চলতি বছরের সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে গতকাল রোববার। প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই বেড়েছে।
গতকাল সকাল ১০টায় ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ফল প্রকাশ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বেলা সোয়া ১১টায় সচিবালয় থেকে ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ৯টি সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখ ৪০ হাজার ২৮ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫২৩ জন। এ হিসাবে সব বোর্ডে গড় পাসের হার ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। গত বছর এ হার ছিল ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ। সে হিসাবে গতবারের তুলনায় এ বছর পাসের হার বেড়েছে শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশীয় পয়েন্ট।
পাসের হার বৃদ্ধির হার খুব সামান্য হলেও গতবারের তুলনায় এ বছর জিপিএ-৫-এর সংখ্যা বেড়েছে অনেক বেশি। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সব বোর্ড মিলিয়ে এবার সর্বমোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন পরীক্ষার্থী। গতবার ১ লাখ ৫ হাজার ৫৯৪ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিল। সে হিসাবে গতবারের চেয়ে এবার ৩০ হাজার ৩০৪ জন বেশি পরীক্ষার্থী ফলের সর্বোচ্চ এ সূচক অর্জন করেছে।
দেশে মোট শিক্ষা বোর্ড রয়েছে ১১টি। এর মধ্যে ৯টি সাধারণ, একটি মাদ্রাসা ও একটি কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। বোর্ডভিত্তিক এ বিভাজনে পাসের হারে সবচেয়ে এগিয়ে সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ড। সাধারণ বোর্ডের শিক্ষার্থীদের গড় পাসের হার ৮৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মাদ্রাসা বোর্ডে পাসের হার ৮২ দশমিক ৫১ শতাংশ। আর সবার পেছনে থাকা কারিগরি বোর্ডে পাসের হার ৭২ দশমিক ৭০ শতাংশ।
আবার নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে পাসের হারের দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড। এই বোর্ডে পাসের হার ৯০ দশমিক ৩৭ শতাংশ। পাসের হারে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে সিলেট বোর্ড। এই বোর্ডে পাসের হার ৭৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এছাড়া অন্য বোর্ডগুলোর মধ্যে ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮২ দশমিক ৩৪ শতাংশ, কুমিল্লায় ৮৫ দশমিক ২২ শতাংশ, যশোরে ৮৭ দশমিক ৩?১ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৮৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ, বরিশালে ৭৯ দশমিক ৭০ শতাংশ, দিনাজপুরে ৮২ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বোর্ডে পাসের হার ৮০ দশমিক ১৩ শতাংশ।
এদিকে ফলাফলের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, লিঙ্গভিত্তিক হিসাবে পাসের হারে ছেলেদের তুলনায় এগিয়ে মেয়েরা। এ বছর সব বোর্ড মিলিয়ে মেয়েদের পাসের হার ৮৪ দশমিক ১০ শতাংশ। অন্যদিকে ছেলেদের পাসের হার ৮১ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এছাড়া এবার শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩ হাজার ২৩টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৫৮৩টি। সে হিসাবে এ বছর শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। অন্যদিকে কোনো শিক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। এ বছর ১০৪টি প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ১০৭।
ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, কভিড-১৯-এর কারণে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে শিক্ষার্থীদের ফল মোবাইল ফোনে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ফল উদযাপন না করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট থেকেও শিক্ষার্থীরা ফলাফল জানতে পারবে। কভিড-১৯ পরিস্থিতির মধ্যে ওএমআর সংগ্রহের ক্ষেত্রে ডাক বিভাগ বড় ভূমিকা পালন করেছে, আমরা তাদের বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই। এছাড়া বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনেক বেশি সহযোগিতা করেছে, তাদের ধন্যবাদ জানাই। সব মিলিয়ে শিক্ষা পরিবারের সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় এমন পরিস্থিতির মধ্যেও ফল প্রকাশ সম্ভব হয়েছে।