দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা সাধারণ ছুটি শেষ হয়েছে গতকাল। কভিড-১৯-এর বিস্তার রোধে গৃহীত ছুটি যেদিন শেষ হলো সেদিনই হলো দ্বিতীয়বারের মতো সর্বোচ্চ মৃত্যু। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে ২৮ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। একদিনে সর্বোচ্চ ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল ২৪ মে। আর গতকাল নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৭৬৪ জন।
গতকাল ৫০টি ল্যাবে সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৯৮৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়, তাতে ১ হাজার ৭৬৪ জনের ফল পজিটিভ এসেছে। দেশে এখন করোনা রোগীর সংখ্যা ৪৪ হাজার ৬০৮। এর মধ্যে ৯ হাজার ৩৭৫ জন এখন সুস্থ।
এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে প্রাণ হারিয়েছেন ৬১০ জন, যার মধ্যে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে সংক্রমণ ও মৃত্যু—দুটোরই হার বেশি। গতকালও এর ব্যতিক্রম হয়নি। মৃত ব্যক্তিদের ২৫ জনই পুরুষ। মৃতদের মধ্যে ২৬ জন হাসপাতালে ও দুজন নিজ নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন।
সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সী মানুষের। গতকাল যে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে তাদের নয়জনই এই বয়সের। এর বাইরে ত্রিশোর্ধ্ব চারজন, চল্লিশোর্ধ্ব চারজন, ষাটোর্ধ্ব ছয়জন, সত্তরোর্ধ্ব তিনজন এবং ৮১ থেকে ৯০ বছর বয়সী দুজনের মৃত্যু হয়েছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্য বলছে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ৪২ শতাংশেরই বয়স ৬০ বা তার চেয়ে বেশি।
মৃতের তালিকায় বরাবরের মতো শীর্ষে রয়েছে ঢাকা বিভাগ। ২৮ জনের ১৮ জনই ঢাকা বিভাগের। বাকিদের মধ্যে সাতজন চট্টগ্রাম বিভাগের, দুজন রংপুর বিভাগের এবং একজন সিলেট বিভাগের বাসিন্দা।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন সংবাদ বুলেটিনে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরেন সংস্থাটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। এতে তিনি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান। বিশেষ গুরুত্ব দেন মাস্ক পরার বিষয়টিতে। তিনি বলেন, মাস্ক না পরলে শাস্তির মুখেও পড়তে হতে পারে।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ১২তম সপ্তাহ পার হলো গতকাল। সর্বোচ্চ মৃত্যু হলেও আইইডিসিআরের বিশ্লেষণ কিছুটা আশারও ইঙ্গিত দিয়েছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর থেকে প্রথমবারের মতো কমেছে সাপ্তাহিক সংক্রমণ। গত সপ্তাহে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ১০ হাজার ৯৯৮ জন। এর আগের সপ্তাহে ১১ হাজার ৩৪২ জন করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয়েছিল।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া প্রতিদিনকার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত ৬ এপ্রিল দেশে মোট করোনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১০০-এ। ওই দিনের ব্রিফিংয়ে ১৪টি পিসিআর ল্যাবে ৪৬৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে ৩৫ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ পাওয়ার তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সে হিসাবে নমুনা প্রদানকারীদের মধ্যে আক্রান্তের হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
মোট করোনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে যায় গত ১২ এপ্রিল। সেদিন ১৭টি পিসিআর ল্যাবে ১ হাজার ৩৪০ জনের শরীরের নমুনা পরীক্ষায় ১৩৯ জনের পজিটিভ পাওয়া যায়। অর্থাৎ আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
এরপর ১৪ এপ্রিল ১৭টি ল্যাবে ১ হাজার ৯০৫ জনের পরীক্ষায় ২০৯ জন পজিটিভ হওয়ার তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আক্রান্তের হার ছিল ১০ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়ে যায় ১৬ এপ্রিল। ওইদিন ১৭টি ল্যাবে ২ হাজার ১৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩৪১ জন নতুন রোগী শনাক্তের তথ্য প্রকাশ করা হয়। আক্রান্তের হার ছিল ১৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
মোট নিশ্চিত করোনা রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়িয়ে যায় ২৩ এপ্রিল। সেদিনের ব্রিফিংয়ে ১৯টি ল্যাবে ৩ হাজার ৪১৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪১৪ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ শনাক্তের তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অর্থাৎ আক্রান্তের হার ছিল ১২ দশমিক ১২ শতাংশ।