উচ্চসংক্রমণের ঝুঁকিতে দেশের সব বিমানবন্দর

বেঁধে দেয়া স্বাস্থ্যনির্দেশনার পরিপালন নিশ্চিতে নজরদারি বাড়াতে হবে

ইউরোপিয়ান এভিয়েশন সেফটি এজেন্সির (ইএসএ) মানদণ্ডে দেশের সব বিমানবন্দর এখনো কভিড-১৯ সংক্রমণে উচ্চঝুঁকিতে থাকলেও প্রায় দুই মাস বন্ধ থাকার পর গতকাল থেকে আবারো চালু হয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট সৈয়দপুর বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট। সিদ্ধান্তটি এমন এক সময়ে নেয়া হয়েছে, যখন দেশে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের ধারা ঊর্ধ্বমুখী। দিন যত গড়াচ্ছে, শনাক্ত হার মৃতের সংখ্যাও সমান্তরালে বাড়ছে। বিমান চলাচল শুরু হওয়ায় স্বভাবতই আক্রান্ত যাত্রীরাও চলাচল শুরু করতে পারে। তাতে সংক্রমণ আরো বৃদ্ধির ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, বেবিচকের বেঁধে দেয়া স্বাস্থ্যবিধি নীতিমালা অনুসরণ করে সব প্রস্তুতি নিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এয়ারলাইনসগুলো। এটা নিঃসেন্দেহে ইতিবাচক। তবে আমাদের নিকট অতীতের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। বিমানবন্দরে নামমাত্র স্ক্রিনিং হয়েছিল (বা এখনো হচ্ছে) সন্দেহভাজনদের শনাক্ত করে কোয়ারেন্টিনের কোনো সুব্যবস্থা ছিল না; ছিল না সুষ্ঠুভাবে নজরদারির কোনো ব্যবস্থা। যাত্রীরা অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থার মতো যাওয়া-আসা করেছে, দেখার যেন কেউ ছিল না। বলা যায়, বিমান চলাচলের সার্বিক কার্যক্রম ঢিলেঢালাভাবে সম্পাদন করা হয়েছিল। এবার এর ব্যত্যয় আশা করব। মনে রাখতে হবে, কঠিন বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতিতে এবার অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটগুলো সচল করা হয়েছে। এখন ন্যূনতম শৈথিল্যও বড় স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। কাজেই চেক-ইন থেকে শুরু করে অবতরণপ্রতিটি পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধির অনুসরণ নিশ্চিত করতে হবে। সময়ান্তরে বিমানবন্দর এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষের মধ্যে নির্দেশনা পরিপালনে এক ধরনের গা-ছাড়া ভাব চলে আসতে পারে, আগে যেমনটা দেখা গেছে। তেমনটি যেন না হয়, সেজন্য নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেবিচকের সার্বক্ষণিক নজরদারি অব্যাহত রাখতে হবে বৈকি। 

সন্দেহ নেই, দুই মাস ধরে চলা অঘোষিত লকডাউন পুরো অর্থনীতির অপূরণীয় ক্ষতিসাধন করেছে। কিন্তু খাতভিত্তিক ক্ষতি বিবেচনায় সবচেয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়া খাতের একটি হলো এভিয়েশন। একে একে সব বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ায় এয়ারলাইনসগুলো বড় ধরনের আর্থিক বিপর্যয়ে পড়েছে। কোনো কোনোটি আবার দেউলিয়া হয়ে পড়ার ঝুঁকিতেও রয়েছে। কর্মীদের বেতন দিতে পারছে না, আয় পুরোপুরি বন্ধ। মূলত এই আর্থিক দুর্দশার কথা বিবেচনায় রেখে অন্তত অভ্যন্তরীণ চার রুটে বিমানযাত্রা চালু করা হয়েছে। এটাকে এয়ারলাইনসগুলোকে সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে নিতে হবে। আয়ের উপায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন আয়ের কিছুটা সুযোগ পাচ্ছে। সুতরাং স্বাস্থ্যবিধির পরিপালন নিশ্চিতের দায়টি তাদের আরো বেশি। চাপে নয়, নিজেদের গরজেই এক্ষেত্রে তাদের উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। এদিকে এখন বিমান চলাচল যেহেতু স্বাস্থ্যঝুঁকির সঙ্গে পুরোপুরি যুক্ত, সেহেতু বেঁধে দেয়া স্বাস্থ্য নির্দেশনাগুলো যথাযথ পরিপালন হচ্ছে কিনা, তা নিয়মিত তদারক করতে হবে। যে এয়ারলাইস ঠিকভাবে স্বাস্থ্য নির্দেশনা বেঁধে দেয়া শর্ত পালন করবে না, সঙ্গে সঙ্গে তার চলাচলের অনুমতি বাতিল করতে হবে। আর কাজটি করতে হবে বেবিচককেই।

সংক্রমণ প্রতিরোধে যাত্রীদের একটি ভূমিকা আছে। বলা দরকার, তাদের ভূমিকাটিই সবচেয়ে মুখ্য। করোনা সংক্রমণ যেহেতু মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়, সেহেতু ব্যক্তিসাধারণকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে। মেনে চলতে হবে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতাবিষয়ক স্বাস্থ্যবিধি নির্দেশিত শারীরিক দূরত্ব। যাদের জ্বর-সর্দি আছে, তাদের কোনোভাবেই ভ্রমণ করা সমীচীন হবে না। একজনের অসচেতনতাই হতে পারে অন্যের বড় বেদনার কারণ। তাই প্রত্যেকের দায়িত্বশীল আচরণই কাম্য।

এখনই বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের এভিয়েশন খাত সংক্রমণে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। কোনো দেশই মুহূর্তে বাংলাদেশে বিমান চলাচলে আগ্রহী নয় এবং বাংলাদেশ থেকেও যাত্রী নিতে ইচ্ছুক নয়। অনেক দেশই বাংলাদেশীদের জন্য ভ্রমণ নিষিদ্ধ করেছে। সংক্রমণ বাড়লে নিষেধাজ্ঞা আরো বাড়তে থাকবে। অভ্যন্তরীণ রুটে চালু হওয়া বিমান চলাচল আশঙ্কা ভুল প্রমাণেরও একটা সুযোগ। বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইনসগুলোকে দেখাতে হবে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করে বিমান চলাচল অব্যাহত রাখা যায়, তাতে সংক্রমণের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এটি প্রমাণ করা গেলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পক্ষে একটি ইতিবাচক বার্তা যাবে; হূত ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে অনেকটা সহায়ক হবে। কাজেই এটি মনে রেখে বিমান চলাচল চালুর বিষয়টি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, এয়ারলাইস কর্তৃপক্ষ বেবিচককে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে বৈকি। প্রধানত এয়ারলাইনসগুলোর আর্থিক বিপর্যয় ঠেকানোর উদ্দেশ্যে ঝুঁকির মধ্যেও বিমান চলাচল সচলের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, কিন্তু তা যেন ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে না আনে, এদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন