কভিড-১৯-এর চিকিৎসা

কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ নেই ৩৯ সরকারি হাসপাতালে

জেসমিন মলি

কভিড-১৯ রোগের চিকিৎসায় রোগীদের লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের কোনো ব্যবস্থা নেই ৩৯ সরকারি হাসপাতালে। ফলে নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের সিলিন্ডারের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করা হলেও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে চিকিৎসা নিতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগীদের।

সম্প্রতি লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপনের জন্য ন্যাশন্যাল ইলেকট্রো-মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারে একটি চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। চিঠিতে বলা হয়েছে, গণপূর্ত বিভাগ নির্মিত সরকারি হাসপাতালগুলোয় মেডিকেল গ্যাস পাইপলাইন সিস্টেম থাকলেও অধিকাংশ হাসপাতালে লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক নেই। ফলে কভিড-১৯ রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহের জন্য এখনো যেসব হাসপাতালে লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপন করা হয়নি, সেগুলোয় জরুরি ভিত্তিতে লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপনের প্রয়োজনে গ্যাস সিস্টেম লাইন সম্প্রসারণের ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হলো।

৩৯ হাসপাতালের তালিকায় নাম রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেরও। এখানকার করোনা ইউনিটে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের কোনো ব্যবস্থা নেই। আছে শুধু আইসিইউতে। একই অবস্থা শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালেও। সেখানে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহ আছে শুধু আইসিইউ, অপারেশন থিয়েটার ডায়ালাইসিস কেন্দ্রে। মুগদা জেনারেল হাসপাতালে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা থাকলেও সেটি পুরোপুরি কার্যকর নয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিলিন্ডার অক্সিজেন দিয়ে অল্প কিছু ক্ষেত্রে কাজ চালিয়ে নেয়া হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা পর্যাপ্ত নয়। অনেক ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ে, কিন্তু সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। আবার কমপ্রেসড অক্সিজেনের চেয়ে লিকুইড অক্সিজেন ব্যবহার করা তুলনামুলক সহজ। শুধু কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা থাকলেই রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব।

বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মন্ত্রণালয় গঠিত মিডিয়া সেলের ফোকাল পয়েন্ট মো. হাবিবুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের দেশের অধিকাংশ হাসপাতালে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের সুযোগ নেই। যেসব হাসপাতালে লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক এখনো স্থাপন করা হয়নি, সেসব হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে নতুন যেসব হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে, সেখানে শুরু থেকেই যাতে এসব জরুরি বিষয় সংযুক্ত রাখা হয়, সে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

যেসব হাসপাতালে লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ছাড়াও বিশেষায়িত পাঁচটি হাসপাতালের নাম রয়েছে। এর মধ্যে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল শের-- বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কিশোরগঞ্জের সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, টাঙ্গাইলের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কুয়েত মৈত্রী ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল।

তালিকার আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকার সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, কক্সবাজার জেলা হাসপাতাল, গোপালগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, মুন্সীগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, জামালপুর জেলা হাসপাতাল, হবিগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, শেরপুর জেলা হাসপাতাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, সুনামগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, নীলফামারী জেলা হাসপাতাল, বাগেরহাট জেলা হাসপাতাল, বরগুনা জেলা হাসপাতাল, চুয়াডাঙ্গা জেলা হাসপাতাল, ভোলা জেলা হাসপাতাল মাগুরা জেলা হাসপাতাল।

এছাড়া তালিকার বিশেষায়িত পাঁচ হাসপাতালের মধ্যে রয়েছে খুলনার শেখ আবু নাসের স্পেশালাইজড হাসপাাতাল, জাতীয় হূদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতাল।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন