোনাস বাবদ কিছু টাকা পাবেন। কিন্তু বোনাসের সেই অপেক্ষা শেষ হওয়ার আগে কারখানা কর্তৃপক্ষের আচরণে গত মাসের বেতন পাওয়া নিয়েই শঙ্কা তৈরি হয়েছে নাসিমার। নাসিমার মতো আরো অনেক শ্রমিক বোনাসের অপেক্ষায় আছেন বলে জানিয়েছে শ্রম শিল্পসংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলো।

বস্ত্র পোশাক খাতের দুই সংগঠন বিজিএমইএ বিকেএমইএর সদস্য এবং বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) আওতাভুক্ত চামড়াজাত পণ্য, আসবাব, সেলফোন সংযোজন, ওষুধ সব খাত মিলিয়ে ছয় শিল্প এলাকায় মোট কারখানার সংখ্যা হাজার ৬০২টি। এর মধ্যে হাজার ৩৪৪টি কারখানা ঈদের আগে বোনাস পরিশোধ করেছিল। হিসেবে হাজার ২৫৮টি কারখানা বোনাস পরিশোধ করেনি। গতকাল বিকাল পর্যন্তও কারখানাগুলোর শ্রমিকদের ঈদ বোনাস অপরিশোধিত ছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ঈদের ছুটির শেষে অনেক শ্রমিক কাজে যোগ দিতে পারেননি। বেআইনিভাবে ছাঁটাই এবং আইডি কার্ড রেখে দিয়ে জোরপূর্বক চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদানে শ্রমিকদের বাধ্য করেন অনেক মালিক। আবার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কারণ দেখিয়ে যেসব শ্রমিককে কাজে যোগদান করতে দেয়া হয়নি, তারাসহ অনেক শ্রমিককে মার্চ এপ্রিলের বেতনসহ ঈদ বোনাস দেয়া হয়নি। শ্রমিকরা তাদের মজুরি, ঈদ বোনাস আদৌ পাবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার বণিক বার্তাকে বলেন, ঈদের আগে বেতন-বোনাস পরিশোধ করেনি এমন কারখানার সংখ্যা অনেক। কারখানাগুলোর শ্রমিকরা ছুটি শেষে কাজে যোগদান করতে এসে বিরূপ পরিবেশের সম্মুখীন হচ্ছেন। বেতন-বোনাস পরিশোধ করেনি এমন কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সরকারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে।

ঈদের পর গত ২৭ মে শ্রম কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠায় সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী চলতি মাসের মজুরি পরবর্তী মাসের প্রথম সাত কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধের সময়সীমা থাকলেও মে মাসের ২৪ তারিখ পর্যন্ত শ্রমিকদের মজুরি ঈদুল ফিতরের বোনাস পরিশোধ করা হয়নি। কল-কারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরও বেতন-বোনাস না দেয়া কারখানা মালিকদের বিরুদ্ধে অদ্যাবধি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বেতন-বোনাস অপরিশোধিত রয়েছে এমন কারখানা মালিকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মোকদ্দমা রুজু করতে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধও জানানো হয় চিঠিতে।

এরপর গতকাল জুন শ্রম কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে আবারো একটি চিঠি দিয়েছে সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন। ওই চিঠিতেও বেতন-বোনাস অপরিশোধিত থাকা কারখানা মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়, ঈদের ছুটি শেষে কাজে যোগদান করতে এসে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন কারখানায় ছুটি শেষে কাজে যোগদান করতে না দিয়ে বেআইনিভাবে ছাঁটাই এবং আইডি কার্ড রেখে দিয়ে জোরপূর্বক চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদানে বাধ্য করা হচ্ছে শ্রমিকদের।

শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি, বর্তমানে যেসব কারখানা চালু রাখা হয়েছে, সেসব কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলায় শ্রমিকরা নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। অবস্থায় কারখানাগুলোকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করা, নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শ্রমিকদের কারখানার খরচে চিকিৎসা প্রদান, চিকিৎসাকালীন স্ব-বেতনে ছুটির নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।

কল-কারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বেতন-বোনাস অপরিশোধিত কারখানাগুলোর শ্রমিকদের বিষয়ে আমরা তথ্য সংগ্রহ করেছি। আলোচনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মালিকপক্ষের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন