করোনায় অসম ভবিষ্যতের মুখোমুখি যুক্তরাষ্ট্রের কর্মজীবীরা

বণিক বার্তা ডেস্ক

বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাস যুক্তরাষ্ট্রে যে তাণ্ডব চালিয়েছে, তাতে বহুলাংশে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশটির স্বাস্থ্য খাত অর্থনীতির ভিত। বিশেষ করে কর্মজীবীদের জন্য হাজির হয়েছে অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে নভেল করোনাভাইরাসের কারণে হু-হু করে বাড়ছে বেকারত্ব। প্রায় এক শতক আগের মহামন্দার পর দেশটিতে এত বিপুলসংখ্যক মানুষ আর কখনই বেকার হয়নি। আশঙ্কার কথা, খুব শিগগিরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে না। বিশ্লেষকরা বলেছেন, বর্তমান বাস্তবতায় দেশটির কর্মীদের মধ্যে বৈষম্য আরো বাড়বে। দক্ষতা সুযোগের ভিত্তিতে তাদেরকে মুখোমুখি হতে হবে এক অসম ভবিষ্যতের। খবর এএফপি।

মূলত নভেল করোনাভাইরাস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মীদের মোটা দাগে দুই ভাগে বিভক্ত করে ফেলেছে। এর এক ভাগে রয়েছেন তারা, যাদের বাড়িতে বসে কাজ করার সক্ষমতা আছে। অন্য ভাগে রয়েছেন বাকি সবাই, যাদের সুযোগ বা সক্ষমতা কিছুই নেই। যুক্তরাষ্ট্রে যে ছাঁটাই হয়েছে, তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেসব কর্মী, যাদের সশরীরে কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত থাকতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে ব্যারিস্টার থেকে হোটেল পর্যটন খাতের কর্মীরা। এছাড়া মার্কিন বেতন কাঠামোর নিম্নস্তরের কর্মীদের ওপর ছাঁটাইয়ের ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে।

বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্রম বিভাগের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জেসি রথস্টেইন বলেন, যেসব কর্মী খুবই দক্ষ বাড়িতে বসে কাজ করার সুযোগ রয়েছে, তারা তাদের চাকরিদাতাদের কাছে দাবি উত্থাপন করতে পারবেন। এর মধ্য দিয়ে তারা হয়তো কর্মক্ষেত্রে নিজেদের জন্য একটি স্থান নিশ্চিতও করে নেবেন। কিন্তু সমস্যা হলো স্বল্প কিংবা অদক্ষ কর্মীদের নিয়ে। অত্যধিক ঝুঁকিতে থাকা এসব কর্মীর জন্য চাকরিবাজারের পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ বৈ ভালো হচ্ছে না।

ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান জেরোমি পাওয়েল এরই মধ্যে বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাসকে ব্যাপক বৈষম্য বৃদ্ধিকারক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি যে একেবারেই এড়ানো অসম্ভব তা নয়। যদি কংগ্রেস বিপর্যস্ত ব্যবসা ভোক্তাদের সহায়তার জন্য নতুন প্রণোদনা পদক্ষেপ নেয়, তাহলে সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব।

ফেডারেল রিজার্ভের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ক্লডিয়া সাহম বলেন, আগে থেকে আমাদের যেসব ফাঁকফোকর ছিল, এখন সেগুলো আরো বড় হচ্ছে। আমরা অতীতে যা করেছি, যেসব পদক্ষেপ নিয়েছি, বর্তমানে তার চেয়ে ভালো কিছু করার সময় এখনো আছে। কিন্তু ভালো কিছু তো আর এমনি এমনি ঘটবে না। সেজন্য প্রয়োজনীয় কার্যকর নীতি গ্রহণ করতে হবে।

যখন ফেব্রুয়ারিতে নভেল করোনাভাইরাস যুক্তরাষ্ট্রে আসে তখন দেশটির বেকারত্বের হার ছিল রেকর্ড নিম্ন দশমিক শতাংশ। তবে শ্রমবাজারের চিত্র যতটা ভালো মনে হচ্ছিল, বাস্তব চিত্র ছিল তার থেকে ভিন্ন। ইউএস প্রাইভেট সেক্টর জব কোয়ালিটি ইনডেক্সের (জেকিউআই) উপাত্ত বলছে, ফেব্রুয়ারিতে এমন বহু চাকরি সৃষ্টি হয়েছে, যেগুলোয় খুবই নিম্ন মজুরি দেয়া হয়। অন্যদিকে গত বছরের শেষের দিকে দ্য ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের এক গবেষণা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪ শতাংশ কর্মী নিম্ন মজুরির অন্তর্ভুক্ত। তারা বছরে আয় করে সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ডলার।

এর পরই মহামারীর আঘাতে মার্কিন শ্রমবাজারের চিত্র দ্রুত পাল্টে যেতে থাকে। এপ্রিলে বেকারত্বের হার গিয়ে দাঁড়ায় ১৪ দশমিক শতাংশে। একই সঙ্গে দেশটির অর্থনীতি প্রায় নিশ্চিত মন্দার দিকে ধাবিত হয়। ফলে অবকাশ, হসপিটালিটি খাদ্য পরিষেবার মতো খাতে কর্মরত নিম্ন মজুরির কর্মীরা ব্যাপক ছাঁটাইয়ের শিকার হন।

এদিকে সরকারি উপাত্ত বলছে, অধিকাংশ কর্মীই মনে করছেন যে তারা সাময়িকভাবে ছাঁটাই হয়েছেন। কিন্তু বিষয়ে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বুথ স্কুল অব বিজনেসের সহযোগী অধ্যাপক মাইকেল ওয়েবার সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি কর্মী সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হলে চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়বে। এতে মজুরির পরিমাণ আরো কমে যাবে, যা চাকরি বাজারে মন্দার স্বাভাবিক লক্ষণ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন