করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধ থাকা ভর্তি কার্যক্রম আগামীকাল থেকে শুরু করতে পারবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। তবে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে দেশের ২৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সতর্ক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কমিশন।
ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক ড. মো. ফখরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সতর্ক করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কয়েকটির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ক্যাম্পাস পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। আবার কোনোটির বিরুদ্ধে রয়েছে অননুমোদিত প্রোগ্রাম চালানোর অভিযোগ। কয়েকটির বিরুদ্ধে রয়েছে শিক্ষার্থী ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা। এছাড়া এর আগে কয়েকটি বন্ধ করে দিয়েছিল সরকার, কিন্তু আদালতের আদেশে ফিরে এসেছে। তবে এখনো শিক্ষা কার্যক্রম চালুর অনুমতি পায়নি। মালিকানা দ্বন্দ্বের অভিযোগও রয়েছে কয়েকটির বিরুদ্ধে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে ভিসি, প্রো-ভিসি ও কোষাধ্যক্ষ না থাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যাপারেও সতর্ক করা হয়েছে। কারণ বাংলাদেশে এখনো বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা বৈধ নয়। সনদে স্বাক্ষরের দায়িত্ব ভিসির। তাই যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নেই, সেগুলোতে সনদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বর্তমানে ১০৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৯৭টির কার্যক্রম চালু আছে।
চালু থাকা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭টির ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তিতে সতর্ক করা হয়েছে। এগুলোর নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় অননুমোদিত ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি ও নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। আর শরীয়তপুরের জেডএইচ সিকদার বিশ্ববিদ্যালয়, পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্সেস অ্যান্ড টেকনোলজি ও বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজিতে অননুমোদিত প্রোগ্রাম চালাচ্ছে বলে সতর্ক করেছে ইউজিসি। এছাড়া ইবাইস ইউনিভার্সিটিতে রয়েছে মালিকানা
নিয়ে দ্বন্দ্ব। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত কোনো ঠিকানা নেই। মালিকানা দ্বন্দ্ব এবং আদালতে মামলা আছে আরো চারটিতে। এগুলো হলো ইবাইস ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। তবে আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি। এছাড়াও আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি পরিচালিত হচ্ছে।
শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দুটি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমতি পায়নি। এ দুটি বিশ্ববিদ্যালয় হলো দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা ও কুইন্স ইউনিভার্সিটি। হাইকোর্টের নির্দেশে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয় অননুমোদিত প্রোগ্রাম চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে ইউজিসি।
অনলাইনে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে ইউজিসির দেয়া নির্দেশনা অনুসরণ করছে না অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। সম্প্রতি ইউজিসির দেয়া এক কার্যালয় স্মারকপত্রে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আগামী জুনে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা যাবে। যদিও ইউজিসির সেই সিদ্ধান্ত অমান্য করে এখনই শিক্ষার্থী ভর্তি করাচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
গত এপ্রিলের শুরুর দিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া, মূল্যায়ন ও শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম অনতিবিলম্বে বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয় ইউজিসি। কিন্তু আর্থিক ক্ষতি হওয়ার কারণ দেখিয়ে করোনা পরিস্থিতিতে অনলাইনে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিতে অনুরোধ জানিয়ে আসছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
এরপর ৭ মে ইউজিসির দেয়া এক কার্যালয় স্মারকপত্রে এ বিষয়ে বলা হয়, ‘কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত প্রোগ্রামগুলোর অনুমোদনপত্রে বর্ণিত শর্তাদি এবং কমিশন কর্তৃক প্রণীত ভর্তিসংক্রান্ত নীতিমালার আলোকে আগামী জুনে অনলাইনে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা যাবে। তবে কোনোক্রমেই প্রোগ্রাম অনুমোদনপত্রের কোনো শর্ত লঙ্ঘন করা যাবে না।’
যদিও মে মাসেই ইউজিসির ওই নির্দেশনার পর পরই শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরু করে দেয়ার অভিযোগ বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। সার্বিক বিষয়ে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক ড. মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ইউজিসির কার্যালয় স্মারকের মাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নির্দেশনা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থী ভর্তি বিষয়ে বলা হয়েছে, জুন মাসের দিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তা করতে পারবে। আর নতুন সেমিস্টারের ক্লাস শুরু করবে জুলাইয়ে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সুবিধার্থে ইউজিসি বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চিত্র তুলে ধরে।