পারিবারিক উপার্জন কমেছে ৭৪ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

কভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার কারণে এক সংকটময় মুহূর্তে উপনীত হয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যগত দুর্বলতার ঝুঁকিতে রয়েছেন দেশের প্রায় ১০ কোটি ২২ লাখ মানুষ। চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরেছেন বা ফিরে আসছেন ১৪ লাখেরও বেশি প্রবাসী শ্রমিক। ৩৪ শতাংশ পরিবারের অন্তত একজন করে ব্যক্তি চাকরি হারিয়েছেন। ফলে উপার্জন কমেছে প্রায় ৭৪ শতাংশ পরিবারের।

ব্র্যাক, ডাটা সেন্স উন্নয়ন সমুন্বয়ের এক যৌথ সমীক্ষায় তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল এক ডিজিটাল সংবাদ সম্মেলনে কভিড-১৯ এবং জাতীয় বাজেট ২০২০-২১: নিম্নআয়ের মানুষের জন্য কৌশল পুনর্বিবেচনা শীর্ষক সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) চেয়ারম্যান ব্র্যাকের চেয়ারপারসন . হোসেন জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর . আতিউর রহমান। ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক কেএএম মোর্শেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন আইসোস্যালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা . অনন্য রায়হান। প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো . নাজনীন আহমেদ এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) নির্বাহী পরিচালক . ইমরান মতিন।

দৈবচয়নের ভিত্তিতে নির্বাচিত দেশের ২৫ জেলার ৯৬২ জন উত্তরদাতার অংশগ্রহণে জরিপটি পরিচালনা করা হয়। এতে দেখা যায়, দেশে অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে চরম দরিদ্র রয়েছেন কোটি ৩৬ লাখ ৪০ হাজার মানুষ (দৈনিক আয় . ডলার হিসেবে) তাদের মধ্যে নতুন করে চরম দরিদ্র হয়ে পড়া পরিবারগুলোও রয়েছে। এছাড়া উচ্চ অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে থাকা চরম দরিদ্রের সংখ্যা কোটি ৭৩ লাখ ৩০ হাজার।

এতে আরো দেখা যায়, কভিড-১৯-এর কারণে নিম্নআয়ের মানুষের ওপর বহুবিধ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে ৩৪ দশমিক শতাংশ পরিবারের কমপক্ষে একজন সদস্য চাকরি হারিয়েছেন। মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে গড় পারিবারিক উপার্জন প্রায় ৭৪ শতাংশ কমে গিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দিনমজুরসহ অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরতরা। ১৪ লাখেরও বেশি প্রবাসী শ্রমিক বিদেশ থেকে চাকরি হারিয়ে ফিরে এসেছেন বা ফিরছেন। বিদেশে থাকা অভিবাসীরাও এখন ঋণচক্র সামাজিক কলঙ্কের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে পড়েছেন।

এছাড়া বর্তমানে দেশের কোটি ৬৩ লাখ ৩০ হাজার মানুষ উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন বলে জরিপে উঠে আসে।

এছাড়া দেশের উৎপাদন খাতেও বড় ধাক্কার বিষয়টি প্রতিবেদনে উঠে আসে। এতে দেখা যায়, চলতি বছরের এপ্রিলে দেশের তৈরি পোশাক খাতের রফতানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বছর মার্চের মাঝামাঝি থেকে এপ্রিলের মধ্যে হাজার ১১৬টি কারখানা বন্ধ ঘোষিত হয়েছে এবং চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ২২ লাখ শ্রমিক।

. নাজনীন আহমেদ বলেন, নিম্নআয়ের মানুষ হিসেবে বটম অব দ্য পিরামিডে শুধু শ্রমিকরা নন, অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাও আছেন। প্রণোদনা দেয়ার পরও শ্রমিকদের বেতন দেয়া হয়েছে ৬০ শতাংশ।

. ইমরান মতিন বলেন, স্বাস্থ্য খাতে অবকাঠামো মানবসম্পদ বাড়াতে হবে। উপজেলা গ্রামীণ পর্যায়েও সার্বক্ষণিক ডাক্তার স্বাস্থ্যকর্মী, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম রাখতে হবে। কী করতে হবে এটা সবাই জানি। কিন্তু কীভাবে কখন করব সে বিষয়ে আরো পদক্ষেপ প্রয়োজন।

. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, আগামী বাজেট আমাদের আরো দক্ষতার সঙ্গে তৈরি বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশের পৌরসভাগুলোর অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। সেখানে উন্নয়ন করতে হলে বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন। ৭৮ লাখ প্রাথমিক শিক্ষার্থীকে যে ১০০ টাকা করে বৃত্তি দেয়া হচ্ছে, তা এখনই ৫০০ টাকায় উন্নীত করা দরকার। শুধু বরাদ্দ করলেই হয় না। সবার কথা, সুবিধা-অসুবিধা শুনে দক্ষতাপূর্ণ, কার্যকর কৌশলী বাজেট করতে হবে। সবাইকে এক সঙ্গে হাঁটতে হবে।

গবেষণায় ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের জন্য বেশকিছু সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো নিম্নআয়ের যেসব পরিবারের উপার্জনকারী কভিড-১৯- আক্রান্ত হয়ে উপার্জনহীন হয়েছেন বা মারা গেছেন, সেসব পরিবারের জন্য অন্তত তিন বছরের জন্য নগদ সহায়তা চালু করা, ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে চরম দরিদ্র দরিদ্রদের জন্য এবং ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে অন্যান্য বেকার গোষ্ঠীর জন্য সর্বজনীন বেকারত্ব সুবিধা স্কিম চালু করা, সরকারি পরিষেবা সুবিধাগুলো নাগরিকদের কাছে সহজলভ্য করতে ২০২০-২১ অর্থবছরে নাগরিকদের (বয়স নির্বিশেষে) সর্বজনীন পরিচয় ব্যবস্থা প্রণয়ন প্রবর্তন, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষা স্কিম, ঋণ, সঞ্চয় বীমা ইত্যাদি সুবিধা পেতে সবাইকে ডিজিটাল পরিষেবার অন্তর্ভুক্ত করা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

এছাড়াও এতে কারখানা অফিসগুলোর জন্য প্রতিদিন কাজের সময়সীমা ঘণ্টা করা এবং প্রয়োজনে তিনটি শিফট চালু করার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। এটি করা সম্ভব হলে যানজট হ্রাস পাবে এবং অফিস-কর্মক্ষেত্র গণপরিবহনে যথাযথ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন