জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি বিবেচনায় নেয়ার আহ্বান আইএমএফের

বণিক বার্তা ডেস্ক

কভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাবের আগে বিশ্বজুড়ে যে কয়েকটি বিষয় আলোচনার কেন্দ্রে ছিল, তার মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন অন্যতম। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে অনেক আগে থেকেই সতর্ক করে এলেও বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীরা তাতে কর্ণপাত করেননি। জলবায়ুর যেকোনো পরিবর্তনের যে আর্থিক ঝুঁকি রয়েছে, তা যেন তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই এড়িয়ে গেছেন। বিনিয়োগকারীদের এমন আচরণ মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। বরং কোম্পানিগুলোর উচিত হলো, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তারা কী পরিমাণ ঝুঁকিতে রয়েছে, তা নিরূপণ প্রকাশ করা। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এমনটাই মনে করছে। খবর ব্লুমবার্গ।

বৈশ্বিক তাপমাত্রা যত বাড়বে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকটতাও তত বাড়বে। জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রতিক্রিয়ায় খরা, বন্যা, দাবানল ঘূর্ণিঝড়প্রবণ অঞ্চলে সম্পদ থাকা কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আইএমএফের গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্টের সর্বশেষ চ্যাপ্টারে একথা বলা হয়েছে। শুক্রবার এটি প্রকাশ করা হয়েছে। আইএমএফ বলেছে, জলবায়ুগত দুর্যোগের কারণে ২০৫০ সাল থেকে প্রতি বছর সম্পদের মূল্য বাবদ লাখ কোটি ডলার করে হারাতে হতে পারে বিনিয়োগকারীদের।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় জলবায়ুগত দুর্যোগের কারণে সার্বিক লোকসানের পরিমাণ বেড়েছে। আইএমএফ তাদের প্রতিবেদনে ৬৮টি উন্নত উন্নয়নশীল দেশের মূলধনি বাজারে গত ৫০ বছরের গতিধারা পর্যবেক্ষণ করেছে। সংস্থাটি জলবায়ু পরিবর্তনগত ঝুঁকির পাশাপাশি আরেকটি ঝুঁকির কথা উল্লেখ করেছে প্রতিবেদনে। সেটি হলো রূপান্তরজনিত ঝুঁকি। বিভিন্ন দেশের সরকার বর্তমানে ধীরে ধীরে কার্বননিরপেক্ষ অর্থনীতিতে রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। রূপান্তরের কিছু অর্থনৈতিক ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করছে আইএমএফ।

প্রাক-শিল্পায়ন সময়কাল থেকে এখন পর্যন্ত বৈশ্বিক তাপমাত্রা দশমিক ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। বর্তমানে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা যা, তাতে চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ তাপমাত্রা ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে বলে ধারণা করছে জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক জাতিসংঘের ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল। তাপমাত্রা পরিমাণ বাড়ার ফলে অনিবার্য কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হবে বিশ্বকে। এসব দুর্যোগের মধ্যে রয়েছে খরা, সমুদ্রসীমার উচ্চতা বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি। এমনকি বিশ্বের কিছু অঞ্চলের অবস্থা এমন হবে যে সেখানে মানুষ বসবাস করতে পারবে না।

১৯৮০-এর দশকের পর থেকেই বিশ্বে চরম প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা বেড়েছে। আইএমএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২০ বছরে গড়ে প্রতি বছর ধরনের ২০০টির মাতো ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্যোগের কারণে ক্ষয়ক্ষতিও বেড়েছে। ১৯৮০-এর দশকে যেখানে প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বৈশ্বিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল হাজার ২০০ কোটি ডলার, বর্তমানে তা বেড়ে ১২ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত ৩০ বছরে প্রতি বছর গড়ে বৈশ্বিক জিডিপির দশমিক শতাংশ হারাতে হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে।

অবস্থায় আইএমএফ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মাথায় রেখে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। আর বিষয়টি এড়িয়ে গেলে কোনো বিনিয়োগ টেকসই হবে না বলেও সতর্ক করেছে সংস্থাটি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন