কারফিউয়ের মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ চলছে

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যেই এক অন্য যুক্তরাষ্ট্রের চিত্র দেখছে বিশ্ববাসী। নিউইয়র্ক থেকে ক্যালিফোর্নিয়া, ওয়াশিংটন থেকে ফ্লোরিডাসবখানেই পথে নেমেছে লাখো মার্কিন। চলছে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ। একই সঙ্গে চলছে লুটতরাজ, সহিংসতা। সহিংস বিক্ষোভ দমনে কঠোর হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন শহরে কঠোর অবস্থান নিয়েছে পুলিশ সেনারা। পথে পথে ঘুরছে সাঁজোয়া যান। জারি করা হয়েছে কারফিউ। তবে এত কিছুর পরও দমেনি ক্ষোভের রেশ। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে কারফিউ ভেঙে রাতের বেলায়ও চলছে বিক্ষোভ। বিক্ষোভের সূত্রপাত, সামাজিক বিভাজনে উৎসাহ দেয়া এবং জনগণের ক্ষোভ নিরসনে ব্যর্থতার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা করা হচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। খবর এএফপি বিবিসি।

ঘটনার সূত্রপাত গত ২৫ মে। মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনেয়াপলিস শহরে প্রকাশ্য দিবালোকে জর্জ ফ্লয়েড নামের একজন আফ্রিকান-আমেরিকান সেখানকার পুলিশের হাতে নিহত হলে বিক্ষোভের সূত্রপাত। পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, শ্বেতাঙ্গ পুলিশ সদস্য ডেরেক চউভিন গ্রেফতারের পর জর্জ ফ্লয়েডকে মাটিতে ফেলে তার ঘাড়ে হাঁটু দিয়ে চেপে রেখেছেন। এতে শ্বাসরোধ হয়ে মারা যান ফ্লয়েড। সময় তিনি পুরোপুরি নিরস্ত্র হাতকড়া পরিহিত ছিলেন।

ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে রাজপথে নেমে ক্ষোভে ফেটে পড়ে মিনেয়াপলিসবাসী। তাত্ক্ষণিকভাবে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত পুলিশ সদস্যদের গ্রেফতার করা হলেও জনতার ক্ষোভ কমানো সম্ভব হয়নি। উল্টো ক্ষোভ বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভে রূপ নেয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো যুক্তরাষ্ট্রে। এরই মধ্যে বিশ্বের অনেক দেশে পথে নেমে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদ করেছে বর্ণবাদবিরোধী লাখো মানুষ।

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে চলমান বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ সহসাই সহিংস হয়ে ওঠে। দেশজুড়ে নজিরবিহীন লুটতরাজ শুরু হয়। অগ্নিসংযোগ করা হয় ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, পুলিশের সাঁজোয়া যান থেকে শুরু করে পেট্রলপাম্পেও। বাদ যায়নি গির্জাও। ভেঙে পড়ে আইন-শৃঙ্খলা। পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা লুটতরাজ বন্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানান ট্রাম্প। জারি করা হয় কারফিউ।

তবে তাতেও পরিস্থিতি খুব একটা বদলায়নি। নিউইয়র্ক থেকে ক্যালিফোর্নিয়াসব বড় শহরেই কারফিউ ভেঙে রাতের বেলা বিক্ষোভ চলছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নিউইয়র্কে প্রথমবারের মতো কারফিউ জারি করা হয়েছে। তবে গত রাতেও ম্যানহাটন ব্রুকলিনে বিক্ষোভ চলেছে। হাজারো তরুণ রাতভর বর্ণবাদবিরোধী স্লোগানে মুখর রেখেছে রাজপথ। তবে নতুন করে আর লুটতরাজের ঘটনা ঘটেনি। অথচ নভেল করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই নিউইয়র্ক শহর। আক্রান্ত মৃতের সংখ্যায় সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে শহরটি। 

পরিস্থিতিতে শহরবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন নিউইয়র্কের মেয়র বিল ডি ব্লাসিও। তিনি বলেন, কারফিউ জারি থাকা সত্ত্বেও অনেকেই রাজপথে বিক্ষোভ করছে। তবে পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেকটাই শান্ত হয়ে এসেছে। মার্কিন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, চলমান উত্তেজনায় নিউইয়র্কে তিনশর বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে মেয়র কন্যাও রয়েছেন।

ওয়াশিংটনে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে হাজারো জনতা বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভে শামিল হয়েছে। বিক্ষোভ হয়েছে হোয়াইট হাউজের সামনেও। পরে মধ্যরাতে পুলিশ টিয়ার শেল ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের রাজপথ থেকে হটিয়ে দেয়। কারফিউ ভেঙে রাতের বেলা বিক্ষোভ চলেছে লস অ্যাঞ্জেলেসে।

হোয়াইট হাউজের সামনে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন জাডা ওয়ালেস। ১৮ বছর বয়সী বিক্ষোভকারী এএফপিকে বলেন, আমি যেকোনো সময় গ্রেফতার হতে পারি। তবুও বিক্ষোভ চালিয়ে যাব। পুলিশ প্রশাসন মিলে যা করছে, সেটা কোনোভাবেই যৌক্তিক ন্যায়বিচার হতে পারে না।

জর্জ ফ্লয়েডের জন্ম শহর হিউস্টনে মঙ্গলবার ৬০ হাজারের বেশি মানুষ সমবেত হয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। সময় ফ্লয়েডের ছয় বছর বয়সী কন্যার মা রক্সি ওয়াশিংটন হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত বিচার দাবি করেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ফ্লয়েড অসম্ভব ভালো একজন মানুষ ছিলেন। ন্যায়বিচার তার প্রাপ্য। তিনি ন্যায়বিচার না পেলে সমাজ থেকে বর্ণবাদের বিষ দূর করা সম্ভব হবে না।

এদিকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে তীব্র সমালোচনার শিকার হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কড়া ভাষায় ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বারাক ওবামা। আগামী নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়তে পারেন ডেমোক্রেটিক নেতা জো বাইডেন।

 তিনি বলেন, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে রণক্ষেত্র বানিয়েছেন। মানুষের মনে ক্ষোভ ভীতি ছড়িয়েছেন। এখন সবাইকে সংঘবদ্ধভাবে বর্ণবাদ প্রশাসনিক ব্যর্থতার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে নিতে হবে।

বর্ণবাদী মনোভাবের সমালোচনা করে পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, বর্ণবাদী চর্চা এবং তা নিরসনে চোখ-কান বন্ধ রাখাকোনোটাই গ্রহণযোগ্য নয়। একই সঙ্গে গ্রহণযোগ্য নয় সমাজে অসমতা সহিংসতা ছড়ানো। কার্যকর উপায়ে বিক্ষোভ দমাতে ব্যর্থতার জন্য ওয়াশিংটনের সমালোচনা করেছেন যুক্তরাজ্য, ইরান, চীন, ফ্রান্স, জার্মানিসহ অনেক দেশের কর্তাব্যক্তিরা।

তবে দেশে-বিদেশে তীব্র সমালোচনার মুখেও কঠোর অবস্থানে অনড় রয়েছেন ট্রাম্প। সর্বশেষ এক টুইটে তিনি বলেন, বিক্ষোভকারীরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করলে গির্জায় আগুন জ্বলত না। পরিস্থিতিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যা করা প্রয়োজন আমি তা- করেছি এবং মানুষ আমার উদ্যোগ পছন্দ করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন