বগুড়ায় মেস ভাড়ার জন্য ছাত্রীদের আটকে রাখার অভিযোগ

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, বগুড়া

বগুড়ায় ভাড়ার জন্য একটি মেসের (ছাত্রীনিবাস) ১৩ ছাত্রীকে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে মেসকর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মেস মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ছাত্রীদের উদ্ধার করে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে পাঠিয়েছে।

গতকাল সোমবার বগুড়া শহরের কামারগাড়ি রেডিলাইট কমপ্লেক্স সংলগ্ন মুন্নুজান ছাত্রী নিবাসের ছাত্রীরা এমন অভিযোগ করেন। 

স্থানীয়রা জানান, বগুড়া শহরের কামারগাড়ি এলাকায় ‘মুন্নুজান ছাত্রী নিবাসে’ বিভিন্ন জেলার ছাত্রীরা ভাড়া নিয়ে থেকে বগুড়ার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করেন। করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ছাত্রীরা নিজনিজ বাড়ি চলে যান। এরপর লকডাউন শিথিল হলে তারা গতকাল সোমবার সকালে ছাত্রী নিবাসে এসে রুমের বইপত্র ওল্টানো দেখেন। তারা অভিযোগ করেন, তাদের কাপড়-চোপড় ও মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়া গেছে। 

পরে তারা ছাত্রী নিবাস ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এসময় হোস্টেল সুপার হাফিজা বেগম ওই ছাত্রীদের কাছে এপ্রিল, মে মাসের বকেয়া ও জুন মাসের অগ্রিম ভাড়া দাবি করেন। ভাড়া না দেয়ায় তাদের ছাত্রী নিবাসের বাইরে যেতেও বাধা দেন। খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মালিকপক্ষের সাথে কথা বলে বিষয়টি নিয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসার পর ছাত্রীরা ওই ছাত্রীনিবাস ত্যাগ করে। 

এসময় ছাত্রীরা পুলিশের কাছে আরো অভিযোগ করেন, ছাত্রী হোস্টেলের নিচতলায় প্রায়ই সাপের উপদ্রব দেখা যায়। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার বললেও তারা কোন পদক্ষেপ নেননি। এছাড়াও ছাত্রীনিবাসের একাধিকবার চুরির ঘটনা ঘটেছে। মেসটিতে তিন শতাধিক ছাত্রী থাকলেও কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার তেমন কোন ব্যবস্থাই নেননি।

ওই ছাত্রীনিবাসের ছাত্রী সরকারি আজিজুল হক কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শেষ বর্ষের ছাত্রী বগুড়ার শিবগঞ্জের মোছা. রুমা জানান, আজ ওই হোস্টেলে তিনিসহ ১৩ জন ছাত্রী আসেন। তিনি তার রুমে গিয়ে সবকিছু তছনছ অবস্থায় দেখেন। তার জামাকাপড়সহ দামী জিনিসপত্র চুরি হয়ে গেছে। তার মতো আরো কয়েকজনের রুমেও চুরি হয়ে যায়। এতকিছুর পরও হোস্টেলের ইনচার্জ তিন মাসের ভাড়া পরিশোধ করে তারপর হোস্টেল ত্যাগ করার কথা বলে।

সিরাজগঞ্জ জেলার দীপান্বিতা এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী। তিনি জানান, করোনার কারণে বাড়িতে চলে যান। আজ (সোমবার) হোস্টেলে তার বই পত্র নিতে আসে। কিন্তু তিন মাসের ভাড়া ছাড়া তাকে হোস্টেল থেকে বের হতে বাধা সৃষ্টি করা হয়। 

মুন্নুজান ছাত্রীনিবাসের হোস্টেল সুপার হাফিজা বেগম জানান, এপ্রিল থেকে তিন মাসের ভাড়া চাওয়া হয়েছে। কিন্তু ছাত্রীরা তা দেবে না বলে জানায়। পরে মালিক আব্দুল্লাহেল কাফীর সাথে কথা বললে দুই মাসের ভাড়া নিয়ে ছাত্রীদের ছেড়ে দিতে বলেন। 

সাপের উপদ্রবের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। তবে রুমে চুরি হওয়ার বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি তিনি।

বগুড়া শহরের স্টেডিয়াম ফাঁড়ির সাব ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীর আলম জানান, মালিকের সঙ্গে কথা বলেছি। যার টাকা আছে সে দিয়ে যাবে। আর যার নাই সে পরে এসে দিবে। তবে ভাড়ার টাকার জন্য কোন ছাত্রীকে আটকে রাখতে পারবে না কর্তৃপক্ষ। 

ছাত্রীরা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে ছাত্রীনিবাস ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। যদি তাতে বাধাপ্রাপ্ত হয় কোন ছাত্রী তবে ওই ছাত্রীনিবাস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন