অবকাঠামোগত সক্ষমতা বৃদ্ধি

৭০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে টেনসেন্ট

বণিক বার্তা ডেস্ক

চীনভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্ট টেনসেন্ট হোল্ডিংস ক্লাউড কম্পিউটিং, আর্টিফিগিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) এবং সাইবার সিকিউরিটির পাশাপাশি নতুন প্রযুক্তিগত অবকাঠামো সক্ষমতা বৃদ্ধিতে হাজার কোটি (৭০ বিলিয়ন) ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে ধাপে ধাপে বিপুল অংকের অর্থ বিনিয়োগ করবে প্রতিষ্ঠানটি। খবর রয়টার্স।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন। বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে গত মাসে প্রযুক্তিনির্ভর অবকাঠামোগত হালনাগাদের আহ্বান জানানো হয়েছিল। বেইজিংয়ের এমন ঘোষণার এক মাসের মাথায় অবকাঠামোগত সক্ষমতা বাড়াতে বড় অংকের বিনিয়োগের ঘোষণা দিল টেনসেন্ট। বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে স্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন অবকাঠামোর পাশাপাশি বিজনেস সফটওয়্যার এবং ক্লাউড সেবায় জোরদারের আহ্বান জানানো হয়েছিল।

বিষয়ে টেনসেন্ট হোল্ডিংসের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ডাউসন টং বলেন, ক্লাউড কম্পিউটিং, এআই এবং সাইবার সিকিউরিটির পাশাপাশি ব্লকচেইন প্রযুক্তি, সার্ভার, বিগ ডাটা সেন্টার, সুপার কম্পিউটার সেন্টার, ইন্টারনেট অব থিংস অপারেটিং সিস্টেম, ফাইভজি নেটওয়ার্ক এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে মোট বিনিয়োগের বড় একটি অংশ ব্যয় করা হবে।

টেনসেন্ট উইচ্যাট মেসেজিং অ্যাপ এবং একগুচ্ছ জনপ্রিয় গেমের কারণে বিশ্বজুড়ে পরিচিত। ভোক্তা পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবার প্রবৃদ্ধি অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। যে কারণে প্রতিষ্ঠানটি এখন ব্যবসায় বৈচিত্র্য আনতে বিভিন্ন সেবা খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণে কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে একযোগে বড় অংকের বিনিয়োগের ঘোষণা দিল প্রতিষ্ঠানটি।

২০১৮ সালে টেনসেন্ট নিয়ন্ত্রিত মেসেজিং নেটওয়ার্ক উইচ্যাটের মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী শতকোটির মাইলফলক ছাড়ায়। সেবাটিতে একজন ব্যবহারকারী একাধিক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। উইচ্যাটের বেশির ভাগ ব্যবহারকারী চীনভিত্তিক। স্থানীয়ভাবে অনেকেই এটিকে উইক্সিন বলেন। সম্প্রতি ইউরোপ, আমেরিকা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উইচ্যাটের ব্যবহারকারী আগের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়েছে। ইন্টারনেটের ওপর কড়াকড়ি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করায় চীনে হোয়াটসঅ্যাপ ফেসবুক মেসেঞ্জারের মতো সেবা ব্যবহার সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। এর সুবিধা পাচ্ছে উইচ্যাট।

বিশ্বজুড়ে সহজে বার্তা ভয়েস মেসেজ পাঠানোর সুযোগ থাকায় চীনের গণ্ডি পেরিয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে উইচ্যাট। সম্প্রতি অভিযোগ ওঠে ব্যবহারকারীদের বিনিময় করা বার্তাগুলো প্রাপকের কাছে পৌঁছানোর আগেই গোপনে পড়ে থাকে মেসেজিং অ্যাপটি। বিদেশীদের সঙ্গে চীনের নাগরিকরা কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন তা জানতেই উদ্যোগ বলে অভিযোগ উঠেছিল। পাঠানো বার্তায় কোনো সন্দেহমূলক আচরণের সন্ধান পেলে সেগুলো নোটিফিকেশন ছাড়াই ব্লক করা হয়। ফলে প্রাপক ওই বার্তা দেখতে পারেন না। স্বয়ংক্রিয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আলাদা তথ্যভাণ্ডার তৈরি করেছে উইচ্যাট কর্তৃপক্ষ বলে অভিযোগ ওঠে। অবশ্য কর্তৃপক্ষ ধরনের অভিযোগ নাকচ করে দেয়।

চীনের মেসেজিং গেমিং খাতের পাশাপাশি মোবাইল আর্থিক লেনদেন বাজারের ৩৮ দশমিক শতাংশ উইচ্যাট পের দখলে রয়েছে। দেশটির মোবাইল আর্থিক লেনদেন বাজারের ৫৩ দশমিক শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে রয়েছে আলি পে। চীনে উইচ্যাট পের ভ্যালুয়েশন এখন অনেক বেশি। তবে কুইক পাস যদি চীনের মোবাইল আর্থিক লেনদেন বাজারের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ নিজেদের দখলে নিতে সক্ষম হয়, তাহলে উইচ্যাট আলি পের ভ্যালুয়েশন অনেক কমে যাবে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনে কুইক পাসের জন্য বিষয়টা এত সহজ হবে না। ১৬ কোটি নিবন্ধিত ব্যবহারকারীর মধ্যে কোটি ৮০ লাখ প্রতিদিন কুইক পাস ব্যবহার করেন। যেখানে ৩২ কোটি লোক প্রতিদিন আলি পে ব্যবহার করে থাকেন।

জানা যায়, উইচ্যাট পে চীনের সবচেয়ে জনপ্রিয় মেসেঞ্জার অ্যাপ্লিকেশন উইচ্যাটের সঙ্গে ইন্টিগ্রেট করা। চীনের একজন উইচ্যাট ব্যবহারকারী দিনে গড়ে ঘণ্টা উইচ্যাট ব্যবহার করে থাকেন। উইচ্যাট পে ব্যবহার করা খুবই সহজ। যে কারণে উইচ্যাট থেকে গ্রাহক বাগিয়ে নেয়া কুইক পাস কিংবা আলি পের জন্য বেশ কঠিন হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের মোবাইল অর্থ লেনদেন বাজার এখন অনেকটা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বাজারটিতে চাহিদা জোগান প্রায় সমান সমান হয়ে গিয়েছে। বাজারটিতে আলি পে উইচ্যাট পে রাজত্ব করবে। এখন ভোক্তাদের আকৃষ্ট করতে হলে নতুন উন্নত মানে ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস দিতে হবে যেমনবীমা, ঋণ, সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি। অনেকে ধারণা করছেন যে চীনের মোবাইল অর্থ লেনদেন খাতে কুইকপাস যদি টিকে যায়, তাহলে সেটা সম্ভব হবে সরকারি হস্তক্ষেপের কারণে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন