কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা নেই ৩৯টি সরকারি হাসপাতালে

সেন্ট্রাল লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপনে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নিক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী ধারায় পুরো দেশ জেরবার। প্রতিদিন শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে, তার সমান্তরালে দীর্ঘতর হচ্ছে মৃত্যুর মিছিলও। সাধারণত আক্রান্তদের প্রায় ৮০ শতাংশই দেহের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় সেরে ওঠে, যদিও তারা বেশির ভাগই মৃদু মাঝারি উপসর্গের রোগী। তবে কভিড-১৯ শ্বাসতন্ত্রের রোগ হওয়ায় ১৫-২০ শতাংশ রোগী তীব্র শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে উপনীত হয়। সমস্যার প্রাথমিক সমাধান হলো, সময় চাহিদা অনুযায়ী রোগীকে অক্সিজেন সরবরাহ করা। নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলে গুরুতর রোগীদের অধিকাংশই সুস্থ হয়ে ওঠে। অবশ্য রকম ক্ষেত্রে কোনো কোনো রোগীর বেলায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউর প্রয়োজন পড়তে পারে বটে, কিন্তু ঢালাওভাবে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের প্রাণ বাঁচাতে অক্সিজেন সরবরাহের বিকল্প নেই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দাবি, করোনা রোগীদের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করতে কোনো সমস্যা হবে না, অক্সিজেন সিলিন্ডারের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। কিন্তু সমস্যা অন্যত্র। সিলিন্ডারের পর্যাপ্ততা থাকলেও সরকারি অনেক হাসপাতালেই কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। বণিক বার্তায় প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ৩৯টি সরকারি হাসপাতালেই কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা অনুপস্থিত। চিকিৎসাকর্মী রোগী এটিকে বড় সমস্যা হিসেবে দেখছে।

প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের অর্থ হলো, হাসপাতালে একটি নির্দিষ্ট জায়গা থাকবে, যেখান থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করা হবে প্রতিটি রোগীর শয্যায়। কয়েকজন কর্মী থাকবেন, যারা স্টোরেজ চেম্বারে কতটুকু অক্সিজেন আছে, তা পর্যবেক্ষণ করবেন এবং সার্বক্ষণিক সরবরাহ নিশ্চিত করবেন। সিলিন্ডারের সমস্যা হলো, পর্যাপ্ত পরিমাণে সিলিন্ডার মজুদ আছে কিনা এবং সেগুলো ঠিকভাবে পুনর্ভরণ করা হয়েছে কিনা, তা তদারক করতে হয় চিকিৎসক বা নার্সদের। অব্যবস্থাপনা আর জনবলের ঘাটতির কারণে করোনা রোগীদের জন্য নিবেদিত হাসপাতালগুলোয় এটা একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে উঠে এসেছে চিকিৎসকদের ভাষ্যে। সমস্যা রোগী মারা যাওয়ার আশঙ্কাও বাড়িয়ে তুলছে বৈকি। সংশ্লিষ্টদের মত হলো, সিলিন্ডার অক্সিজেন দিয়ে অল্প কিছু ক্ষেত্রে কাজ চালিয়ে নেয়া হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা পর্যাপ্ত নয়। অনেক ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ে, কিন্তু সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। উপরন্তু, কমপ্রেসড অক্সিজেনের চেয়ে লিকুইড অক্সিজেন ব্যবহার করা তুলনামূলক সহজ। জনবল সংকটের বাস্তবতায় এটি আরো বেশি সত্য। শুধু কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা থাকলেই রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব এবং এতে অনেক রোগী বেঁচেও যাবে। কাজেই উল্লিখিত ব্যবস্থাটি কভিড-১৯-এর জন্য নিবেদিত সব হাসপাতালে নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, গণপূর্ত বিভাগ নির্মিত সরকারি হাসপাতালগুলোয় মেডিকেল গ্যাস পাইপলাইন সিস্টেম আছে। অথচ দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা এই যে এসব হাসপাতালের বেশির ভাগেই নেই কোনো সেন্ট্রাল লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক।  ফলে কভিড-১৯ রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে বাড়ছে রোগীদের দুর্ভোগ, বেড়ে চলছে মৃত্যুর সংখ্যাও।

আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়তে থাকায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে চিকিৎসা জনবলের প্রকট সংকট। সিলিন্ডারের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হলে প্রয়োজন হবে আরো বাড়তি জনবল। তাছাড়া এতে তদারকিতে সময়ক্ষেপণও বেশি হবে। সবচেয়ে বড় বিষয়, সিলিন্ডার দিয়ে নিরবিচ্ছন্ন অক্সিজেন সরবরাহ কিছুটা বিঘ্নিত হয়। সুতরাং সংকট মুহূর্তে আমাদের শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থার দিকেই যেতে হবে। নইলে সামনের বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হবে বৈকি।

লক্ষণীয় বিষয়, কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের কাজটি মোটেই কষ্টসাধ্য নয়। প্রায় সব হাসপাতালে যেহেতু মেডিকেল গ্যাস পাইপলাইন সিস্টেম আছে, সেহেতু এটি সম্প্রসারণ করে সেন্ট্রাল লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপন করলেই কাজটি সহজেই সম্পাদন করা যাবে। সুতরাং বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ যথাসম্ভব দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটিই প্রত্যাশা।  

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন