লাতিন আমেরিকা

ক্ষতিগ্রস্ত এয়ারলাইনের ঘুরে দাঁড়াতে লেগে যাবে দীর্ঘ সময়

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত লাতিন আমেরিকার বিমান পরিবহন সংস্থাগুলোকে ঘুরে দাঁড়াতে পাড়ি দিতে হবে দীর্ঘ পথ। একই সঙ্গে সময়ে প্রয়োজন হবে সরকারি সহায়তার। দি ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইএটিএ) মতে, অঞ্চলটির এয়ারলাইনগুলোর অভ্যন্তরীণ আঞ্চলিক ফ্লাইট ভাইরাস সংক্রমণ-পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে যেতে অন্তত তিন বছর সময় লাগবে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে পূর্ণমাত্রায় দীর্ঘ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। খবর এএফপি।

আইএটিএর ভাইস প্রেসিডেন্ট পিটার সের্ডা বলেন, বর্তমান সংকটকালীন অবস্থায় সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন। স্বল্পমেয়াদে অবস্থা থেকে মুক্তি সম্ভব নয়। পাশাপাশি অবস্থার পরিবর্তনে অনেক কাজ করতে হবে। মূলত লাতিন আমেরিকার বিমান পরিবহন সংস্থার ভয়াবহ সংকটের বিষয়টি সামনে আসে গত সপ্তাহে, যখন অঞ্চলটির দুটি বৃহত্তম এয়ারলাইন চিলি-ব্রাজিলের লাটাম কলম্বিয়ার আভিয়ানকা যুক্তরাষ্ট্রে দেউলিয়াত্ব থেকে সুরক্ষার আবেদন করে। লাতিন আমেরিকার দেশগুলোয় চলমান লকডাউনের কারণে ফ্লাইট কার্যক্রমের অভাবনীয় পতন হয়েছে। দিনে প্রায় দুই লাখ ফ্লাইটের মধ্যে বর্তমানে স্থগিত রয়েছে ৯৩ শতাংশ। এতে বিমান পরিবহন সংস্থাগুলোর আয়ে ক্ষতি হচ্ছে হাজার ৮০০ কোটি ডলার। সের্ডার মতে, ক্ষতির পরিমাণ সামনে বাড়বে বৈ কমবে না।

আইএটিএর কর্মকর্তা আরো জানান, বিমান পরিবহন শিল্পে নভেল করোনাভাইরাস যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, তা ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে হামলার পরবর্তী পরিস্থিতিকেও ছাড়িয়ে গেছে। অবস্থায় বহু এয়ারলাইন সম্ভবত আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। তাদেরকে তাদের ভালোর জন্যই কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হবে। লাতিন আমেরিকাজুড়ে প্রায় তিন মাসের লকডাউন চলাচলে আরোপিত বিধিনিষেধের কারণে এয়ারলাইনগুলোর কাছে এখন আর কোনো অর্থ অবশিষ্ট নেই। ফলে সাহায্যের জন্য সরকারগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে এগিয়ে আসতে হবে।

তবে সাহায্যের মানে এই নয় যে বিমান পরিবহন সংস্থাগুলো সরাসরি আর্থিক উদ্ধার চাইছে। বরং সহায়তা হিসেবে এয়ারলাইনগুলো সরকারের কাছ থেকে করমুক্তি ঋণ নিশ্চয়তার আশা করছে। বৈশ্বিকভাবে বিমান পরিবহন খাতে এখন পর্যন্ত সরকারি সহায়তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৩০০ কোটি ডলারে। এর মধ্যে দক্ষিণ আমেরিকায় সহায়তা দেয়া হচ্ছে মাত্র ৩০ কোটি ডলার।

এভিয়েশন শিল্পের মেক্সিকোর এক বিশ্লেষক ফার্নান্দো গোমেজ সুয়ারেজ বলেন, বর্তমানে লাতিন আমেরিকার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ফলে বিমানবন্দর এয়ারলাইনের পাশাপাশি সরকারগুলোকেও ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সরকারগুলোও পরিস্থিতির সম্ভাব্য বৃহত্তর প্রভাব নিয়ে অবগত। অর্থনীতির জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এরই মধ্যে লাটাম এয়ারলাইনকে সংকট থেকে রক্ষার জন্য পরিকল্পনা করছে চিলি সরকার। বিশেষ করে লাটামের প্রত্যক্ষ ১০ হাজার চাকরির পাশাপাশি এয়ারলাইনটির ওপর পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল দুই লাখ মানুষের জীবিকার সুরক্ষা নিশ্চিতে পথ খোঁজা হচ্ছে। তবে আশঙ্কার কথা, এরই মধ্যে লাটাম তার মোট ৪২ হাজার কর্মীর মধ্যে হাজার ৮০০ জনকে ছাঁটাই করেছে।

এদিকে ব্রাজিলে বৃহত্তম তিন এয়ারলাইন গোল, আজুল লাটামের জন্য ১১০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। একটি উন্নয়ন ব্যাংকের নেতৃত্বে দেশটির বেসরকারি ব্যাংকগুলো ঋণ দিচ্ছে। উল্লেখ্য, লাতিন আমেরিকার মধ্যে ব্রাজিলে প্রতি বছর অভ্যন্তরীণভাবে সর্বোচ্চ নয় কোটি যাত্রী বিমানে ভ্রমণ করে। অন্যদিকে অঞ্চলটির মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদেশী পর্যটক আসে মেক্সিকোয়। দেশটির পর্যটনমন্ত্রী মিগুয়েল তোরুকো জানিয়েছেন, সবকিছুর পরও তারা এয়ারলাইনের শক্তিশালী অবস্থা ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর। মেক্সিকোর বৃহত্তম বিমান পরিবহন সংস্থা অ্যারোমেক্সিকো আজ থেকে পুনরায় কিছু রুটে ফ্লাইট চালু করবে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন