ঘূর্ণিঝড় আম্পানে দিনাজপুরের হাকিমপুরে মাটিতে হেলে পড়েছিল বেশকিছু জমির ধানগাছ। এরপর টানা কয়েক দিন বৃষ্টিতে এসব জমি পানিতে ডুবে থাকায় এখন পাকা ধানে পচন ধরেছে। আবার ঈদের কারণে অনেক শ্রমিক বাড়ি গিয়ে আর ফেরেননি। এতে শ্রমিক সংকট দেখা দেয়ায় ধান কাটতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কৃষকদের।
জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে হাকিমপুর উপজেলায় বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার ৩২৫ হেক্টর। এর বিপরীতে আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে। দেরিতে রোপণের কারণে হাকিমপুরে খানিকটা দেরিতে ধান কাটা-মাড়াই হয়। তবে এরই মধ্যে সাত হাজার হেক্টর জমির ধান কর্তন শেষ হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে এ উপজেলায় কয়েকশ বিঘা জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বৃষ্টিতে পানি জমে এখন সেসব জমির ধান পচে নষ্ট হচ্ছে। শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কেটে নিতে কৃষকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
হরিহরপুর ও সাদুরিয়া গ্রামের কয়েকজন কৃষক বলেন, যে সময় ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়, তার আগেই ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে অনেক জমির ধান মাটিতে হেলে ও শুয়ে পড়েছে। তার ওপর কয়েক দিন ধরে বৃষ্টিপাতের পর থেকে এসব জমির ধান পচে নষ্ট হচ্ছে। এ কারণে আগে যেখানে বিঘাপ্রতি ২০ মণ করে ধান হতো, এখন সেখানে ১০-১২ মণ ধান পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে না।
তারা বলেন, ঈদের কারণে অন্য এলাকা থেকে আসা শ্রমিকরা বাড়ি ফিরে গেছেন। তারা এখনো আসেননি। এতে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে জমিতে পানি জমে যাওয়ায় ধান কাটা-মাড়াই খরচ বেড়ে গেছে। আগে এক বিঘা (৩৩ শতক) জমির ধান কাটা-মাড়াই করতে আড়াই-তিন হাজার টাকা লাগত। এখন সেখানে ৫-৬ হাজার টাকার মজুরি লাগছে। এ কারণে অনেক ধান জমিতেই পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবার কাটা ধান ব্যাপারিরা কিনতে চাইছেন না। যারা আগ্রহ দেখান, তারা দাম কম বলেন।
বাদল মাড্ডি নামের এক কৃষক বলেন, যে দাম দিতে চাইছে, তাতে আমাদের ধানের উৎপাদন খরচই উঠবে না। এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় ধানের ভালো ফলন হয়েছিল। কিন্তু এখন ভালো ধান ফলিয়েও বিক্রি করতে পারছি না।
এ ব্যাপারে হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমা নাজনীন বলেন, উপজেলায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে। বর্তমানে যে রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া বিরাজ করছে, এমন আবহাওয়া থাকলে কৃষকের ধান কাটা-মাড়াই নিয়ে যে সমস্যা হচ্ছিল, আশা করি সে সমস্যা থাকবে না। কেবল ২৩০ হেক্টর জমির ধান কাটা বাকি আছে, যা অল্প কয়েক দিনেই কাটা শেষ হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, বৃষ্টিতে শুধু নয়নজুলি এলাকার কিছু জমির ধান ডুবে গেছে। এখন যেহেতু বৃষ্টি নেই, তাই ওইসব জমির ধান কর্তন করতে কৃষকের সমস্যা হবে না। কিছু ধান হয়তো নষ্ট হতে পারে। তবে এতে সামগ্রিক উৎপাদনে খুব একটা প্রভাব পড়বে না।