চেকমেট গ্র্যান্ডমাস্টার

মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে মাহাথিরের যুগ কী শেষ?

বণিক বার্তা ডেস্ক

আমরা কী মালয়েশিয়ার রাজনীতির নাটের গুরু মাহাথির মোহাম্মদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের শেষ দেখলাম? খুব সম্ভবত তা-ই। এটা কী অনেকটা যেমন বলে কর্মের খেলা? খুব সম্ভবত তা-ই। তবে পিপিবিএম দলটি যখন তার প্রতিষ্ঠাতাকেই পদচ্যুত করে, যিনি ফের ক্ষমতার লাগাম ধরার জন্য অপ্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে এগোচ্ছিলেন সেই দলটি কী বিলুপ্তির পথে এগোচ্ছে না?

বর্তমানে পিপিবিএমের সুপ্রিম কাউন্সিলে যারা মাহাথিরের সদস্যপদ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা অনেকেই হয়তো তখন জন্মই নেয়নি যখন মাহাথির রাজনীতির জগতে পা রাখেন। সহজ কথায় হাঁটুর বয়সী ওই রাজনৈতিক সতীর্থদের চেয়ে অনেক রাজনৈতিক উত্থান-পতন, নাটকীয়তা দেখেছেন মাহাথির। রকম রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে আগে এক হাতের তুড়িতেই উড়িয়ে দিতেন মালয়েশিয়ার রাজনীতির মহাতারকা। এর আগেও দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে মাহাথিরের। টাঙ্কু আব্দুর রহমান যখন মাহাথিরকে উমনো (ইউএমএনও) থেকে বের করে দিয়েছিলেন, তখন রাজনীতির গ্ল্যাডিয়েটর অবিশ্বাস্য শক্তি নিয়ে ফিরে এসেছিলেন। চৌকস বুদ্ধিমত্তা অদ্বিতীয় রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অধিকারী ব্যক্তি ছিলেন মুসা হিতাম, গফর বাবা, আনোয়ার ইব্রাহিম, আবদুল্লাহ আহমদ বাদায়ি নাজিব রাজাকের মতো ব্যক্তিদের রাজনীতির গুরু। শেষ পর্যন্ত তিনি নয়া খেলুড়ে মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের মধ্যেই ওয়াটারলুর যুদ্ধমাঠ দেখলেন? খুব সম্ভবত তা-!

মাহাথির যদি মুহিউদ্দিন বা পিপিবিএমকে খতম করে দিতে চাইতেন, তাহলে উমনোর ঘরে ফেরার আমন্ত্রণ বিবেচনা করতেন। এটা কী অসম্ভব কোনো ঘটনা? যে রাজনৈতিক দলের হয়ে দুই দশকের বেশি দেশকে শাসন করেছেন, সেখানে ফিরে যাওয়া কী রাজনৈতিকভাবে এতই অসাধ্য কোনো কাজ ছিল? রাজনীতি বিষয়টিই তো অসম্ভবকে সম্ভব করার খেলা। আলোচনার টেবিলে সবই উন্মুক্ত এবং মালয়েশিয়ার মতো দেশে সব ধরনের রাজনৈতিক জোটবদ্ধতাই সম্ভবপর। এক সময়ের সম্ভাব্য উত্তরসূরি থেকে কঠিন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে গত নির্বাচনের আগে জোট গঠন করে মাহাথির তা- ফের প্রমাণ করেছিলেন রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই। সাবেক শত্রুর সঙ্গে মিত্রতার মাধ্যমে একসময়ের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহচর শিষ্য নাজিব রাজাককে হটিয়ে দেন মাহাথির। নব্বই বছর বয়সে বিশ্বের সবচেয়ে বয়সী সরকারপ্রধান হিসেবে ক্ষমতায় আসেন।

তবে কে ভাবতে পেরেছিল যে যারা মাহাথিরকে ফের ক্ষমতার পাদবিন্দুতে নিয়ে এসেছিল, তারাই আবার পেছনের দরজা দিয়ে তার বিপক্ষেই ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছিল? কে ভেবেছিল নীল চোখের এক তরুণ রাজনীতিবিদকে যিনি গড়েপিঠে মানুষ করেছেন, সে- অভাবনীয় বিশ্বাসঘাতকতা করবে কুখ্যাত শেরাটন চালটি চালবে?

কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্য। ভবিষ্যতে হয়তো বিশ্বাসঘাতকদের জন্যও কর্ম অপেক্ষা করছে। তবে আপাতদৃষ্টিতে এখন তারা বিজয় উদযাপন করতেই পারে। কারণ তারা রাজনীতির গ্র্যান্ডমাস্টারের কিস্তিমাত করে দিয়েছে। যখন সে সময় আসবে মানুষ তাদের হয়তো বিশ্বাসঘাতকতার কথাই স্মরণ করিয়ে দেবে। কারণ তারা এমন একজনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়েছে তাদের গড়ে ওঠা রাজনৈতিক পরিচয় লাভের ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির অবদান সর্বাধিক।

মালয়েশিয়ার সাধারণ মানুষের মধ্যে নীতিকথাটি প্রচলিত রয়েছে: কোনো ব্যক্তি যদি তার বিবেক খুইয়ে ফেলে, তাহলে সে পুরো বিশ্ব জিতলেও কী যায় বা আসে?

ফ্রি মালয়েশিয়ান টুডে অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন