মহামারীর প্রতিক্রিয়া

গবেষকদের ভেদাভেদ ভুলতে হবে

ডায়ানে কোয়েল

কভিড-১৯ মহামারীতে সাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে অর্থনীতিবিদদের ভূমিকা আরো অনেক বিভাগের গবেষকদের মতো অর্থনীতির ক্ষেত্রে তাত্ক্ষণিক অগ্রাধিকারমূলক বিষয়গুলো হলো সরকারি অর্থায়ন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংকটের ফলে তৈরি হওয়া সংকটকে বিশ্লেষণ করা

গবেষকদের এখন কতজন চাকরি হারিয়েছে, লোকেরা কী কিনতে পারছে এবং কী ধরনের ঘাটতি বৃদ্ধি পাচ্ছেএসব ডাটা সংগ্রহে হিমশিম খেতে হচ্ছে এমনকি মুদ্রাস্ফীতি দেশজ পণ্যের মোট হিসাবের মতো মৌলিক অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান তৈরি করাও চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলা হচ্ছে এক-তৃতীয়াংশ অর্থনৈতিক কার্যক্রম এখন বন্ধ হয়ে গেছে আমরা সাময়িকভাবে ছুটিতে থাকা ব্যক্তিকে কাজের ক্ষেত্রে কীভাবে গণনায় নিতে পারি? যখন কেউ বাজার করতে যাচ্ছে না তখন পণ্যের ঝুড়িটিকে সমন্বিত করা হবে কী কী পণ্য দিয়ে? আমাদের এসব বুঝতে হবে কোন শ্রেণীর মানুষ মহামারীতে সবচেয়ে বাজেভাবে আক্রান্ত হয়েছে তা নির্ণয় করতে যার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সরাসরি তাদের সাহায্য করতে পারবে কিন্তু নির্ধারণের মানদণ্ড ঠিক না থাকলে এটি করা বেশ কঠিন

এখানে আরো কিছু প্রশ্ন রয়েছে কখন কভিড-১৯-এর কারণে আইসোলেশন, বেকারত্ব অথবা বিলম্বিত সার্জারির সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত হবে? আগামী বছর প্রধান খাদ্যপণ্যগুলোর সরবরাহের প্রভাব কী হবে? ভ্যাকসিন উত্পাদন কত দ্রুত করা যাবে? লকডাউন থেকে মুক্তির কৌশলগুলো আচরণগতভাবে রাজনৈতিকভাবে কি পালন সম্ভব? সরকারগুলো কি সুবিধাজনক নীতিনির্ধারণের জন্য একে অন্যকে সহযোগিতা করবে? ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা যখন বৃদ্ধি পাবে, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তখন কী করবে?

এমন অনেক প্রশ্ন সামনে রেখে যা প্রয়োজন তা হলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন পুরোনো বিষয়গুলোর একটি দ্রুত সমন্বয় এটা হচ্ছে মানুষের স্বার্থে গবেষণায় বিনিয়োগের সময়

সতর্কতার সঙ্গে অন্য খাতগুলোর দিকে এগিয়ে যাওয়াকেও স্বাগত জানাতে হবে অর্থনীতিবিদদের ক্ষেত্রে অন্যান্য সমাজবিজ্ঞানীদের মতো নিজেদের বিষয়ের বাইরে যাওয়ার সম্ভাবনা কম অন্যদিকে চিকিত্সা প্রকৃতি বিজ্ঞানী অন্তর্দৃষ্টির জন্য সমাজবিজ্ঞানীদের দিকে তাকাতে অভ্যস্ত নন মহামারী এখন সবকিছু বদলে দিচ্ছে এখন আমাদের বায়োমেডিকেল সায়েন্স, এপিডেমিওলজি, জনস্বাস্থ্য, আচরণবিদ্যা সামাজিক মনোবিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং, অর্থনীতি, আইন, নীতিবিদ্যা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মাঝে এর থেকে মুক্তির উপায় সন্ধান করতে হবে এই খাতগুলোর সম্মিলিত চেষ্টা ছাড়া পৃথিবীর মানুষের দুর্দশা লাঘব সম্ভব নয়

আমরা অর্থনীতিবিদরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারি, অর্থাত্ আমরা ভাবতে পারি কীভাবে বিভিন্ন বিষয়ের মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করা যায় তা নিয়ে প্রতিটি পদক্ষেপ, এমনকি নিষ্ক্রিয়তাও সুযোগ ব্যয় করে এটা কীভাবে কমানো যায়, এর বণ্টনমূলক পরিণতিই বা কী? এগুলো মেডিকেল ফ্যাক্টরের মতো রাজনৈতিক নীতিগত পছন্দগুলো নির্ণয় করে

জীবন জীবিকার মধ্যে একটি সহজ ভারসাম্য তৈরির বিষয়টিও এখানে রয়েছে পরিষ্কার ব্যাপার হচ্ছে, সরকার লকডাউন বজায় রাখার যেমন নীতিই গ্রহণ করুক না কেন, মহামারীর একটা বিপর্যয়কর অর্থনৈতিক প্রভাব রয়েছে প্রতিটি দেশ এমন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে যা জীবন বাঁচাতে অর্থনৈতিক ক্ষতি লাঘব করতে প্রমাণিত হতে পারে এটা সহজ নয়, এখানে অনেক কিছু আছে যা আমরা জানি না এখন অনুসন্ধানগুলো ভাগাভাগি করতে অর্থনৈতিক গোষ্ঠীগুলোকে সহজবোধ্যভাবে একটি গবেষণা চালাতে হবে, যেমনটা ইউরোপিয়ান ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশন করেছে যুক্তরাজ্যের ইকোনমিক অ্যান্ড সোস্যাল রিসার্চ কাউন্সিল (ইএসআরসি) গবেষণা সংগ্রহ এবং অনুবাদ করার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে ইএসআরসি এবং ইউরোপিয়ান কমিশনের করোনা প্লাটফর্ম গবেষণা প্রস্তাবগুলো দ্রুত তৈরি করছে 

তবে আমি উদ্বিগ্ন এই ভেবে, সরকারের মন্ত্রী কর্তাব্যক্তিদের নিজেদেরই এসব বিচার করতে হবে একই সময়ে তাদের আবার অত্যধিক উদ্বেগ চাপের মাঝে থাকতে হবে কীভাবে জ্ঞান গবেষণার বিভিন্ন শাখার এসব পর্যবেক্ষণের সমন্বয় করবেন তা নিয়ে কিছু কভিড-১৯ সংক্রান্ত পরামর্শক দলের অভিজ্ঞতাও আবার খুব অল্প অন্যান্য অনেক বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের সামনে আসার মতো মুহূর্তে গবেষক গোষ্ঠীগুলোকে নিজেদের সংশ্লেষিত জ্ঞানকে অগ্রাধিকার দিতে হবে

দুঃখের বিষয় হচ্ছে একাডেমিক সুবিধাগুলো এমন মানুষের বিরুদ্ধে কাজ করে যারা সাহস দেখিয়ে অন্য বিষয়েও প্রবেশ করে ক্যারিয়ার, অর্থায়ন প্রকাশনাএসব প্রতিদান খুবই ক্ষুদ্র, যখন পৃথিবী বড় ধরনের সমস্যায় পতিত হয়েছে এখন বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা ইনস্টিটিউট ল্যাবরেটরিগুলো ভবিষ্যতের তাদের অপ্রাসঙ্গিকতার জন্য নিজেদের দুষতে পারে কিন্তু পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে যদি তারা বিভাগের ভেদাভেদ ভেঙে না ফেলে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য গবেষকদের পুরস্কৃত না করে এজন্য প্রয়োজন প্রতিষ্ঠানিক সংস্কার, যা সহজ নয় এবং সংকটের তুলনায় বেশ শ্লথও অবস্থায় ওয়েলকাম এবং গেটস ফাউন্ডেশনের মতো প্রতিষ্ঠিত সংস্থাগুলো জ্ঞানের বিভিন্ন শাখাকে একীভূত করার ক্ষেত্রে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে

নেচার ম্যাগাজিন থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন