গত দুই-তিন মাসের অচলাবস্থায় অর্থনীতির বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। টানা লকডাউনে বিপর্যস্ত হয়েছে জনজীবনও। ব্যবসায়ীরা যেমন অর্থনৈতিক অচলাবস্থা থেকে দ্রুত পরিত্রাণ চাইছেন, তেমনি মানুষজনও ঘরবন্দির দশা থেকে মুক্তি পেতে উদগ্রীব হয়ে আছে। এ অবস্থায় দেশে দেশে শিথিল হতে শুরু করেছে লকডাউনের বিধিনিষেধ।
তবে সরকার লিকডাউন শিথিল করলে যে ভাইরাসও সে অনুযায়ী তার তাণ্ডব কমাবে তেমন তো আর নয়। এ কারণেই বিধিনিষেধ শিথিলের সঙ্গে সঙ্গে মহামারীর দ্বিতীয় দফার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় আলোচনার সবচেয়ে প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের সংক্রমণকে দূরে রাখার সক্ষমতা নিয়ে। বিজ্ঞানীদের মধ্যে এ বিষয়ে মতভেদ বা বিতর্কও কম হচ্ছে না।
নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রথম দিকে মতবাদ ছড়িয়ে পড়ল যে শিশুদের ওপর এ ভাইরাসের ক্ষতিকর প্রভাব তুলনামূলক কম। বিজ্ঞানীরা ধারণা করলেন, বিদ্যালয়ের মতো জায়গাগুলোয় নিরীহ ভাইরাসের নিয়মিত সংক্রমণের কারণে শিশুদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বেড়ে যায়, যা নভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
আর এখন সব বয়সী মানুষের রোগ প্রতিরোধক্ষমতার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সামনে এসেছে, তা হলো ‘ক্রস ইমিউনিটি’। এদিকে টুইটারে সাম্প্রতিক একটি পোস্টে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ফ্রাঁসোয়া বলোক্স অবাক করার মতো একটি বিষয় তুলে ধরেছেন। সেটি হলো বেশ কয়েকটি দেশে লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিল করা হলেও সেখানে তাত্ক্ষণিকভাবে করোনার প্রকোপ পুনরায় শুরু হয়নি। এক্ষেত্রে তিনি ঋতুর প্রভাব ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিশেষ ভূমিকা দেখছেন। পাশাপাশি তিনি আরেকটি তত্ত্ব উল্লেখ করেছেন। আর তা হলো কিছু কিছু মানুষের মধ্যে আগে থেকেই নভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা রয়েছে। আর তা তৈরি হয়েছে আগে সাধারণ কোনো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার মাধ্যমে।
বলোক্স বলেন, কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, স্বামী বা স্ত্রী নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও তার কাছ থেকে সঙ্গী বা সঙ্গিনী সংক্রমিত হননি। এক্ষেত্রে যে বিষয়টি সবচেয়ে ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারে তা হলো ক্রস ইমিউনিটি।
চলতি মাসের শুরুর দিকে সাময়িকী ‘সেল’-এ একটি মার্কিন গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ মানুষের মধ্যে কভিড-১৯ প্রতিরোধী ক্ষমতা তৈরি হতে পারে, যারা কখনো আগে রোগটিতে আক্রান্ত হননি। এক্ষেত্রে গবেষকরা রক্তের সুরক্ষা প্রদানকারী কণিকা টি লিম্ফোসাইটসের ভূমিকার কথা বলেন। কোনো ব্যক্তি যদি আগে ঠাণ্ডাজনিত কোনো সাধারণ করোনাভাইরাসে ভুগে থাকেন, তাহলে তার রক্তে থাকা টি লিম্ফোসাইট সক্রিয় হয়ে যায় এবং এ গোত্রের অন্যান্য ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে থাকে।
এমনটা হলে তো ভালোই। কিন্তু ওই গবেষণাপত্রের লেখক লা ওলা ইনস্টিটিউট অব ইমিউনোলজির গবেষক আলেসান্দ্রো সেত্তে ও শেন ক্রত্তি সতর্ক করে বলেছেন, ‘উপরোক্ত গবেষণা থেকে যদি ধরে নিই যে নভেল করোনাভাইরাসের শক্তি কমে যাচ্ছে, তাহলে আমরা ভুল করব। একটা বিষয় পরিষ্কার যে কিছু মানুষের মধ্যে রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি বেশি থাকে। যেখানে একই রোগের কারণে কিছু মানুষের অবস্থা খারাপ হয়ে যেতে পারে, এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে, সেখানে কিছু মানুষের মধ্যে খুব সামান্যই উপসর্গ দেখা যেতে পারে। আমরা গবেষণায় এটাই দেখাতে চেয়েছি যে আগে থেকে বিদ্যমান রোগ প্রতিরোধক্ষমতা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এটি অনুমানের মধ্যেই সীমিত রয়েছে। এটি প্রমাণের জন্য আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।’