কভিড-১৯-এর কারণে ৬৫ দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল থেকে আবার চালু হয়েছে দেশের দুই পুঁজিবাজার। চালুর প্রথম দিনেই সূচকে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি ছিল ওষুধ খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ার কেনায়। অন্যদিকে করোনায় নেতিবাচক প্রভাবের শঙ্কায় দর কমেছে অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ারের।
গতকাল সূচকের উত্থানে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, গ্রামীণফোন ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ারের।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল লেনদেন শুরুর পর থেকেই ঊর্ধ্বমুখী ছিল সূচক। মাঝে কিছুটা নিম্নমুখী হলেও দিনশেষে ১ দশমিক ৩০ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার ৬০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স। নির্বাচিত কোম্পানির সূচক ডিএসই ৩০ এদিন ২ দশমিক ৬০ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৩৬৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়ে ৯৫২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
গতকাল ডিএসইতে মোট ৩২৩টি কোম্পানির ৪ কোটি ৩৯ লাখ ৫৬ হাজার ৯৭৬টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে, টাকার অংকে যার পরিমাণ ১৪৩ কোটি ২৯ লাখ। লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ৬০টির, কমেছে ৬৮টির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯৫টি কোম্পানির শেয়ার।
খাতভিত্তিক লেনদেন চিত্রে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইতে ৫৮ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তি ওষুধ খাত শীর্ষে অবস্থান করছে। ৯ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্যাংক খাত। ৮ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় স্থানে রয়েছে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত। আর ৭ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে চতুর্থ স্থানে ছিল টেলিযোগাযোগ খাত।
ডিএসইতে গতকাল লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ কোম্পানিগুলো হচ্ছে—স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, গ্রামীণফোন, ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো
লিমিটেড, সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালস, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস, রেকিট বেনকিজার ও মুন্নু সিরামিকস।
দর বাড়ার শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হচ্ছে—বেক্সিমকো লিমিটেড, প্রাইম ফিন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, এসিআই লিমিটেড, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, এসিআই ফর্মুলেশন, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, শাহাজিবাজার পাওয়ার ও একমি ল্যাবরেটরিজ।
অন্যদিকে গতকাল দর কমার শীর্ষে ছিল এবি ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, প্রিমিয়ার ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, আজিজ পাইপস, যমুনা ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকের শেয়ার।
দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল সার্বিক সূচক সিএসসিএক্স ১ দশমিক ৩০ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার ৯৫২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১০৯টি সিকিউরিটিজের মধ্যে দাম বেড়েছে ৩১টির, কমেছে ২৪টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৪টির শেয়ার দর।
গতকালের পুঁজিবাজার সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট ও ইবিএল সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ছায়েদুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, লেনদেন চালুর পর প্রথম দিনের আচরণে আমি বাজার নিয়ে আশাবাদী। আমানতের সুদহার নির্ধারণ করে দেয়ার কারণে মানুষ বেশি রিটার্নের আশায় পুঁজিবাজারে আসবে। তাছাড়া পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। এতে বিনিয়োগকারীরা বাজার নিয়ে আশাবাদী হয়েছেন। সর্বোপরি বিএসইসির নতুন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। যার প্রতিফলন দেখা গেল গতকালের বাজারে।
গতকাল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ওষুধ খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ার কেনার প্রবণতা বেশি ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, কভিড-১৯-এর কারণে ওষুধ খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এ প্রত্যাশায় বিনিয়োগকারীরা এ খাতের শেয়ারে ঝুঁকছেন। অন্যদিকে কভিড-১৯-এর কারণে ব্যাংক খাতের মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে এমন শঙ্কায় গতকাল অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে। ব্যাংকঋণের দুই মাসের সুদ বাবদ ১৬ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকা স্থগিত করার কারণে ব্যাংকের আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা ছিল। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এক্ষেত্রে ২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়ার পাশাপাশি বাকি অর্থ গ্রাহককে ১২ মাসে পরিশোধের সুযোগ দেয়ার কারণে ব্যাংকের আয়ে সেভাবে প্রভাব পড়বে না। ফলে সামনের দিনগুলোতে ব্যাংক খাতের শেয়ারেও ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
