আমনের দ্রুত ফলনশীল হাইব্রিড ধান জনপ্রিয় করতে চায় কৃষি মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে আগামী মৌসুমেই কৃষকের কাছে মাঠ পর্যায়ে ধানটির জনপ্রিয়তা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হতে পারে। বিএডিসি হাইব্রিড ধান-২ (উইন ২০৭) নামে পরিচিত ধানের এ জাতটি আবাদ করা হলে কৃষক অন্যান্য জাতের তুলনায় এক মাস আগেই ফসল ঘরে তুলতে পারবেন।
দেশে উৎপাদিত মোট চালে আমন ধানের অবদান প্রায় ৪০ শতাংশ। তবে এসব ধানের সিংহভাগই পরিপক্ব হতে সময় নেয় প্রায় ১৪০-১৪৫ দিন। সেক্ষেত্রে আমন আবাদে স্বল্পমেয়াদি বিএডিসি হাইব্রিড ধান-২ (উইন ২০৭) জাতটি কৃষকদের বেশ সুবিধা দিতে পারবে। কারণ এ জাতের ধান অন্যান্য জাতের তুলনায় এক মাস আগেই পরিপক্ব হবে। ফলে আমন কাটার পর তেলজাতীয় ফসল আবাদ করতে পারবেন কৃষকরা। পাশাপাশি এ জাতের ধান আবাদে সেচ ও সারের প্রয়োজনও হবে তুলনামূলক কম।
জানা গেছে, উইনঅল হাইটেক সিড কোম্পানি উদ্ভাবিত জাতটি নিয়ে চার বছরের বেশি সময় ধরে মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা চালিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। বপনের ১০৫-১০৭ দিনের মধ্যে পরিপক্ব হতে পারে। অন্যদিকে আমন মৌসুমের অন্যান্য ধান পরিপক্ব হতে সময় নেয় ১৪০-১৪৫ দিন। অর্থাৎ আমন মৌসুমের অন্যান্য জাত উইন ২০৭-এর তুলনায় ১ মাসেরও বেশি সময় নেয়। পাশাপাশি নতুন জাতটিতে ফলন পাওয়া যাচ্ছে হেক্টরপ্রতি সাত থেকে সাড়ে সাত টন। ফলে কৃষকরা প্রতি বিঘায় আমন আবাদ করে ঘরে ধান তুলতে পারবেন ২৫-২৮ মণ। অন্যদিকে সনাতনী জাতগুলো এখনো বিঘাপ্রতি ফলন দিচ্ছে ২০ মণেরও কম। বিভিন্ন সময়ে মাঠ পর্যায়ে প্রদর্শনীর সময় কৃষকরা জাতটির প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন। তারা বলছেন, এ জাত হাতে পেলে তারা আমনে আরো একটি শস্য আবাদ করতে পারবেন।
কিন্তু ব্যাপকভাবে মাঠ পর্যায়ে না আসায় এটি এখনো কৃষকের কাছে পৌঁছতে পারেনি। তবে আগামী আমন মৌসুমে জাতটি কৃষক পর্যায়ে পৌঁছতে কৃষি মন্ত্রণালয় চেষ্টা করতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বণিক বার্তাকে বলেন, দেশে চাল সরবরাহের প্রায় বড় একটি অংশের জোগান দিচ্ছে আমন ধান। বোরোর চাপ কমাতে আমনের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকারের নানান ভর্তুকি কার্যক্রম রয়েছে। সে লক্ষ্যেই এ জাতটির উন্নয়ন ও কৃষক পর্যায়ে সরবরাহের জন্য বিএডিসিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। স্বল্পমেয়াদে জাতটি ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ করা গেলে ধান কাটার পর সরিষা বা স্বল্পমেয়াদি তেলজাতীয় শস্য আবাদ করা সম্ভব হবে। এতে কৃষকের ঘরে একটি বাড়তি শস্য তোলা সম্ভব হবে। এজন্য আগামী আমন মৌসুমে সরকারের ভর্তুকি কার্যক্রমের মাধ্যমে এ জাতটি কৃষকের কাছে পৌঁছানো গেলে কৃষকরা ব্যাপকভাবে লাভবান হবেন। সরকারি জাত হিসেবে কৃষকের কাছে এ জাতটি জনপ্রিয় করতে পারলে আমনের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে।
জানা গেছে, বোরো মৌসুমে বেশ ভালো মানের বেশ কয়েকটি হাইব্রিড জাত রয়েছে। কিন্তু আমন মৌসুমে ভালো মানের উচ্চফলনশীল ও স্বল্পমেয়াদি ভালো কোনো হাইব্রিড জাত নেই। যে কয়েকটি জাত রয়েছে, সেখানে সব ভালো বৈশিষ্ট্য একসঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে প্রথাগতভাবে উফশী আমনেই বেশি সুবিধাজনক মনে করেন কৃষকরা। এতে বেশি পরিমাণে জমিকে আবাদের আওতায় আনতে হবে। প্রতি বছর গড়ে ৫৫-৫৬ লাখ হেক্টর জমিতে ১ কোটি ৫০ লাখ টন চালের উৎপাদন করা হচ্ছে। সেখানে হেক্টরপ্রতি গড় ফলন এখনো তিন টনের নিচে। ফলে উচ্চফলনশীল জাত প্রচলন করা গেলে জমি সাশ্রয় করে অন্যান্য শস্যের আবাদ বাড়ানো সম্ভব হবে।
বিএডিসি হাইব্রিড ধান ২ (উইন ২০৭) জাতটির ফলন দ্বিগুণের বেশি। পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধী হওয়ায় পোকামাকড়ের আক্রমণও হয় কম। এর চালের আকৃতি মাঝারি ধরনের চিকন। খেতে সুস্বাদু এবং ভাতও বেশ ঝরঝরে। পাশাপাশি উৎপাদনে খরচও কম হয়। কারণ এতে সেচের ও সারের প্রয়োজন হয় খুবই কম। ফলে আমন মৌসুমে জাতটি আবাদ করা গেলে সার্বিকভাবে সরকারের বিদ্যুৎ খরচ ও সারের ভর্তুকি ব্যয় সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।
জানা গেছে, জাতটি এরই মধ্যে সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ট্রায়াল দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোয় জাতটি ট্রায়ালের সময় ভালো ফলন দিয়েছে। রংপুরে মহানগরীর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের খটখটিয়া এলাকায় সম্প্রতি প্রদর্শনী প্লটে উৎপাদনকৃত আমন মৌসুমের আগাম জাতের এ ধানটির উৎপাদন ও ফলন প্রক্রিয়া দেখানো হয়। সেখানেই দেখা গিয়েছে, ১০৭ দিনের মধ্যেই এ জাতের ধান ঘরে তুলতে পারছেন কৃষকরা।
