রফতানির অর্থ আসছে না, বাড়ছে আমদানি দায় পরিশোধের তাগাদা

বাণিজ্যিক ব্যাংকের চাপ ও ঝুঁকি প্রশমনে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে উদ্যোগ নিতে হবে

করোনায় বৈদেশিক বাণিজ্যের অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে রফতানি আয় আমদানিতে। গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানি দায় পরিশোধের সময় দ্বিগুণ করে দিয়েছে। আবার রফতানি আয় প্রত্যাবাসনের সময়ও বাড়ানো হয়েছে। এর সুযোগ নিচ্ছেন দেশের অনেক আমদানিকারক। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ব্যাংকের টাকা দিচ্ছে না তারা। যদিও ব্যবসায়ীদের পক্ষে আমদানি দায় ঠিকই পরিশোধ করতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। এতে ব্যাংকের চাপ বাড়ছে। পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোয় ডলারের সংকট তীব্র হয়েছে। অফশোর ব্যাংকিংয়েও তহবিল পাওয়া যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। রফতানি আয় কমে যাওয়ায় ব্যাংক খাতে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে। মুহূর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে উচিত ডলার সরবরাহ ঠিক রাখা। পাশাপাশি নিত্যপণ্য শিল্পের কাঁচামাল আমদানি যেন ব্যাহত না হয়, সেদিকেও লক্ষ রাখা। কারণ এলসি জটিলতায় যদি সঠিক সময় পণ্য কাঁচামাল না আসে, তাহলে উৎপাদন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে। এতে একদিকে পণ্যের সরবারহ কমে যাবে, অন্যদিকে বেড়ে যাবে নিত্যপণ্যের দাম।

রফতানি আয়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় বেশি হওয়ায় বাংলাদেশে প্রতি বছরই বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতি হচ্ছে। ঘাটতির পরিমাণ বেড়েই চলেছে। গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৭৮০ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮২২ কোটি ডলার। রফতানি আয় এরই মধ্যে কমতে শুরু করেছে। করোনার প্রভাবে রফতানি আয় আরো কমে যেতে পারে। আমদানি ব্যয়ও কমেছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দ্রুত আমদানি ব্যয় বাড়বে। কিন্তু দ্রুত রফতানি আয় বাড়ানোর সুযোগ কম। চলমান নভেল করোনাভাইরাসের মধ্যে রফতানি বলা চলে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। মার্চ থেকে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এতে আমাদের রফতানি রেমিট্যান্সে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ইউরোপে করোনার বড় ধরনের ধাক্কায় রফতানি আদেশের বড় অংশ বাতিল হয়ে যায়। এতে গত তিন মাসে যে পরিমাণ রফতানি আয় হয়েছে, আগামী কয়েক মাসে এর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কারণ ফেব্রুয়ারির রফতানি আয় মার্চ এপ্রিলে এসেছে। কিন্তু গত এপ্রিলে বলা চলে পোশাক কারখানাগুলো পুরোপুরিই বন্ধ ছিল। এর প্রভাব পড়বে আগামী কয়েক মাসে। এতে রফতানি আয় সামনে ব্যাপকভাবে কমে যাবে।

সামনে আমাদের জন্য কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। বৈশ্বিক মন্দায় অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যাওয়ায় আপনাআপনিই বিভিন্ন দেশের ভোগব্যয় কমে যাবে। এতে আমাদের রফতানি আয়ে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সেই সঙ্গে রেমিট্যান্সপ্রবাহও কমে যাবে। সব মিলিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার আন্তঃপ্রবাহ কমে যাবে। সরবরাহ কমে যাওয়ার পাশাপাশি চাহিদা কমাতে না পারলে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। এরই মধ্যে ব্যাংকগুলো ঠিকমতো আমদানি দায় পরিশোধ করতে পারছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাকিতে পণ্য আমদানির অনুমোদন না দিলে এবং রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ না করলে বর্তমান অবস্থা ভয়ারহ রূপ নিত। কারণেই বৈদেশিক মুদ্রার দায় কমানোর দিকেই নজর দিতে হবে নীতিনির্ধারকদের। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়াতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন