ফের উৎপাদনে যশোরের মৎস হ্যাচারি

করোনায় দুই মাসে ক্ষতি ৫০ কোটি টাকা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি যশোর

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে দুই মাস বন্ধ থাকার পর যশোরের মৎস হ্যাচারিগুলোয় আবারো রেণু পোনা উৎপাদন শুরু হয়েছে। গত সোমবার থেকে এসব হ্যাচারিতে আবার রেণু পোনা উৎপাদন শুরু হয়। হ্যাচারি মালিকরা জানিয়েছেন, ভরা মৌসুমে দুই মাস উৎপাদন বন্ধ থাকায় প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘ সময় লেগে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।

জানা গেছে, প্রতি বছর মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়কে রেণু পোনা উৎপাদনের ভরা মৌসুম ধরা হয়। দেশের মোট চাহিদার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রেণু পোনা যশোর থেকে সরবরাহ করা হয়। বিশেষ করে চাঁচড়া মৎসপল্লীর ৩৪টি হ্যাচারিতে গত বছর প্রায় লাখ ৬০ হাজাুর কেজি রেণু উত্পন্ন হয়। এবার রেণু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দেড় লাখ কেজি। তবে করোনার কারণে জেলার হ্যাচারিগুলোয় ২৮ মার্চ থেকে রেণু পোনা উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হয়।

হ্যাচারি মালিকরা জানান, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে শ্রমিক সংকট, পোনার দাম কমে যাওয়া এবং বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে তারা হ্যাচারিগুলো বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

যশোর জেলা মৎস হ্যাচারি মালিক সমিতির সভাপতি ফাতিমা হ্যাচারির স্বত্বাধিকারী ফিরোজ খান জানান, যশোরে গত বছর আমরা দুই লাখ কেজি রেণু পোনা উৎপাদন করেছিলাম। বছর অর্ধেকে লক্ষ্যমাত্রা নেমে এসেছে। এতে হ্যাচারি মালিকদের ৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। উৎপাদনে গেলেও আমরা বিদ্যুৎ বিল পোনার হরমোন ইনজেকশনের দাম নিয়ে উদ্বিগ্ন। কেননা আগে আমরা বিদ্যুৎ বিল দিতাম কৃষিপণ্য হিসেবে। এখন দিতে হচ্ছে শিল্প রেটে। এতে খরচ বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। মাছের হরমোন ইনজেকশন আগে প্রতি পিস ছিল টাকা, যা এখন কিনতে হচ্ছে ৪০ টাকায়।

জেলা মৎস অফিস সূত্র জানায়, রেণু পোনা উৎপাদনে যশোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জেলায় ৩৪টি হ্যাচারিতে পোনা উৎপাদন হয়। এর মধ্যে কার্পজাতীয় পোনা উৎপাদন হয় ৬৪ দশমিক ৮৬ টন। জেলায় পোনার চাহিদা ১৫ দশমিক ২৩ টন। উদ্বৃত্ত ৪৯ দশমিক ৬৩ টন পোনা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। যশোরে মোট ৫১টি বাঁওড় রয়েছে, যার আয়তন ১৮ হাজার ৮৪ হেক্টর। মূলত এসব বাঁওড় থেকে মাছ উৎপাদন হয়। এখানকার উৎপাদিত মাছ দেশের অন্যান্য অঞ্চলেরও চাহিদা মিটিয়ে থাকে। জেলার দুই লাখ মানুষ মাছ উৎপাদন, চাষ বিক্রির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।

জেলা হ্যাচারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান গোলদার জানান, সবসময় আমাদের প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে রেণু পোনা উৎপাদন করতে হয়। করোনার প্রভাবে ভরা মৌসুমে উৎপাদন করতে পারলাম না। এতে খাতের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ৫০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

মাছ চাষী অহিদুল্লাহ লুলু বলেন, করোনা প্রভাবে রেণু পোনা উৎপাদন বন্ধ থাকায় সবাই ক্ষতির মুখে পড়বে। কারণ সামনে চাহিদা কমে যাবে।

যশোর জেলা মৎস কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বলেন, করোনার প্রভাব আমাদের মৎস সেক্টরেও পড়েছে। দীর্ঘদিন রেণু পোনা উৎপাদন বন্ধ থাকলে দেশের বাজারে এর প্রভাব পড়বে। এজন্য আমরা সামাজিক দূরত্ব মেনে সীমিত আকারে রেণু পোনা উৎপাদনের জন্য হ্যাচারি মালিকদের বলেছি। তারা উৎপাদন শুরু করেছেন।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন