‘মনে হচ্ছে ভার্চুয়াল জীবনযাপন করছি’

ফিচার প্রতিবেদক

বেশ অনেক দিন ধরেই মানুষ ঘরবন্দি হয়ে আছে। কারণটাও কারো অজানা নয়। এর মূলে রয়েছে মহামারী কভিড-১৯। ঘাতক ভাইরাসটি মানুষের জীবনযাত্রায় এক আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছে। এমনকি ঈদের মতো বড় উৎসবও এবার গৃহবন্দি অবস্থায় উদযাপন করতে হয়েছে। ভয়ংকর ভাইরাসের কবল থেকে বাঁচতে আজ প্রায় তিন মাস ধরে নিজেদের ঘরবন্দি করে রেখেছেন বিনোদন অঙ্গনের ব্যক্তিত্বরা। অভিনেতা নিরব হোসেনও তাদের একজন। দুই মাসেরও বেশি সময় ঘরে অবস্থান করছেন অভিনেতা। নিরব বলেন, প্রায় ৭৩ দিন হবে ঘরবন্দি রয়েছি। প্রতিদিনই প্রায় একই রকম জীবনযাপন। এর মাঝেই সময়ের নিয়মে হাজির হয় ঈদুল ফিতর। কেমন কাটল ঘরবন্দি ঈদ? নিরব হোসেন বলেন, বাকি দিনগুলো যেভাবে কাটছে ঠিক সেভাবেই কেটেছে। কোনো বৈচিত্র্য নেই। শুধু একটা ভিন্নতার বিষয় হলো ঈদে নতুন পোশাক পরা হয়েছে।



সর্বশেষ মার্চে লাইট-ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন নিরব। এরপর ১৯ মার্চ থেকে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। দীর্ঘ সময় ধরে শুটিং, অভিনয় থেকে দূরে। অবসরে এসব নিয়ে মনে কতটা শূন্যতা কাজ করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিনয়টা অনেক বছরের অভ্যাস। এটা যখন পেশাদারিত্বের জায়গায় চলে যায় তখন সেটা অভ্যাসের থেকে নেশায় পরিণত হয়। কঠোর পরিশ্রম, ফলাফল, দর্শকদের গ্রহণযোগ্যতা রকম অনেক বিষয় এর সঙ্গে যুক্ত। শুটিংয়ে একজন প্রডাকশন বয় থেকে শুরু করে প্রডিউসারসর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে মেশা হয়। এখান থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। এখন ঘরবন্দি থেকে মনে হচ্ছে ভার্চুয়াল জীবনযাপন করছি।

লকডাউনের আগে তিতুমীর ছবির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন অভিনেতা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এরই মধ্যে অনেকখানি কাজও করে ফেলতেন। বিষয়ে তিনি বলেন, ছবির কাজ এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে শুরুর কথা ছিল। পরিকল্পনা ছিল ১০-১৫ দিনের একটা লট করার। কিন্তু এখনো শুটিংই শুরু হলো না।

তিতুমীর ছবিতে কাজ শুরুর আগে নিরব ক্যাসিনো ছবির কাজ করছিলেন। ছবিটির শুটিং শেষে বাকি ছিল শুধু ডাবিংয়ের কাজ। কিন্তু করোনার বাধার কারণে সে কাজটিও এখন অসমাপ্ত রয়ে গেছে। রকম পরিস্থিতি তৈরি না হলে আমরা ছবিটির ডাবিংয়ের কাজ শেষ করে ঈদে মুক্তি দিতে পারতাম। কিন্তু কিছুই হলো না। তবে এসব নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই নিরবের। তার কারণ পরিস্থিতি কেবল আমাদের দেশেই নয়, সারা পৃথিবীতেই।

করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে ছোট পর্দার শুটিং শুরু হয়েছে। চলচ্চিত্রের সংগঠনগুলোও শুটিং শুরুর বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পরিকল্পনা করছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শুটিং শুরুর বিষয়টি নিয়ে ব্যক্তিগত অভিমত জানতে চাইলে নিরব বলেন, আমাকে জোর করে কেউ শুটিং করাতে পারবে না। কারণ আমি আমার পরিবার নিয়ে অনেক বেশি সচেতন। আমার মা এমনিতেই অসুস্থ। আমি তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারব না। এখনো পরিস্থিতি খুব খারাপ।

ঘরবন্দি সময়ের নানা উপলব্ধি নিয়েও কথা বলেন নিরব। দেশের চলচ্চিত্রের অবস্থা নিয়ে এমনিতেই নানা অভিযোগ রয়েছে। তার ওপর প্রেক্ষাগৃহগুলো বন্ধ। প্রেক্ষাগৃহসংশ্লিষ্টদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। অবসর সময়ে এসব ভাবনা কাজ করছে বলে জানালেন নিরব। কী ধরনের ছবি হওয়া উচিত, কী রকম বাজেটের, কোথায় মুক্তি দেয়া হবেকরোনা পরিস্থিতির কারণে আমরা বিষয়গুলো উপলব্ধি করতে পারছি’—তিনি যোগ করেন।

বর্তমান করোনা পরিস্থিতি পরবর্তী সময়ে চলচ্চিত্র শিল্পে এক ধরনের পরিবর্তন ঘটাবে বলে মনে করছেন অভিনেতা। তিনি বলেন, করোনার কারণে মানুষ অনেক কিছু শিখবে। গতানুগতিক কাজগুলো হয়তো আর করবে না। এছাড়া প্রযোজকরা অর্থ লগ্নির ক্ষেত্রে অনেক সচেতন হয়ে যাবেন। কোন কাজটি করা যাবে, কোনটি যাবে না বোধোদয়গুলো আসতে পারে।

এখন অনেকটা কর্মব্যস্ততাহীন জীবন কাটাচ্ছেন তারকারা। কর্মহীন জীবনে শরীর-মনকে সতেজ সচল রাখতে বাড়িতে বসেই নানা সৃজনশীল কাজে যুক্ত থাকছেন তারা। নিরবও আলাদা নন। বাড়িতে বসে ছবি দেখা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সঙ্গে সঙ্গে ছোট ছোট নানা ভিডিও দেখে অনেক কিছু শেখার চেষ্টা করছেন বলে জানালেন। এছাড়া গুণী মানুষের জীবনী পড়ে নতুন নতুন জ্ঞান অর্জনের চেষ্টায় রত আছেন তিনি।

নিরবের মতে, অনেক বেশি সচেতনতা অবলম্বন করে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। তাই পাঠক তার ভক্তদের উদ্দেশে সচেতনামূলক বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, এখনো সময় আছে। ঘরোয়া পদ্ধতিতে যে চিকিৎসার কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো সবার মেনে চলা উচিত। সেই সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। এবং খুব প্রয়োজন না হলে বাইরে বের না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আলাপের ইতি টানেন নিরব হোসেন।

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন