লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশীকে হত্যা

চার ট্রাভেল এজেন্সিসহ ৩৬ জনকে আসামি করে মামলা

নিহাল হাসনাইন

লিবিয়ায় হত্যাকাণ্ডের শিকার ২৬ বাংলাদেশী গুরুতর আহত আরো ১১ জনকে বাড়তি আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সেদেশে পাঠানোর পেছনে কাজ করেছে চারটি ট্রাভেল এজেন্সি। এসব এজেন্সির হয়ে হতভাগ্য ওই যুবকদের প্রলুব্ধ করেছিল অর্ধশতাধিক দালাল। অনুসন্ধান চালিয়ে দালাল চক্রের সঙ্গে জড়িত হিসেবে বিভিন্ন পেশাজীবীদের পাশাপাশি ব্যবসায়ী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নাম পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এরই ভিত্তিতে চার ট্রাভেল এজেন্সি ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করে মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা করেছে পুলিশের বিশেষায়িত বিভাগটি।

সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, অর্গানাইজড ক্রাইমের হিউম্যান ট্রাফিকিং অ্যান্ড ভাইস স্কোয়াডের উপপুলিশ পরিদর্শক এএইচএম রাশেদ ফজল বাদী হয়ে পল্টন থানায় মামলাটি করেছেন। মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে করা মামলাটিতে চারটি ট্রাভেল এজেন্সিসহ ৩৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরো ৩০-৩৫ জনকে।

মামলার এজাহারের ভাষ্যমতে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মে মাসের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে আসামিরা হতাহতরাসহ আরো অনেককে ইউরোপ পাঠানোর কথা বলে লিবিয়ায় অবৈধভাবে পাচার করেন। এর মধ্যে ২৬ জনকে লিবিয়ায় হত্যা করা হয়েছে, পাশাপাশি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরো ১১ বাংলাদেশী। 

মামলার এজাহারে আসামি হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন তানজিদ, বাচ্চু মিলিটারি, নাজমুল, জোবর আলী, জাফর, স্বপন, মিন্টু মিয়া, হেলাল মিয়া, কামাল উদ্দিন ওরফে হাজী কামাল, আলী হোসেন, সাদ্দাম, কামাল হোসেন, রাশিদা বেগম, নুর হোসেন শেখ, ইমাম হোসেন শেখ, আকবর হোসেন শেখ, বুলু বেগম, জুলহাস সরদার, আমির শেখ, দিনা বেগম, নজরুল মোল্লা, শাহদাত হোসেন, জাহিদুল শেখ, জাকির মাতুব্বর, আমির হোসেন, লিয়াকত শেখ, . রব মোড়ল, কুদ্দুস বয়াতী, নাসির, সজীব মিয়া, রেজাউল বয়াতী, শেখ মো. মাহবুবুর রহমান, শেখ সাহিদুর রহমান, হাজী শহীদ মিয়া, মো. খবি উদ্দিন মুন্নি আক্তার রূপসী।

আসামিদের মধ্যে শেখ মো. মাহবুবুর রহমান শেখ সাহিদুর রহমান গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার মুকুন্দপুরের মৃত আব্দুল মোতালেব শেখের ছেলে। রাজধানীতে দুই ভাইয়ের মালিকানায় নাভীরা লিমিটেড এবং ফ্লাইওভার ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস নামে দুটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়াও তারা এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিতে সক্রিয়। দুটি ট্রাভেল এজেন্সি ছাড়াও পুরানা পল্টনের স্কাই ভিউ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস বাংলামোটরের লালন নামের আরেকটি ট্রাভেল এজেন্সির নাম এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। 

সিআইডির হিউম্যান ট্রাফিকিং অ্যান্ড ভাইস স্কোয়াডের অনুসন্ধান বলছে, ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর মালিকসহ অন্য আসামিরা প্রলোভন দেখিয়ে টাকার বিনিময়ে প্রতারণামূলকভাবে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রুট ব্যবহার করে ভুক্তভোগীদের পাচার করেছে। কিন্তু সেখানে পাঠিয়ে তাদের কম টাকায় কঠিন শ্রমে নিয়োজিত করা হয়েছে।

অর্গানাইজড ক্রাইমের হিউম্যান ট্রাফিকিং অ্যান্ড ভাইস স্কোয়াডের উপপুলিশ পরিদর্শক এএইচএম রাশেদ ফজল জানান, গত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ভুক্তভোগীদের লিবিয়ার বিভিন্ন স্থান থেকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আটকে রাখে। মে মাসের মাঝামাঝি তাদের নিয়ে যাওয়া হয় ত্রিপোলি থেকে ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণের শহর মিজদায়। সেখানে স্থানীয় কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সহযোগিতায় পাচারকৃত হতভাগ্যদের আটকে রাখা হয়। পরে আসামিরা লিবীয় সহযোগীদের মাধ্যমে তাদের ওপর নির্যাতন চালাতে থাকে। সেসব ছবি দেশে স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। মুক্তিপণের টাকা নিয়ে দরকষাকষির মধ্যে কোনো এক সুদানি ভুক্তভোগী আত্মরক্ষার্থে স্থানীয় এক মানবপাচারকারীকে হত্যা করে। ঘটনায় ক্ষুব্ধ নিহত মানবপাচারকারীর স্থানীয় সহযোগীরা গত ২৮ মে আসামিদের সহায়তায় হতভাগ্য পাচারকৃতদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। সময় তাদের গুলিতে জুয়েল, মানিক, আসাদুল, আয়নাল মোল্লা, জুয়েল-, মনির, মনির-, সজীব, ফিরোজ, শামীম, আরফান, রহিম, রাজন, শাকিল, আকাশ, সোহাগ, মো. আলী, সুজন. কামরুল, রকিবুল, লাল চন্দ জাকির হোসেনসহ মোট ২৬ বাংলাদেশী নিহত হন। আহত হন আরো ১১ জন। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন