নির্ধারিত ভাড়া ও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না গণপরিবহনে

যাত্রী-শ্রমিক দ্বন্দ্বে ৯৯৯-এ ৩৫৪ কল

নিহাল হাসনাইন

কভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে ৬৬ দিন বন্ধ থাকার পর চলতে শুরু করেছে গণপরিবহন। ঢাকাসহ সারা দেশে বাস চলাচল শুরু হওয়ার প্রথমদিনে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি না মানা নিয়েও যাত্রী-শ্রমিকের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় অনেক স্থানে। গতকাল বিকাল পর্যন্ত এসব বিষয়ে অভিযোগ জানাতে পুলিশের জরুরি সেবা ৯৯৯- কল করেছেন ৩৫৪ জন।

গতকাল ঢাকাসহ সারা দেশে বাস চলাচল শুরু হয়েছে। প্রথমদিনে তুলনামূলক যাত্রীর চাপ কম ছিল। তবে বর্ধিত ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে ছিল অসন্তোষও। দূরপাল্লার পথে গতকাল থেকে কিলোমিটারপ্রতি টাকা ২৭ পয়সা হারে ভাড়া আদায় করছেন পরিবহন শ্রমিকরা। পাশাপাশি এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে সড়ক সেতুর টোলও। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরে কিলোমিটারপ্রতি মিনিবাসে আদায় করা হচ্ছে টাকা ৫৬ পয়সা। বড় বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে টাকা ৭২ পয়সা। মিনিবাসে সর্বনিম্ন ভাড়া টাকা বড় বাসে টাকা।

এদিকে জরুরি সেবাসংশ্লিষ্টরা জানান, এদিন সবচেয়ে বেশি কল এসেছে যাত্রীদের। বাসের অপরিচ্ছন্ন সিটে যাত্রীদের বসতে বাধ্য করা অতিরিক্ত যাত্রী বহনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন অধিকাংশ। পাশাপাশি বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগও এসেছে জরুরি সেবা আসা ফোন কলগুলোয়। তবে এলাকাভিত্তিক বাস ভাড়ার বিষয়ে ৯৯৯ কর্তৃপক্ষের সঠিক ধারণা না থাকায় তারা কলারকে আগের ভাড়ার সঙ্গে ৬০ শতাংশ যোগ করে টাকা দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। 

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ভাড়া আদায় স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মনিটরিং করছেন। এর পরও রোববার গভীর রাতে ৯৯৯- কিছু কল আসে ভাড়া বাড়ানোর বিষয় জানতে চেয়ে। এরপর সোমবার সকাল থেকে বেশকিছু কল আসে বাড়তি টাকা আদায়ের তথ্য দিয়ে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট থানা অথবা ট্রাফিক পুলিশকে কলগুলো ট্রান্সফার করা হয়েছে। আবার কিছু 

ক্ষেত্রে পরামর্শ দিয়েও সমাধান করা হয়েছে। আবার পরিস্থিতি বুঝে ভোক্তা অধিকারে কল করার জন্যও যাত্রীদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। 

জরুরি সেবার তথ্যমতে, গাবতলী টার্মিনাল থেকে এক ব্যক্তি ফোন করে দিনাজপুরের ভাড়া জানতে চান ৯৯৯-এ। সময় তাকে আগের ভাড়ার সঙ্গে ৬০ শতাংশ অর্থ যোগ করে টিকিট সংগ্রহের অনুরোধ জানানো হয়। সময় ওই ব্যক্তি একটি পরিবহনের নাম উল্লেখ করে জানান, তারা ইচ্ছামতো ভাড়া চাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট জোনের ট্রাফিক বিভাগকে কলটি ট্রান্সফার করা হয়। ধরনের একাধিক কল পাওয়া গেছে গতকাল। সেসব ক্ষেত্রেও একই প্রক্রিয়ায় অভিযোগ সমাধানের চেষ্টা করা হয়। পাশাপাশি ভোক্তা অধিকারেও কল করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নম্বর দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি অধিদপ্তরের কাছেও কল ট্রান্সফার করা হয়েছে। 

গণপরিবহন চালুর প্রথম দিনে যাত্রীদের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় চলাচলকারী পরিবহনের যাত্রীদের কাছ থেকে। যারা কল করেছেন তাদের অধিকাংশই পেশায় চাকরিজীবী। হঠাৎ দ্বিগুণ ভাড়া চাওয়ায় ওই যাত্রীদের সঙ্গে বাসের সুপারভাইজারদের কথাকাটাকাটি হয়। এমন পরিস্থিতিতে বিষয়টি জেলার এসপিদের অবগত করলে তারা পরিবহন মালিক শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। পাশাপাশি এসব যানবাহনে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। একই ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায় রাজশাহী চট্টগ্রাম থেকেও। 

বিষয়ে জানতে চাইলে ৯৯৯-এর অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ বণিক বার্তাকে বলেন, ঢাকার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যাত্রীরা কল করে বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। ঢাকায় বসে রংপুরের লোকাল ভাড়ার বিষয়ে পুলিশ অবগত নন। এক্ষেত্রে তাদের আগের ভাড়ার সঙ্গে ৬০ শতাংশ যোগ করে ভাড়া দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আবার ফোনের অপরপ্রান্তে বসে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টিও দেখা সম্ভব না। কারণে কলগুলো জেলার পুলিশদের কাছে পাঠানো হয়। তবে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির খবর পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, গত রোববার ৬০ শতাংশ বাসভাড়া বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সীমিত আকারে যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। প্রচলিত ভাড়ার সঙ্গে সরকার অনুমোদিত বর্ধিত হারে ভাড়া আদায় করতে পারবেন গণপরিবহন মালিকরা। তবে অনুমোদিত ভাড়ার হার কভিড-১৯জনিত সংকটকালের জন্যই প্রযোজ্য হবে। সংকট দূর হলে আগের নির্ধারিত হারে ভাড়া আদায় করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন